কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে নিম্নমানের ইট দিয়ে তড়িঘড়ি করে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের কাজ সেরে নিচ্ছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই কাজটি ঠিকাদার পাওয়ার পর সামান্য সাববেইস দিয়ে দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন। হঠাৎ কোনো এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় নিম্নমানের ইট বিছিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করেন শ্রমিকরা। এলাকাবাসীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে সরেজমিন। ঘটনাটি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে একটি জনগুরুপূর্ণ সড়ক নির্মাণের কাজের। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দেয়।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ আইআরডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ফরিদগঞ্জের বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সেকদি-চান্দ্রা সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সড়কের ৮২৫ মিটার ৫ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমজেএআইজেবি। সড়ক নির্মাণের প্রথম থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধীরগতিতে মাটির কাজ ও সড়কের দুই পাশের পাইলিং কাজ করে। কিছু দিন থেকে সড়কের মূল কাজ এইচবিবি শুরু করে তারা। কিন্তু তারা এবার ধীরগতির পরিবর্তে দ্রুতগতিতে কাজ করতে থাকে। এতে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। অভিযোগ উঠে, এইচবিবি কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের নিচের অংশে নিম্নমানের ইট বিছিয়ে দ্রুতলয়ে ওপরের স্তরের ইটও বিছিয়ে দিচ্ছে। একই সময় নিম্নমানের ইটের ওপর বালি ছিটিয়ে দিচ্ছে যেন ওই ইটগুলো দেখা না যায়। ইতোমধ্যে প্রায় ৩শ' মিটার কাজ সম্পন্ন করেছে নিম্নমানের ইট দিয়ে।
স্থানীয়দের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২২ অক্টোবর) সরেজমিন গেলে অনিয়মের চিত্র দেখা যায়। দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা এইচবিবির কাজ করছেন। নিচে নিম্নমানের ইট বিছানোর পর দ্রুত ওপরের স্তরের ইট বসাচ্ছেন। কেউ ইট বিছাচ্ছেন আবার কেউ ওপরে বালি ছিটিয়ে দিচ্ছেন। অনিয়মের মধ্য দিয়ে কাজ চলমান থাকলেও প্রকৌশল বিভাগের কোনো কর্মকর্তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে নিম্নমানের ইটের বিষয়ে জানতে চান। এ সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিম্নমানের ইটের কথা স্বীকার করে শ্রমিকদের ইট উঠিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেয়।
বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর পক্ষে মিজানুর রহমান, আব্দুল ওয়াদুদ ও ইব্রাহীম মিয়াসহ আরো কয়েকজন বলেন, প্রায় ৬ কোটি টাকার সড়ক নির্মাণে পচা ইট ব্যবহার করছে। এই ইট বেশি দিন টিকবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করেছে বিশাল অঙ্কের এই টাকা লুটপাট করে খাওয়ার চেষ্টা করছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা হাবিবুর রহমান ভুট্টু ও শাকিল আহমেদ বলেন, কিছু ইট নিম্নমানের চলে এসেছে। আমরা সড়ক থেকে সেগুলো উঠিয়ে নিচ্ছি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবরার আহাম্মদ জানান, নিম্নমানের ইট ব্যবহারের বিষয়টি জেনেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলেছি নিম্নমানের ইট সরিয়ে নিতে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিধিমোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।