ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ নিচু থাকায় তা ভরাট করে উঁচু করতে এবং শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার উপযোগী করে তুলতে টিআর প্রকল্পের আওতায় সরকারি বরাদ্দ দেখানো হয়েছে দুই লক্ষ টাকা। কিন্তু কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিদ্যালয়ের নাম সাধুয়া বারইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নে অবস্থিত।
উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিগুয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হেলাল উদ্দিন আরিফ রব্বানী সাধুয়া বারইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেন। এরপর বিদ্যালয় মাঠের মাটি ভরাট প্রকল্পের সভাপতি করা হয় ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জোবেদা নাহারকে।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, বরাদ্দ পাওয়া ওই টাকা বিদ্যালয়ের মাঠ উন্নয়নে খরচ করার নির্দেশনা ছিল। সে মোতাবেক কাজ করা হয়েছে দেখিয়ে বরাদ্দের পুরো টাকাই গত তিন মাস পূর্বে উত্তোলন করা হয়েছে।
এরপর গত রোববার দুপুর সোয়া ৩টা নাগাদ সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে এক টুকরো মাটিও ফেলা হয়নি। মাঠটি ফেটে চৌচির হয়ে পড়ে আছে।
এরপর খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জোবেদা নাহার এবং ওই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হেলাল উদ্দিন আরিফ রব্বানী কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত দুই লক্ষ টাকা উত্তোলন করে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জোবেদা নাহার বলেন, “এতোদিন বৃষ্টি ও অন্যান্য কারণে মাঠে মাটি ভরাট করতে পারিনি। এখন মাটি ভরাট করা হবে।” বরাদ্দের টাকা তুলে নিয়েছেন আরও তিন মাস আগে এবং এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়েছে মর্মে প্রকল্প ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে। ‘এখন মাটি ভরাট করবেন তাহলে এতোদিন কেন করেননি?’—এমন প্রশ্নে তিনি আর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, “দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সহকারী শিক্ষা অফিসার ২৫% হারে ৫০ হাজার টাকা কেটে রেখে আমাকে দুই কিস্তিতে দেড় লক্ষ টাকা দিয়েছেন।”
তবে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরাও জানতাম বিদ্যালয়ের মাঠ বরাটের জন্য বরাদ্দ এসেছে। বাস্তবতা হচ্ছে বিদ্যালয়ে মোটেই কাজ না করে প্রধান শিক্ষক ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক বরাদ্দের পুরো টাকাটাই আত্মসাৎ করেছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের শ্বশুর নিগুয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন প্রধান লালু মেম্বার। সেই সাহসেই তারা টাকাটা আত্মসাৎ করেছেন। এখন সাংবাদিকদের কল্যাণে হয়তো কিছু কাজ করলে করতেও পারে।
এ ব্যাপারে হেলাল উদ্দিন আরিফ রাব্বানীর সোজা উত্তর, “এতোদিন কাজ হয়নি এখন আপনাদের (সাংবাদিকদের) কল্যাণে কাজ হলে ক্ষতি কী? আগে কাজ না হলেও এখন কাজ হলে অন্তত বিদ্যালয় তো লাভবান হবে।”
আপনি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে বরাদ্দের পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে—এমন প্রশ্নে তিনি তা অস্বীকার করেন। ২৫% হারে ৫০ হাজার টাকা কেন নিলেন জানতে চাইলে তাও অস্বীকার করেন।