বাগেরহাটের মোংলায় স্থানীয় সাংবাদিকের ওপর সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী হামলার ছয় মাস ২০ দিন পর পলাতক এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে মোংলা থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতের নাম ওবায়দুল গাজী, পিতা ছত্তার গাজী। বুধবার গভীর রাতে সুন্দরবন ইউনিয়নের বাঁশতলা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, (৯ মে ২০২৫) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোংলা বাঁশতলা বাজারসংলগ্ন জাহাঙ্গীরের চায়ের দোকানের সামনে দৈনিক আমার দেশ-এর মোংলা উপজেলা প্রতিনিধি খাঁন আশিকুজ্জামানের ওপর ওই হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
মোংলা থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে—মাদক, চোরাচালান ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিক আশিকুজ্জামানের ওপর হামলা চালায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। লোহার রড, হাইড্রোলিক পাইপ, বাঁশের লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। এতে তার হাত, পা, পাঁজরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়।
অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে—হামলাকারীরা তার ব্যবহৃত ৩৮ হাজার টাকা মূল্যের স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেয় এবং প্যান্টের পকেট থেকে ২৪ হাজার ৫২০ টাকা লুট করে। এছাড়াও তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে শ্বাসরোধের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত সাংবাদিকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫–৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
আহত সাংবাদিক খাঁন আশিকুজ্জামান বলেন,“পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি। এর আগে বারবার হুমকি পেয়েছি। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমাকে মামলার এফিডেভিট করতে বাধ্য হতে হয়। আদালতের হাজিরা না দেওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছে আদালত। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে।”
মোংলা থানার ওসি আনিসুর রহমান বলেন,“মামলার এজাহার অনুযায়ী যাদের বিরুদ্ধে আদালতের ওয়ারেন্ট রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। পলাতক এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”
হামলার ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ওয়ারেন্টভুক্ত বাকি ২ আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজ। তাদের অভিযোগ—সাংবাদিকদের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে।
মোংলার সাংবাদিক সমাজ বলছে—এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়; অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হবে।