খুলনায় ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে জামায়াত আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা ৮ দলের বিজয় চাইনা, আমার বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। আমার দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, ন্যায় বিচার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাবেদারি নয়-স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যেতে চাই।
সোমবার খুলনায় ইসলামপন্থী সমমনা ৮ দলের উদ্যোগে আয়োজিত ‘খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বেলা ১২ টার দিকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র শিববাড়ি মোড় বাবরী চত্বরে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মো. রেজাউল করিম।
প্রধান অতিথি বলেন, ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরদিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অব্যাহত আছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। মানুষ বলতে বাধ্য হচ্ছে, আগে ভালো ছিলাম না, এখন আরও খারাপ আছি। তবে এ সময় কোন ইসলামি দলের গায়ে চাঁদাবাজের তকমা লাগেনি বলে দাবি করেন তিনি।
৩৫ বছর ও তার নিচে যাদের বয়স, যারা বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতের আমির বলেন, এবার তোমাদের ভোট নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করতে চাইলে আমরা তা হতে দেবোনা। সেদিন আমারও যুবক হয়ে তোমাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করবো। তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তোমাদের হাতে আমার দেশটা তুলে দিতে চাই। সেজন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করো। তোমরা চাকরি করবে না, চাকরি দেবে।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দুই ধারায় চলমান উল্লেখ করে জামায়াতের আমীর বলেন, এক ধারায় রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা। অন্য ধারায় স্কুল কলেজে বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষা। মাদ্রাসায় খুন খারাবি হয় না। অস্ত্রবাজি হয়না। জ্ঞানের চর্চা হয়। পক্ষান্তরে ৫৪ বছরে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানদের লাশ পড়েছে। মদ গাঁজার আসর বসেছে। মেয়েদের ইজ্জত লুট হয়েছে। অস্ত্রের ঝনঝনানি হয়েছে। সভ্য হতে হলে আমাদেরকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। কিছু দল ও ব্যক্তি দফায় দফায় দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, অনেক স্থানে আমাদের ব্যানার-পোস্টার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। তবে জনগণ এখন আর পোস্টার দেখে ভোটের সিদ্ধান্ত নেয়না। তারা আমাদেরকে ভালোবেসে বুকের মধ্যে স্থান দিয়েছে। আন্দোলনরত ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ঐক্য আমাদেরকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আরও একবার ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে বলে হুশিয়ার করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মো. রেজাউল করিম বলেন, অনেকে বলেন আমার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নই। কিন্তু আমার নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিন্তু তারাই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে হিসাব নিকাশ করে দেখেছেন তাদের পায়ের তলে মাটি সরে গেছে। এবার নির্বাচন নিয়ে আপনারাই ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। গুণ্ডামি করে, সেন্টার দখল করে, সন্ত্রাসী চালিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসবেন। সেদিন ভুলে যান। সে সুযোগ আর আপনারা পাবেন না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর আল্লামা মামুনুল হক বলেন, দেশের মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে বাহাত্তরের সংবিধানপন্থী। অন্যভাগে চব্বিশের বিপ্লবপন্থী। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, আমরা চব্বিশের বিপ্লবপন্থী। রক্তের সাগর পেরিয়ে যে ফ্যাসিবাদকে বাংলাদেশের সীমানা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, তারা আর কখনোই ফিরে আসার সুযোগ পাবেনা। জুলাই বিপ্লবকে যারা আন্তরিকভাবে প্রহণ করতে পারেননি তারা ষড়যন্ত্র করে পর্দার পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়িয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করছে। আমার তাৎপর্যপূর্ণ গণভোটকে দলীয় প্রতীকের ভোটের সাথে একসাথে না করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম। নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হলে ইন্টেরিম সরকারকে ইতিহাস ক্ষমাক করবে না বলে হুশিয়ার করেন তিনি।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির আরো বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, নেজামে ইসলামি পার্টির আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজীজী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানি, জাগপার মুখপাত্র আল রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন। এছাড়া ৮ দলীয় জোটের জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ কেন্দ্র করে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে খুলনা মহানগরী। বিভাগের ১০ জেলা সহ আশেপাশের অন্যান্য জেলা থেকে বাস, ট্রাক, পিকআপ, নৌযান সহ নানাভাবে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে আসেন। পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিকেল ৪টার পরপরই সমাবেশের কাজ শেষ হয়।