অথচ কাদেরকেও বক্তব্য লিখে দিতেন সেই রায়হান

আমার দেশ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ০৩: ৫০
রায়হান উদ্দিন ও আব্দুল কাদের

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন। ৩ আগস্ট দেওয়া পোস্টে তিনি বেশ কয়েকজনের বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন যে, ফ্যাসিবাদের আমলে তারা ছাত্রলীগের অপরাধের সহযোগী ছিল, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশিই করেছে, অথচ ৫ আগস্টের পর তারা শিবির করছে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম তাদের রক্ষা করছেন। আব্দুল কাদের তার পোস্টে যে কয়জনের নাম উল্লেখ করেছেন, তাদের একজন হলেন রায়হান উদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

তার সম্পর্কে কাদের বলেন, ‘আরেকজন আছেন এমন। এফ রহমান হলের ১৮-১৯ সেশনের রায়হান উদ্দিন। যে ছাত্রলীগের এক্টিভ কর্মী ছিলেন। মেধাবী হওয়ার দরুন হল ক্যান্ডিডেটের বক্তব্যগুলা যিনি নিজে লিখে দিতেন, সারাক্ষণ ক্যান্ডিডেটের আগেপিছে থাকতেন, কাউকে ভিড়তে দিতেন না। এফ রহমানের হলের কুখ্যাত ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজের একনিষ্ঠ অনুসারী এই রায়হান ৫ তারিখের পরে শিবিরের বড় নেতা হিসেবে হাজির হয়েছেন। আগের ফেসবুক আইডি বাদ দিয়ে এখন নতুন আইডি চালান। তবে আগের আইডি এবং তার কৃতকর্ম মুছে ফেলতে পারেন নাই। এখনো আছে।’

তার ওই পোস্টের প্রেক্ষিতে রায়হান উদ্দিন একটি পোস্ট দিয়েছেন ফেসবুকে। তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘আব্দুল কাদের নোংরামি করতে গিয়ে আমাকে নিয়ে কিছু মিথ্যা কথা লিখেছে। ছোটলোকদের মতো আমি কখনো ফেসবুকে এইসব নিয়ে লিখি না, এবং লেখার প্রয়োজনও মনে করি না। রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক বিষয়কে আমি মতাদর্শিকভাবেই ডিল করতে বিশ্বাসী। কিন্তু কিছু না লিখলে মনে হবে ছোটলোকদের নোংরামিই সত্য। যদিওবা এইসব নোংরামি সামনে আরও হবে। আমাকে নিয়েই কেন কাদের এইটা লিখলো, আমি জানি। কারণ কাদেরদের আমাকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করার সৎ সাহস নেই। কিছুদিন আগে থেকেই এইসব নোংরামি দেখেও চুপ ছিলাম।

কাদের লিখেছে: আমি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হল সভাপতি রিয়াজের বক্তব্য লিখে দিতাম। ছাত্রলীগের নেতাদের তোষামোদ করতাম আর ছাত্রলীগের নেতাদের আশেপাশে কাউকে ভিড়তে দিতাম না।

কাদেরের মিথ্যা নিয়ে আমার বক্তব্য:

১। ২০২২ সালের ১লা আগস্ট প্রোগ্রামে না যাওয়া, গেস্টরুমে না আসা ও মুজিবের বিরুদ্ধে বলায়, হল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজের নির্দেশনায় ছাত্রলীগ আমাকে সারারাত মানসিক নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দেয়। আমি এই ট্রমা অনেকদিন ভুলতে পারিনি। এখনো সেই রাতের কথা মনে উঠলে আঁতকে উঠি। আমরা যখন ‘শিবির’ ট্যাগ খেয়ে হল থেকে বিতাড়িত হই, তখন নয়া বিপ্লবী কাদেরের সহযোদ্ধারা ছাত্রলীগের পদবী ধারণ করে বসে ছিলেন।

২। রিয়াজ সভাপতি হওয়ার পর আমি যেহেতু মোটামুটি বক্তৃতা দিতে পারতাম, তাই আমার কাছে বক্তৃতা নিয়ে পরামর্শ চাইতো। আমি তাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি—এইটা অপরাধ কেমনে হইলো? আমি তো ডিবেটে বহুজনকে পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তাকে লিখে দিয়েছি—এইটা যদি প্রমাণ দেখাতে পারে, আমি জুতার মালা গলায় দিবো। আর লিখে দিলেও সেইটা অপরাধ কেমনে হইলো? আমি তো বহু লোককে ক্লাসেও পড়াইছি যারা ছাত্রলীগ করতো। এর আগেও ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে দুইবার হল থেকে সাময়িকভাবে বের করে দিয়েছিল।

৩। ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত আমি ফেসবুকে ছাত্রলীগের পোস্ট করেছি। আমার আগের একটা আইডি ছিল, যেটা এখনো আছে। সেখানে আমি পোস্ট করতাম—করতে হতো। নিয়মিত প্রোগ্রাম, মিছিল, গেস্টরুম করতে হয়েছে। করোনা পরবর্তী হলে উঠার পর আমি ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ও গেস্টরুমে যাওয়া থেকে বিরত থাকি। ফলে বেশ কবার সিঙ্গেল গেস্টরুম ও হল থেকে বের করে দেয়।

(ঐ আইডি আমার বেহাত হয়ে গেছে।)

৪। ডিবেটিং ক্লাবের কমিটিতে সভাপতি হওয়ার পথ সুগম করতে আমাকে অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিল ছাত্রলীগের পদ নিতে, কিন্তু আমি পদ নিই নাই। আমি নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতায় সভাপতি হয়েছি। এরপর ছাত্রলীগের পাণ্ডারা নানাভাবে আমাকে পদ থেকে বহিষ্কার করার চেষ্টা করে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কথা না শুনায় ডিবেটিং ক্লাবের সব কার্যক্রম থেকে একপ্রকার অবাঞ্ছিত করে দেয়। সেইসব এভিডেন্স এখনো আছে। আমার সেক্রেটারি মেহেদি সাক্ষী।

আমি গেস্টরুমে কেমন আচরণ করেছি, সেটা জুনিয়ররাই সাক্ষ্য দিবে। অনেককেই অনেক সময় বকা দিয়েছি—এইটা অস্বীকার করবো না। আমার জানামতে একদিন মুখ দিয়ে অশালীন শব্দ বের হয়েছিল, সেদিনই তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমি মাফ চেয়েছি। আর বাকি সময় কারো অধিকার হরণ করিনি। ২০২০ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম করতে হয়েছে—হলের সবাই বাধ্য হয়ে করেছে। ফেসবুকে পোস্টও করতে হয়েছে—সবাইকে করতে হয়েছে।

সর্বশেষ, কাদের ডাকসুর আগে এই নোংরা খেলায় মেতে উঠে আমাকে দমাতে পারবে ভেবে থাকলে ভুল করবে। কাদেরকে বলবো—ভিপি হতে চাইলে এইসব ছোটলোকি ছেড়ে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করার সৎ সাহস থাকতে হবে। কাদের যাদের প্রেসক্রিপশনে এইসব নোংরা খেলা করছে, তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করছি।

আর প্রিয় কাদের, অভ্যুত্থানের সময় তোমার অনেক বক্তব্য ও প্রেস রিলিজ আমার লেখা। তুমি যখন সাদিক ভাইকে একটা বক্তব্য রেডি করে দেওয়ার জন্য মেসেজ দিতে, তখন ভাই আমাকে তোমার মেসেজ ফরওয়ার্ড করে লিখে নিতে বলতেন। তো তোমার বক্তব্য লিখে দিয়েছি বলে কি তোমার ছোটলোকি ও নোংরামির দায় আমাকে নিতে হবে?’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত