প্রথম বিভাগ ক্রিকেট
বিসিবির নির্বাচনে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে ঢাকার যেকোনো পর্যায়ের লিগে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় বিদ্রোহী ক্লাবগুলো। ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগে ২০ ক্লাবের মধ্যে আটটি ক্লাব আছে বিদ্রোহীদের তালিকায়। ফলে আগামীকাল থেকে ‘১২’ ক্লাব নিয়ে মাঠে গড়াবে ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ। যদিও বিদ্রোহী ক্লাবগুলোকে রেখেই টুর্নামেন্টের প্রথম দুই রাউন্ডের সূচি প্রকাশ করেছে আয়োজক ক্রিকেট কমিটি ফর ঢাকা মেট্রোপলিস (সিসিডিএম)। প্রথম রাউন্ডে বিদ্রোহী ‘৮’ ক্লাব অংশ না নিলে সেক্ষেত্রে পরবর্তী রাউন্ডগুলোর সূচি ও ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে জেগেছে শঙ্কা। পাশাপাশি প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলা ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা। ইতোমধ্যে বিসিবি সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে, আট দল না খেলার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে কী হবে বিকল্প ব্যবস্থা। তবে সেই বিকল্প ব্যবস্থা কী হতে পারে সেটা নিয়ে চূড়ান্ত কিছু এখনো জানায়নি বিসিবি।
নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় থাকা ক্রিকেটাররা আজ দুপুরে সমবেত হবেন বিসিবি কার্যালয়ের সামনে। ২০ দলের প্রথম বিভাগ লিগের দাবিতে আন্দোলনে নামবেন তারা। এর আগে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে চা চক্র শেষে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানান, লিগে অংশ না নেওয়া ক্লাবগুলোর ক্রিকেটারদের জন্য থাকবে বিকল্প ব্যবস্থা। তবে সেই বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে এখনো অবগত নন প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলা ক্রিকেটাররা। এমনকি অভিযোগ আছে ওই চা চক্রে প্রথম বিভাগে খেলা ক্রিকেটারদের কথা বলার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয়নি। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত একাধিক ক্রিকেটার আমার দেশকে বলেন, ‘আমরা বোর্ডের বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে পুরোপুরি কোনো ধারণা পাইনি। আমরা সেটা জানতে চাই। এছাড়া এই বছর যদি আট দলের ক্রিকেটারদের জন্য কোনো ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়, তাহলে পরের মৌসুমে দলগুলোর অফিসিয়ালরা তাদের কীভাবে গ্রহণ করবে সেটাও বড় প্রশ্ন। সেসব উত্তর না পেলে, আমরা তুমুল অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকব।’
বিসিবির বেশ কয়েকটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, প্রথম বিভাগ লিগে সবগুলো দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে মাঝপথেই বন্ধ হতে পারে লিগ। এই সিদ্ধান্ত একরকম চূড়ান্তই করে রেখেছে বিসিবি। এখন অপেক্ষা শুধু লিগ মাঠে গড়ানোর পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার। আগামী ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের প্রথম রাউন্ডের পরই আসতে পারে এই ঘোষণা। বিসিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক আমার দেশকে বলেন, ‘বিসিবি সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছে। আমরা ক্লাবগুলোর সঙ্গে সবশেষ একটা চেষ্টা চালাচ্ছি। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে করপোরেট লিগ বা অন্য উপায়ে ক্রিকেটারদের খেলার ব্যবস্থা করব।’ ক্লাব ক্রিকেটে পুরোপুরিভাবে মাঠে নামানো সম্ভব না হলে কীভাবে বিকল্প লিগ খেলা হবে এবং ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক কেমন হতে পারে সে বিষয়েও ধারণা দেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করে লিগ আয়োজনের চেষ্টা করা হবে। এসব লিগের জন্য ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। যাতে সবাই এই লিগে অংশ নিতে পারে।’ এছাড়া বিসিবির অধীনে অন্যান্য টুর্নামেন্ট আয়োজনের ইঙ্গিতও দিয়ে রাখেন এই পরিচালক।
বিসিবির সহসভাপতি ফারুক আহমেদও জানান, ক্রিকেটারদের জন্য লিগ না হলে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। তবে কবে নাগাদ এই ঘোষণা আসবে তা তিনি জানাননি। আমার দেশকে তিনি বলেন, ‘সভাপতি এখন দেশের বাইরে আছেন। তাকে ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না। তিনি দেশে ফিরলে বিকল্প একটা সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে এর আগে লিগ মাঠে গড়ানোর অপেক্ষায় আছি আমরা। লিগ মাঠে গড়ানোর পরই আমরা সিদ্ধান্ত নেব, কীভাবে কী হবে।’ আরেক পরিচালক ও সিসিডিএমের সহসভাপতি ফায়াজুর রহমান মিতু আমার দেশকে বলেন, ‘এই লিগের সঙ্গে ক্রিকেটারদের আর্থিক ব্যাপার জড়িত। লিগ মাঠে গড়াক, এটাই আমাদের চাওয়া। সেই ব্যাপারটার দিকেই আমরা খেয়াল রাখছি। বিকল্প ব্যবস্থা বা অন্য কিছু সম্পর্কে আসলে বিস্তারিত বলা যাবে লিগ শুরুর পর।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিসিবি নিশ্চয়তা দিলেও ভরসা রাখতে পারছেন না ক্রিকেটাররা। মূলত বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো ধারণা না থাকায় ভরসা করতে নারাজ তারা। ক্রিকেটারদের দাবি, ২০ দল নিয়ে মাঠে গড়াক প্রথম বিভাগ লিগ। শেষ পর্যন্ত কী হয়Ñসেটাই দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেটাররা।
মাঠের ক্রিকেটে ব্যাট-বলের পারফরম্যান্সের চেয়ে মাঠের বাইরের বিষয় এবং জটিলতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ক্রিকেটাররা।
বিসিবির পরিচালক বনাম ক্লাব সংগঠকদের এই দ্বন্দ্ব, জটিলতা ও রেষারেষিতে পিষ্ট হচ্ছে ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ।