নেত্রকোনায় গুদাম থেকে ৩০৪ বস্তা সরকারি চাল জব্দের ১১ দিন পর কেন্দুয়া পৌর বিএনপির সভাপতি খোকন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার কেন্দুয়া থানার ওসি মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এরআগে মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে কেন্দুয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা ওই মামলায় খোকন আহমেদকে (৫০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
খোকন আহমেদ কেন্দুয়া পৌর বিএনপির সভাপতি। তিনি কেন্দুয়া পৌরসভার বাদে আঠারো বাড়ি এলাকার বাসিন্দা। ওই এলাকায় তার মালিকানাধীন মেসার্স নাহার ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
জানা গেছে, জব্দ করা চালগুলো হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য সরকার নির্ধারিত ছিল। কিন্তু তা খোকন আহমেদের গুদামে মজুত রাখা হয়, যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, সাজা থেকে বাঁচতে বিএনপি নেতা খোকন আহমেদ তার ডিলারশিপ লাইসেন্স অন্যের নামে ট্রান্সফার করার চেষ্টা করছেন। সরকারি চাল জব্দ হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা দেওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘদিনেও এ বিষয়ে মামলা করেনি প্রশাসন।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ঘটনাটি আমার এরিয়ার মধ্যে ছিলো না। আমাকে চিঠি দিয়ে কেউ ইনভলভ করেনি। জব্দকৃত চালগুলো পুলিশের হেফাজতে ছিল। তাই এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কেন্দুয়া থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে। আসামি খোকন আহমেদ বর্তমানে পলাতক থাকায় তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জুন রাত ৮টার দিকে গোপন সংবাদে কেন্দুয়া পৌরশহরের আঠারো বাড়ি এলাকায় খোকনের মালিকানাধীন মেসার্স নাহার ট্রেডার্সে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। মদনের অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জামিউল ইসলাম সাকিব এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। অভিযান অভিযান টের পেয়ে একটি হ্যান্ডট্রলি করে এসব চাল গুদাম থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ওই বিএনপি নেতা। এ সময় হ্যান্ডট্রলিটি বঙ্গানিয়া মোড় থেকে আটক করে পুনরায় গুদামের সামনে নিয়ে আসে। পরে গোডাউন ও ট্রলিসহ মোট ৩০৪ বস্তা আতব চাল জব্দ করা হয়, যার ওজন প্রায় ১৩ হাজার ৮৫৪ কেজি। এসব চালের বাজারমূল্য আনুমানিক ৫ লাখ ৫৪ হাজার ১৬০ টাকা। জব্দকৃত চালের মধ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের পাটের বস্তা, টিসিবির বস্তা, নীল, সাদা ও হলুদ রঙের বিভিন্ন প্লাস্টিকের বস্তা ছিল।
অভিযানের সময় খোকন আহমেদকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করে ডাকা হলেও তিনি উপস্থিত হননি। একপর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। ফলে তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। পরে জব্দকৃত চাল থানা পুলিশের হেফাজতে দেয় সেনাবাহিনী।