নোয়াখালীর মাইজদী হাউজিং এলাকার ই.এন.টি হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভুল অপারেশনে রিংকি আক্তার (২২) নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে অভিযোগে মামলা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যায় একলাশপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে নিহতের লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এই ঘটনায় নিহতের স্বজনরা সুধারাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করেছে।
শনিবার দুপুরে রিংকির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালটিতে ভিড় করেন স্বজন ও স্থানীয় লোকজন। এসময় হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোঃ মজিবুল হকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান।
নিহত রিংকি আক্তার বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের পশ্চিম একলাশপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ বাবুলের মেয়ে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার পৌনে তিনটার সময় অন্য হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক ও তাদের পক্ষের একটি গ্রুপ ঘটনাস্থলে এসে অভিযুক্ত চিকিৎসকের পক্ষ নেন। এ সময় নিহতের স্বজনদের সাথে তাদের বাকবিতন্ডা ও মারামারি ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন আহত হয়েছে। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধদের ধাওয়ায় অভিযুক্ত চিকিৎসকের পক্ষের লোকজন ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর হাসপাতালের মালিক ডা. মজিবুল হক পলাতক রয়েছেন।
নিহতের বড় ভাই মো. শাকিল জানান, কয়েকদিন আগে রিংকির গলার সমস্যার জন্য ডাক্তার দেখালে জানা যায় রিংকির টনসিল ও নাকের পলিপাস রয়েছে, তবে এটি প্রাথমিক সমস্যা। পরে মাইজদীর ই.এন.টি হাসপাতালে ডা. মজিবুল হকের কাছে দেখালে, তিনি দু’জায়গায় ছোট অপারেশন করার কথা জানান।
২৫ নভেম্বর দুপুরে রিংকিকে হাসপাতালে নেয়া হলে বিকেল ৫টার দিকে তার অপারেশন করা হয়। পরদিন দ্রুত রিলিজ দেয়া হয়। বাড়িতে নেয়ার পর থেকেই রিংকির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ডাক্তারকে ফোন করা হলে তিনি স্বাভাবিক হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
শনিবার সকালে রিংকির গলা দিয়ে অনবরত রক্ত বের হতে থাকে। এ সময় তাকে দ্রুত ডাক্তার মজিবুল হকের হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে ভর্তির কিছুসময় পর জানানো হয় রিংকি আর নেই। এরপরই চিকিৎসক মজিবুল হক ও হাসপাতালের কর্মচারীরা পালিয়ে যান। শাকিলের অভিযোগ একই সঙ্গে (দুটি অপারেশন) নাকের পলিপাস ও গলার টনসিল অপারেশন করার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। শাকিল এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য যে সকল নিয়মাবলি ও শর্ত থাকে তার কোনোটিই এখানে নেই। এটি ছোট একটি বাসা, কোনোভাবেই হাসপাতালের ক্রাইটেরিয়াতে পড়ে না। অভিযুক্ত চিকিৎসক ডাক্তার মজিবুল হকের ব্যবহার ও চিকিৎসা কোনোটিই ভালো নয়। এই হাসপাতালে অতীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। তিনি স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্তদের সহযোগিতায় এসব অপকর্ম ধামাচাপা দিয়ে দেন।
এ ঘটনায় চিকিৎসক ও হাসপাতালের মালিক ডা. মজিবুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতাল গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় সুধারাম মডেল থানার (ওসি) অফিসার ইনচার্জ মো. কামরুল ইসলাম রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় আমার দেশকে জানান, নিহতের লাশ নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে
ময়নাতদন্ত শেষে রোববার সন্ধ্যায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় নিয়তের স্বজনরা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে। একজন চিকিৎসকও মারামারির একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ঘটনায় নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডাক্তার মরিয়ম সিমি রোববার সন্ধ্যা ৭টার সময় আমার দেশকে জানান, অপারেশনের পর রোগী বাড়িতে গেছে সেখানে হয়তো কমপ্লিকেশন হয়েছে। এ কারণে ব্লিডিং হতে পারে। শনিবার বন্ধের কারণে আমরা আন অফিসিয়ালি টিম পাঠিয়েছি। রোববার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি উভয়ের সাথে কথা বলে প্রতিবেদন জমা দিবে। এটি ক্লিনিক-হাসপাতাল হওয়ার ক্রাইটেরিয়া আছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এটি আমাদের নলেজে ছিল না, আমরা এটা বন্ধ করে দিব।