হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

১৩ নভেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ম্যাসাকারের পরিকল্পনা আ.লীগের

এম হাসান, কুমিল্লা

দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে টার্গেট করে ম্যাসাকার করার পরিকল্পনা করছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। ১৩ নভেম্বর ঢাকায় ঘোষিত তথাকথিত লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা ও মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা, এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

সূত্র জানায়, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, আলেখারচর ও চান্দিনা এলাকাকে টার্গেট করা হয়েছে। এসব জায়গায় সমন্বিতভাবে মিছিল ও সংঘর্ষ সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিচার ও আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে দেশে আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক ঢোকাচ্ছে আওয়ামী লীগ-সম্পৃক্ত একটি সিন্ডিকেট। বিজিবির সাম্প্রতিক অভিযানে মাদকের সঙ্গে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে, যা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে নতুন উদ্বেগের কারণ।

বিজিবি অধিনায়কের ভাষ্য, এই প্রথম মাদকের সঙ্গে অস্ত্র ঢুকছে বাংলাদেশে। এটা খুবই চিন্তার একটি বিষয়। আমাদের গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দেশে অরাজকতা করার জন্যই মাদকের সঙ্গে অস্ত্র পাঠাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট।‌

সম্প্রতি ঝটিকা মিছিল থেকে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের পর উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত ছয় মাসে ১০ বারের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঝটিকা মিছিল করিয়েছে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিনহাদুল হাসান রাফি ও সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল পিয়াস। পুলিশ রাফিকে গ্রেপ্তার করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে ইসরাফিল পিয়াস। তার বাবা কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলা মোকাম ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাসুদ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে ঝটিকা মিছিল করার জন্য সহায়তা করছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

কুমিল্লার দাউদকান্দি, চান্দিনা, বুড়িচং, আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রামÑএ ছয়টি উপজেলার ওপর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এ ছয়টি থানার ওসিদের সক্রিয় ভূমিকার অভাব রয়েছে বলে মনে করছে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা-চট্টগ্রামের মহাসড়কের মাঝখানে অবস্থান কুমিল্লার। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনার পতনে কুমিল্লার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এ জেলার সঙ্গে সীমান্তঘেঁষা ত্রিপুরা রাজ্য। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা বেশির ভাগ পালিয়েছে এই এলাকা দিয়ে। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পলাতক আওয়ামী স্বৈরাচাররা কোণঠাসা হয়ে পড়ায় তারা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ত্রিপুরা রাজ্যকে বেছে নিয়েছে। তাদের অনেকে অনলাইনে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে সক্রিয়।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে একত্রিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশের কাছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আরেকটি সূত্র বলছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের অনেক নামধারী নেতা বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা সুযোগ পেলে প্রথমে ছোবল মারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরো জানা যায়, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করা লোকজন বর্তমানে বিএনপির নাম ধারণ করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর সঙ্গে আঁতাত করেছে। তারা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকানোর পাঁয়তারা করছে।

ত্রিপুরা সীমান্ত এলাকায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্ত এলাকায় বাঙালিদের বাড়িতে আশ্রয় আছে আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকেরই এখন অবৈধভাবে সেখানে বসবাস করছে। সেখানে বসে অনলাইনে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর জন্য বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং সেল তৈরি করেছে পতিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডাররা। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছিল তার অধিকাংশই এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

কুমিল্লার পাঁচটি উপজেলা সীমান্তঘেঁষা। আওয়ামী ক্যাডাররা এদিক দিয়েই ভারতে পালিয়ে গেছে বলে জানায় সীমান্তঘেঁষা বসবাসকারী বাংলাদেশিরা। কুমিল্লার দানব হিসেবে সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনাসহ আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক হেভিওয়েট নেতাকর্মীও পালিয়েছে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে। গুঞ্জন রয়েছে বাহার ও সূচিকে পার করতে কুমিল্লার দুই থেকে তিনজন বিএনপি নেতার হাত রয়েছে ।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কয়েকটি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, পতিত সরকারের সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে সূচির নেতৃত্বেই একত্রিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। তাদের উদ্দেশ্য সুযোগমতো কুমিল্লা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ম্যাসাকার করা। এর মাধ্যমে তারা ঢাকা অচল করার পরিকল্পনা করছে।

কয়েকটি সূত্র জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম কয়েক মাস কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও বর্তমানে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করছে তারা। তাদের প্রশ্রয় দিয়ে দল ভারী করছে বিএনপি ও জামায়াত। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের নেতারা ভোটারদের কাছে টানতে আওয়ামী লীগারদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় মিলছে। এ সুযোগেই শক্তিশালী হচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোনো মুহূর্তেই অরাজকতা তৈরির মতো প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কুমিল্লায় ৪২টি মামলা হলেও আসামি ধরা পড়েছে হাতে গোনা কয়েকজন। বরং মামলা দিয়ে অনেকেই বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিএনপি জামাতের কয়েকজন নেতা। প্রশাসনের ভেতরেও এখন পর্যন্ত স্বৈরাচারের দোসরদের জন্য মায়াকান্না হচ্ছে বলে জানায় কয়েকটি সূত্র।

ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের সহকারী অধ্যাপক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ ইমরান আনসারী আমার দেশকে বলেন, আওয়ামী লীগ পতনের পর সীমান্ত এলাকাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেট বিশেষভাবে ঝুঁকিতে। সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এখন অত্যন্ত জরুরি।

কুমিল্লা মহানগর জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী রাশেদুল হাসান বলেন, আওয়ামী লীগ ভুলে গেছে গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান। তারা আবার দেশে ফিরে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টায় আছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, তারা যদি মরণকামড় দিতে চায় তাহলে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতাও তাদের গণধোলাই দেওয়ার ব্যবস্থা করবে, ইনশাআল্লাহ।

বিএনপি কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া আমার দেশকে বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ফেরার চেষ্টা করছে, এমন খবর আমরা পাচ্ছি। বিএনপি নেতাকর্মীরা এদের প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে আমরা কোনো প্রশ্রয় দেব না।

কুমিল্লা ব্যাটালিয়ন (১০ বিজিবি) অধিনায়ক কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছি, একটি সিন্ডিকেট সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র ঢোকানোর চেষ্টা করছে। টহল ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খাঁন আমার দেশকে বলেন, ১১ থেকে ১৩ নভেম্বরের মধ্যে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছি। গত সপ্তাহে কয়েকজন ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে বেশির ভাগই ভাড়াটে লোক, নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের টাকা দিয়ে মিছিল করানো হচ্ছে। এক মিনিট মিছিল করে ফেসবুকে ছবি দিলেই তাদের টাকা দেওয়া হয়।

তিনি আরো জানান, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক এমপি বাহার ও উত্তর জেলার রওশন আলী মাস্টার নামে এক আওয়ামী নেতা এসব কার্যক্রমে অর্থায়ন করছেন।

দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করবে না সরকার: নৌ পরিবহন উপদেষ্টা

নিখোঁজের ৩ দিন পর যুবকের লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ

ফেনীতে বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে কোটি টাকা লুটপাট

পটিয়ায় জুলাই আন্দোলনের অস্ত্রধারীরা এখনো অধরা

চট্টগ্রামে বাবলা খুনের আসামি রায়হানের খোঁজে র‌্যাব

বিএনপি কর্মী খুনে বিদেশি পিস্তল, ধরা পড়ল ছয় শ্যুটার

জব্দকৃত ৭ হাজার প্যাকেট বিদেশি সিগারেট থেকে ৪ হাজারই গায়েব

ভারতীয় আধিপত্য বিরোধী সংসদ গঠিত হোক: হাসনাত

বিএনপি নেতা তোতা চেয়ারম্যানের খুনিদের নিয়ে ধানের শীষের প্রচারণা

খাগড়াছড়ি কারাগার থেকে দুই আসামির পলায়ন, একজন আটক