Ad T1

দীর্ঘ ও তীব্র তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই এ বছর

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ২৬

কয়েক দিনের টানা তাপপ্রবাহের পর দুই দিন ধরে সারা দেশে বৃষ্টি হয়েছে। এতে জনজীবনে স্বস্তি ফিরলেও তিন দিন পর পুনরায় ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। মে মাসে সারা দেশে টানা তাপপ্রবাহেরও পূর্বাভাস রয়েছে। তবে গত বছরের মতো তীব্র তাপপ্রবাহের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক বলেন, সোমবার চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কয়েকটি জেলা বাদে সারা দেশে কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সর্বোচ্চ ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় সিলেটে এবং ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৮ মিলিমিটার। এতে গত কয়েক দিন ধরে গোপালগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ প্রশমিত হয়েছে। সারা দেশেও গরমের দাপট কমে স্বস্তি ফিরেছে। এর আগে ২১ এপ্রিল ঢাকায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবারও দেশের খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। তবে আগের দিনের তুলনায় কম বৃষ্টি হলেও সারা দেশে আকাশ মেঘলা ছিল।

আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, মার্চের শেষ সময় থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গেলেও গত বছরের তুলনায় তাপমাত্রা কম ছিল। ২৮ মার্চ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে ৪১ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই দিন ঢাকায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তিনি জানান, আরো তিন-চার দিন সারা দেশে কমবেশি বৃষ্টি হতে পারে। এতে আবহাওয়া স্থিতিশীল থাকবে। এরপর থেকে আবার তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে পারে। মে মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি আকারের টানা তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে গত বছরের মতো এবার দীর্ঘ ও তীব্র তাপপ্রবাহের কোনো সম্ভাবনা নেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে ১৯৭৬ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে তা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ায়। সে হিসাবে পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ব্যবধানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চলতি বছরও মার্চের শেষ দিক থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি আকারে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা অনেকের ওপর পরীক্ষাটি চালিয়েছেন- ‘একজন মানুষ ঠিক কতটা তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।’ তাদের ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৫৭ শতাংশ আর্দ্রতায় টানা ৯ ঘণ্টা রেখে দেখেছেন, বেশির ভাগই অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ টানা ৯ ঘণ্টা থাকতেই পারেননি, আর যারা বেশি সময় ছিল তাদের বমি, ডায়রিয়া, ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ে গত বছর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। ওই প্রতিবেদনে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ দশকের তাপমাত্রা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৫ ডিগ্রির বেশি। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলে, ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরাঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি। আর রাজধানী ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ওয়েদার বিশ্লেষণ বলছে, চলতি বছর তাপমাত্রা গতবারের মতো রেকর্ড ভাঙবে না। বৃষ্টিবাদলও হবে গত বছরের তুলনায় একটু বেশি।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের সিনিয়র প্রফেসর ড. এম. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‌বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এছাড়া বৈশ্বিক জলবায়ুর পাশাপাশি এখানে রাজধানীসহ শহর এলাকায় মানবসৃষ্ট বেশকিছু কারণে তাপমাত্রা ও গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে গাছপালা কেটে বন উজাড় করা, ইটভাটা, অত্যধিক কলকারখানা, আনফিট যানবাহন, বাসাবাড়ি ও অফিস-আদালতে এসির সংখ্যা বৃদ্ধি, উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে তীব্র বায়ুদূষণ, অবৈজ্ঞানিক উপায়ে বর্জ্য পোড়ানোসহ নানা কারণ পরিবেশকে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলছে। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও নাগরিকরা সচেতন হলে এ অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে।’

তিনি আরো বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ দূষণের ফলে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্তের পাশাপাশি মানুষের মানসিক অবস্থায়ও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত