প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে হত্যা করা হয় প্রবাসী যুবক সিরাজুল ইসলাম। হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামি।
সিরাজুল নেশাসক্ত হওয়ায় তার মায়ের কাছ থেকে দেড়লাখ টাকায় তাকে কিনে নেয় আসামিরা। পরে তাকে পরিকল্পিত হত্যার করে রাস্তার ওপর লাশ ফেলে রেখে যায় আসামিরা।
বৃহস্পতিবার রাতে সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ একরামুল হোসাইন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ৫ আসামির মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নিহত সিরাজুল ইসলাম (২৯) শাহজাদপুর উপজেলার পূর্ব চরকৈজুরী গ্রামের মৃত শাহাদৎ মণ্ডলের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় ছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফিরেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন শাহজাদপুর উপজেলার পূর্ব চর কৈজুরী গ্রামে মৃত আলহাজ ওয়াজেদ মন্ডলের ছেলে আল আমীন মন্ডল (৩৮), সানোয়ার মন্ডলের ছেলে সেলিম মন্ডল (৩২), শহিদ আলী মন্ডলের ছেলে আমিরুল ইসলাম (৩৩), মৃত ইয়াছিন প্রামাণিকের ছেলে ওমর ফারুক (৩৮), মৃত আজগর প্রামাণিকের ছেলে ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল গফুর প্রামাণিক (৫৫)।
গ্রেপ্তারকৃতরা ডিবি পুলিশকে জানায়, পূর্ব চর কৈজুরী গ্রামের মুসা মন্ডল-গফুর প্রামাণিক গোষ্ঠী এবং ইউপি চেয়ারম্যান খোকন মাস্টার গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতার জেরে ধরে মারামারি হয়। এ ঘটনায় মুসা মন্ডল ও গফুর প্রামাণিক গোষ্ঠীর লোকজনকে আসামি করে ২০২১ সালে একটি হত্যা মামলা হয়। পরে ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় মামলাটি আপস হয়।
আপসের ৫ লক্ষ টাকা জোগাড় করে খোকন চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেয়। পরে বাকি টাকা না দেয়ার জন্য এবং সেই হত্যা মামলায় বাদীপক্ষের লোকজনদের ফাঁসাতে আসামীরা প্রবাসী সিরাজুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
প্রবাসী সিরাজুল ইসলাম মাদকাসক্ত হওয়ায় তার মা অতিষ্ঠ ছিল। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা সিরাজুলের মায়ের কাছে যায় এবং তাকে মেরে ফেলার কথা তাকে জানায়। আসামিরা সিরাজুলকে হত্যার জন্য অন্যান্য আসামির কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নেয়। সেখান থেকে দেড় লক্ষ টাকা সিরাজুলের মাকে দিয়ে তাকে কিনে নেয়। গত ২৮ অক্টোবর রাতে সিরাজুলকে অন্য এক আসামির বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে সিরাজুলকে পূর্ব চর কৈজুরী গ্রামের মোহাম্মদ আলীর বাড়ির পাশে রাস্তার ওপর নিয়ে যায়। তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে আসামিরা বাড়ি চলে যায়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার শাহজাদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
গত ৩ নভেম্বর স্থানীয় ইউপি সদস্য ওমর ফারুকসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে তাদের আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আসামি আল আমিন মন্ডল, সেলিম মন্ডল ও আমিরুল ইসলাম হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।