মৃত্যুর আগেই সব মামলায় মুক্তি লাভ করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে বেগম জিয়ার পক্ষে জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামায় এ তথ্য জানা গেছে।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলের দুটি ও পরবর্তীতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আক্রোশে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আরও ৩৩টিসহ মোট ৩৫টি মামলার মধ্যে ২২টি মামলায় খালাস ও ১৩টি মামলায় মৃত্যুর আগেই অব্যাহতি পেয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
মামলাগুলোতে দুর্নীতি, মানহানি, রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, বোমা হামলা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ‘মিথ্যা’ জন্মদিন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছিল।
এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি মামলাগুলোর বিচার চলমান ছিল। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার রায় ঘোষণার পর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঠানো হয় কারাগারে। সাজা ভোগ করেন দুই বছর এক মাস ১৬ দিন।
এরপর করোনাকালে আওয়ামী লীগ সরকার তার সাজার কার্যকারিতা স্থগিত করে। শর্তসাপেক্ষে কারামুক্তি দিয়ে বাসায় থাকার সুযোগ দেওয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। তবে বয়সজনিত কারণে শারীরিক নানা জটিলতায় আক্রান্ত হলেও স্বজনদের পক্ষ থেকে বারবার আবেদনের পরও খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়নি ফ্যাসিস্ট হাসিনা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব রাজনৈতিক মামলা থেকে একে একে খালাস পেতে শুরু করেন তিনি।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে ২০০৭ সালে ২টি, ২০১০ সালে ১টি, ২০১৩ সালে ১টি, ২০১৪ সালে ২টি, ২০১৫ সালে ১৬টি, ২০১৬ সালে ১০টি, ২০১৭ সালে ২টি, ২০২৪ সালে ১টি মামলা দায়ের করা হয়। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে সবকয়টি মামলা নিষ্পত্তি হয়।
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও কুমিল্লা, খুলনা, নড়াইল ও পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মীরা বাদী হয়ে এসব মামলা করেন। পরে সব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত করা হয়েছিল বলে দাবি করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
এ ব্যাপারে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে গায়েল করার চেষ্টা করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক।
তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া ঢাকায় অবস্থান করলেও চৌদ্দগ্রামে গাড়িতে হামলার মামলা দেওয়া হয়েছিলো। মিথ্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। ওই সময় নানা শারীরিক অসুস্থতা ভুগলেও তাকে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হয়নি। এজন্য খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পেছনে শেখ হাসিনাও দায়ী।