মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ নিয়ে জামালপুর-৩ আসন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। বিএনপি থেকে টিকিট নিশ্চিত করেছেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সহসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে আগে থেকেই মাঠে আছেন জেলার কর্মপরিষদ সদস্য ও দাওয়াহ বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা মো. মুজিবুর রহমান আজাদী। ইতোমধ্যে বিলবোর্ড, ফেস্টুন, পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। ভোটারদের মনোযোগ কাড়তে নানা কর্মসূচিতে সরব দুদলের প্রার্থীরা। তবে আসনটিতে দল দুটি ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীকে এখন পর্যন্ত গণসংযোগে দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জামালপুর-৩ আসনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে নতুন সমীকরণ। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাতবারের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের অনুপস্থিতিতে এখন মাঠে দলটির রাজনীতি নিষ্ক্রিয়। বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াত এ আসনে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।
এ আসনে বিএনপি থেকে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলের নাম ঘোষণার পর অন্যদের মধ্যে কিছুটা নীরবতা লক্ষ করা গেছে।
এ বিষয়ে আমার দেশ-এর সঙ্গে আলাপকালে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, আরো যারা দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, আশা করি তারা সবাই ‘সবার আগে দল’—এই বিবেচনা থেকে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। আমার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন। সব স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। দলের বিজয় সুনিশ্চিত করার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।
এর আগে আসনটিতে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মোস্তাফিজুর রহমান ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেন।
অন্যদিকে, মেলান্দহ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান সিদ্দিকী শুভ এখনো মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি নিয়মিত কর্মিসমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। আমার দেশ-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে আমার অবস্থান ও জনগণের প্রত্যাশা বিবেচনা করে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করবেন বলে আমি আশাবাদী।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও দাওয়াহ বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা মো. মুজিবুর রহমান আজাদী। নির্বাচনি এলাকায় তিনি নিয়মিত গণসংযোগ করছেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।
জামায়াত প্রার্থী মাওলানা মো. মুজিবুর রহমান আজাদী মেলান্দহের মালঞ্চ আল আমিন জমিরিয়া কামিল মাদরাসায় ৩৫ বছর যাবৎ অধ্যাপনা করে আসছেন। আসনটিতে তার অনুমানিক ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী ভোটার রয়েছেন।
এছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব লুৎফর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি শামসুদ্দিন, জেলা জাকের পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী, মেলান্দহ উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের জাহিদুল ইসলাম, জেলা খেলাফত মসলিসের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি রফিকুল ইসলাম, জেলা যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি লিটন মিয়া, মাদারগঞ্জ উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল মিয়া, জেলা গণঅধিকার পরিষদের সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম তুহিন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।
বিএনপির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল জানান—মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত একটি শান্তিপূর্ণ এবং কল্যাণময় জনপদ হিসেবে মেলান্দহ-মাদারগঞ্জকে গড়ে তোলাই হবে আমার প্রথম লক্ষ্য। শিক্ষার মানোন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে এলাকায় শিল্পকারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে অনুরোধ করব। সর্বোপরি সরকারি অফিস-আদালত, থানা পুলিশের কাছ থেকে সাধারণ জনগণ যেন প্রত্যাশিত সেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে আমি সচেষ্ট থাকব।
জামায়াত প্রার্থী অধ্যাপক মাওলানা মুজিবুর রহমান আজাদী বলেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ এ দেশে ইসলামি শাসনব্যবস্থা চালু করবে। অন্যায় ও দুর্নীতি দূর করে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করবে। জনগণের প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। এতে বোঝা যাচ্ছে জনগণ এবার ইসলামের আইন প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচিত করবে। তিনি আরো বলেন, মেলান্দহ-মাদারগঞ্জে বেকারত্ব দূরীকরণ, মাদকমুক্ত সমাজ গঠন, শিক্ষাঙ্গন ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ ন্যায়নিষ্ঠার সমাজ প্রতিষ্ঠা করব। দেশে কোনো দুর্নীতি থাকবে না এবং যুগোপযোগী উন্নয়নের ধারাকে সম্প্রসারিত করব ইনশাল্লাহ।
আসনটির আয়তন ৪৮৩ দশমিক ৭১ বর্গকিলোমিটার। দুই উপজেলা মিলিয়ে এখানে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ১৯ হাজার ৯৭৮। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৬৩ হাজার ২২১ এবং নারী ভোটার দুই লাখ ৫৬ হাজার ৭৫৭ জন।