দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫০ ফিলিস্তিনি
দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫০ ফিলিস্তিনের আগমনকে কেন্দ্র করে রহস্যজনক এক ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে দেশটির সরকার। জোহানেসবার্গে অবতরণ করা চার্টার্ড বিমানে থাকা এসব যাত্রীদের বেশিরভাগই যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে এসেছেন। কিন্তু সঠিক ভ্রমণ নথি না থাকায় তাদের প্রায় ১২ ঘণ্টা টারম্যাকে আটকে রাখা হয়, যা মানবাধিকারকর্মীদের তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খতিয়ে দেখেছে— কে এই ফ্লাইটের আয়োজক এবং কীভাবে নাইরোবির মাধ্যমে তাদের দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সীমান্ত সংস্থা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের কাছে এমন কোনো বহির্গমন স্ট্যাম্প বা স্লিপ ছিল না যা সাধারণত ইসারাইলের কর্তৃপক্ষ গাজা ছেড়ে যাওয়া ব্যক্তিদের দিয়ে থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এটিকে রহস্যজনক ও সন্দেহজনক অভিযান হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের কার্যতই তাদের ভিটেমাটি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ফিলিস্তিনের দূতাবাস জানিয়েছে, ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছে একটি অনিবন্ধিত সংস্থা, যারা গাজার মানবিক সংকটকে কাজে লাগিয়ে পরিবারগুলোর কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছে।
নাম প্রকাশ না করে ইসরাইলের সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, আল-মাজদ নামের একটি সংস্থা গাজা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ১৫০ জন ফিলিস্তিনিকে পরিবহনের ব্যবস্থা করেছিল। তিনি বলেছেন, আল-মাজদ সংস্থাটি বাসগুলোকে পাহারা দিয়ে গাজা উপত্যকার একটি সভাস্থল থেকে কেরেম শালোম ক্রসিংয়ে নিয়ে এসেছিল। পরবর্তীতে তাদের ইসরাইলের র্যামন বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়, যেখানে তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
গিফট অফ দ্য গিভার্সের প্রতিষ্ঠাতা ইমতিয়াজ সুলিমান এই ঘটনার সঙ্গে ইসরাইল ফ্রন্ট অর্গানাইজেশন নামে পরিচিত ব্যক্তিদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, ২৮ অক্টোবর ১৭০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে নিয়ে অবতরণের পর এটি ছিল রহস্যজনক পরিস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছানো দ্বিতীয় বিমান। আর কর্তৃপক্ষ এই বিমান আগমনের কোনো পূর্ব ঘোষণা দেয়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছানোর পর ১৩০ জনকে মানবিক কারণে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাকিরা অন্য দেশে গেছেন বলে জানা গেছে। গিফট অফ দ্য গিভার্স নামের এনজিও অভিযোগ করেছে, যাত্রীরা জানতেন না তারা কোথায় যাচ্ছেনে এমনকি দুই দিনের যাত্রায় তারা কোনো খাবারও পাননি।
রামাফোসা বলেছেন, যদিও তাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই, তবুও তারা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষ, তাই করুণা, সহানুভূতির বশবর্তী হয়ে, আমাদেরকে অবশ্যই তাদের গ্রহণ করতে হবে এবং তারা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হতে হবে।
এই ঘটনাকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার একটি নতুন কৌশল হিসেবে দেখছে। ইতোমধ্যে দুই বছরের যুদ্ধে গাজায় ৬৯,০০০-এরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছানো এই ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি নীতির সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
সূত্র: এনবিসিনিউজ।