চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হন লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহর শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডার হাইসাম আলী তাবতাবায়ি। কিন্তু এ হামলা থেকেই এমনভাবে ইসরাইলের ব্যবহার করা আমেরিকার তৈরি বোমার প্রযুক্তি ইরানের হাতে পড়েছে, যা রীতিমতো নাটকীয়।
লেবাননের সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে ইরানের তেহরান টাইমসে গত ৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলায় ইসরাইলি বিমান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি জিবিইউ-৩৯ বোমা নিক্ষেপ করা হয়। নিক্ষিপ্ত বোমাগুলোর মধ্যে একটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় রয়ে যায়।
হামলার পরপরই হিজবুল্লাহর নিরাপত্তা ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে তার ছবি তোলে। পরে এর থেকে ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বিচ্ছিন্ন করে কিছু অংশ ইরানে পাঠায় হিজবুল্লাহ। ইরান এ বোমার প্রযুক্তি উদঘাটনে গবেষণা করছে।
এ ঘটনার পর ওয়াশিংটনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। লেবানন সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্র দাবি জানিয়েছে, তারা যেন অবিস্ফোরিত বোমা জব্দ করে ওয়াশিংটনে ফেরত পাঠায়। তবে এ বিষয়ে ইরান সরকার বা হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে নতুন করে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, চলতি বছরের জুনে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলায় বাংকার ধ্বংসকারী ১৩ টনের জিবিইউ-৫৭ বোমা ব্যবহার করেছিল আমেরিকা। সে সময়ও একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটেনি। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ওই বোমাটির প্রযুক্তি উদঘাটন করেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে তারা এর সফল রেপ্লিকা বোমাও তৈরি করেছে।
যদিও ইরান জিবিইউ-৫৭ বোমার সফল রেপ্লিকা তৈরি করেছে; কিন্তু এর ওজনের কারণে সব জায়গায় মোতায়েন করা সম্ভব হবে না। অপরদিকে জিবিইউ-৩৯-এর প্রতিটি বোমা এক টনেরও কম ওজনের। ফলে ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্পে বিশেষ করে মিসাইল তৈরির জন্য এটি আরো গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তেহরান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, বোমাটির নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের জন্য গাইডিং প্রযুক্তি ইরানের মিসাইলকে আরো উন্নত করতে পারে। ইরানের সামরিক প্রকৌশলীরা ইতোমধ্যেই জিবিইউ-৫৭-এর প্রযুক্তি ‘ফাতাহ’ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইলে সংযুক্ত করেছে, যা এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। একইসঙ্গে এরচেয়ে আরো উন্নত প্রযুক্তি দুই হাজার কিলোমিটার পাল্লার খুররম শহর-৪ মিসাইলের জন্য গবেষণা চলছে।
ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণই দেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। দেশটির কিছু কিছু সামরিক প্রযুক্তির অন্য দেশেও রেপ্লিকা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে ইরানের শাহেদ-১৩৬ ড্রোনের প্রযুক্তি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, এমনকি আমেরিকাও ব্যবহার করছে। এর মধ্যে তেহরান আমেরিকার লকহিড মার্টিন আরকিউ-১৭০ ড্রোনসহ বিভিন্ন সমরাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের প্রযুক্তি উদঘাটনে গবেষণা করছে। এ লক্ষ্যেই বিভিন্ন সময় জব্দ করা যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র ব্যবহার করছে ইরান।