মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত সংঘাতময় প্রেক্ষাপটে স্থায়ী স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সকল পক্ষের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিল কাতার। রোববার দোহা ফোরামের ২৩তম আসরে কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জাসিম আল থানি বলেন, সংঘাতে জড়িত রাষ্ট্র বহির্ভূত পক্ষগুলোকেও আলোচনার অন্তর্ভুক্ত না করলে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি সম্ভব নয়।
মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসন পরিচালিত এক সেশনে তিনি জানান, আফগানিস্তান হোক বা ফিলিস্তিন—মাঠে প্রভাবশালী পক্ষগুলোকে বাদ দিলে রাজনৈতিক সমাধান অর্জন করা সম্ভব নয়। তার ভাষায়, “যেসব অ-রাষ্ট্রীয় পক্ষ মাটিতে বাস্তব প্রভাব রাখে, তাদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া কোনো সমাধান সম্ভব নয়।”
শেখ মোহাম্মদ জানান, হামাসের সঙ্গে কাতারের যোগাযোগ শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে—২০১২ সালে দোহায় তাদের রাজনৈতিক অফিস খোলা হয় মূলত মার্কিন যোগাযোগ সহজ করতে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে। একইভাবে ২০১৩ সালে তালেবানের রাজনৈতিক অফিসও ওয়াশিংটনের অনুরোধে খোলা হয়, যখন আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা ও তালেবানের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল।
তিনি বলেন, আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার দীর্ঘ আলোচনাভিত্তিক অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে নিরপেক্ষ আলোচনার প্ল্যাটফর্ম ছাড়া কোনো টেকসই চুক্তি সম্ভব নয়। দোহায় হওয়া আলোচনার ধারাবাহিকতাই শেষ পর্যন্ত দোহা চুক্তি ও আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের পথ তৈরি করে।
গাজা সহায়তা নিয়ে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান
গাজার জন্য কাতারের মানবিক সহায়তা হামাসের হাতে চলে গেছে—এমন অভিযোগও তিনি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। তার দাবি, “আমাদের সব সহায়তা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় গাজার মানুষের কাছেই পৌঁছেছে, এবং যুক্তরাষ্ট্র এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত।” এমনকি ইসরাইল নিজেও এসব সহায়তা গাজায় প্রবেশে সহায়তা করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কিছু রাষ্ট্রের রাজনীতিক নিজের দেশের স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক স্বার্থে কাতারের ভূমিকা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছেন।
ইসরাইলের হামলা ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন’
দোহা ফোরামে ইসরাইলের সেপ্টেম্বরের হামলার কথাও উল্লেখ করেন কাতারি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মধ্যস্থতাকারীর ওপর হামলা নজিরবিহীন ও অনৈতিক।” এ ঘটনায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বলে জানান তিনি।
গাজার পুনর্নির্মাণের দায় ‘ধ্বংসকারী পক্ষের’
ইসরাইলের দুই বছরের সামরিক অভিযানে বিধ্বস্ত গাজার মানবিক সংকট নিয়ে তিনি বলেন, কাতার সহায়তায় থাকবে, তবে পুনর্গঠনের দায় নিতে হবে ধ্বংস ঘটানো পক্ষকেই।
জাতিসংঘের হিসাবে, গাজার ৯২ শতাংশ আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে এবং ৬০ মিলিয়ন টন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়েছে—যা সরাতে ও পুনর্নির্মাণে লাগতে পারে কয়েক দশক।
ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদের বিরোধিতা
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ফিলিস্তিনিদের জোর করে কোথাও পাঠানোর অধিকার কারো নেই। “তারা যেখানে থাকতে চায়, সেটাই তাদের অধিকার। তাদের যেন এমন একটি জাতি হিসেবে দেখা না হয় যাদের ইচ্ছেমতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরিয়ে দেওয়া যায়।”
এই বছরের দোহা ফোরামে ১৬২ দেশের ৫,০০০-এর বেশি প্রতিনিধি—রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা অংশ নেন, যেখানে সংঘাত সমাধান, মানবিক সংকট, বৈশ্বিক শাসন ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে আলোচনা হয়।
সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
এসআর