গত শুক্র ও শনিবার দুই দিনের ব্যবধানে চার দফায় ভূমিকম্প-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয়। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আবাসিক হল। বিভিন্ন স্কুলে গতকাল রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। তবে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাসে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্দেশনা না দেওয়া হলেও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে তা সংস্কার বা ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।
সূত্রমতে, গত শুক্রবার সকালে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনে ফাঁটল, প্লাস্টার খসে পড়ায় নানা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্প আতঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে লাফ দিয়ে পড়ে অনেক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে শনিবার ফের তিন দফা ভূমিকম্পে আতঙ্ক বেড়ে যায়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ছয় ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে আবাসিক হলগুলো। একই সঙ্গে ঢাবির চিকিৎসা অনুষদের অধীনে চলমান এমবিবিএস পরীক্ষাগুলো আগামী ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
হঠাৎ আবাসিক হল বন্ধ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষার্থী ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হলগুলো বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় প্রভোস্ট কমিটির এক জরুরি ভার্চুয়াল সভায় হল বন্ধের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার রাতে ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে রাস্তায় রাত কাটান। তারা নিরাপদ আবাসিক ব্যবস্থা করার দাবিতে বিক্ষোভও করেন। একই ধরনের বিক্ষোভ হয় ইডেন কলেজেও।
সূত্রমতে, ভূমিকম্প-পরবর্তী পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ বা খোলা রাখার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক বিএম আব্দুল হান্নান জানান, এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা থাকলে মন্ত্রণালয় দেবে। তাদের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এ নিয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা নেই।
ইতোমধ্যে ভূমিকম্পের মতো অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, ভূমিকম্প যেকোনো সময় হতে পারে। তাই আতঙ্ক নয়, বরং সতর্কতা ও প্রস্তুতিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক নির্দেশনা ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল সব প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় উপপরিচালককে পাঠানো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক চিঠিতে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তথ্য আহ্বান করেছে। নির্ধারিত ছক অনুযায়ী আগামী ২৭ নভেম্বরের মধ্যে হার্ড ও সফট কপি নির্ধারিত ই-মেইলে পাঠাতে হবে।
ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আকস্মিকভাবে তা স্থগিত করেছে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। তবে একই দিন রাজধানীর মনিপুর স্কুলসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে ওই পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মো. জিয়াউল কবির দুলু আমার দেশকে বলেন, বার্ষিক পরীক্ষা ঠুনকো যুক্তি দেখিয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া স্থগিত করা সঠিক হয়নি। ঢাকা শহরের সব শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভীত ছিল। শুধু আইডিয়াল বা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের জন্য পরীক্ষা স্থগিত করা সরকারি সিদ্ধান্ত বরখেলাপ এবং সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্যের ধৃষ্টতার শামিল। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। পরে বিকালে বৈঠকে আজ সোমবার থেকে ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় অনলাইন ক্লাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সূত্রমতে, বেসরকারি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবনে ভূমিকম্পের ফলে ফাটল দেখা গেছে এরকম বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক সৈয়দ মানসুর হাশিমের পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে তেমন কোনো ত্রুটির প্রমাণ মেলেনি। তবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।