ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে আগুন সন্ত্রাসীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন চালক জুলহাস মিয়া (৩৫)। সোমবার গভীর রাতে উপজেলার একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে ঘটে এ নির্মম ঘটনা। কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী আগুন সন্ত্রাসীদের নৃশংসতায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এক মায়ের একমাত্র ভরসা, এক স্ত্রীর স্বপ্নের আশ্রয় এবং একটি পরিবারের হাসি।
মঙ্গলবার ফুলবাড়িয়ার কৈয়ারচালা গ্রামের বাসচালক নিহত জুলহাস মিয়ার বাড়ি গিয়ে মা সাজেদা বেগমের বুকফাটা আর্তনাদ দেখা যায়। এলাকাবাসী জানান, ভোরে খবর পাওয়ার পর থেকেই জুলহাসের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বারবার বলছিলেন, আমার বুকের টুকরোটা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, তোমরা আমার ছেলেকে ফেরত দাও।
চোখের পানি মুছতে মুছতে মা সাজেদা বেগম বলেন, আমার ছেলেটা সপ্তাহে একদিন বা পনেরো দিনে একদিন বাড়িতে আসতো। অনেক ঋণ ছিল তার। সপ্তাহে দশ হাজার টাকা করে কিস্তি দিতে হতো। এছাড়াও আরও তিন লাখ টাকা ধার ছিল। এত কষ্ট করেও হাসিমুখে সংসার চালাতো। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম, সে বলতো ‘মা, তুমি আর কাজ করো না, আমি এখনও বেঁচে আছি।’
একটু থেমে আবার কেঁদে ওঠেন সাজেদা। বলেন, গাড়িটাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতো। এক সপ্তাহ পর সুযোগ পেলে সকালে বাড়িতে আসতো দুপুরে চলে যেতো।
জুলহাস মাত্র এক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন জাকিয়া আক্তারকে। কিছুদিন ধরে বাবার বাড়িতেই ছিলেন জাকিয়া। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে আসেন শ্বশুরবাড়িতে। কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে জাকিয়া বলেন, এক বছর হলো সংসার শুরু করেছি। এখন আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো?
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন জুলহাস মিয়া। মায়ের কষ্ট কমানোর জন্যই মানুষের বাড়িতে কাজ করতে বারণ করেছিলেন তিনি। একটি ঘর তুলেছিলেন ঋণের টাকায়, সংসারের সুখের স্বপ্ন বুনেছিলেন। কিন্তু আগুন সন্ত্রাসীদের আগুনে একটি সংসার, একটি ভবিষ্যৎ, এক মায়ের স্বপ্ন সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
কৈয়ারচালা গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, আগুন সন্ত্রাসীদের এমন নির্মমতায় ঘৃণা ও ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ফুলবাড়িয়া। জুলহাসের মৃত্যু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। সাধারণ মানুষ আজ প্রশ্ন তুলছে, একজন পরিশ্রমী চালকের প্রাণ নিতে আগুনই কি এখন রাজনীতি?
ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকনুজ্জামান জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আলম এশিয়া পরিবহনের বাসটি রাত ২টা ৪৫ মিনিটে ফুলবাড়িয়ায় পৌঁছায়। বাসটি তেল নেওয়ার জন্য একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে থামানো হয়। যাত্রীরা সবাই নেমে গেলেও চালক জুলহাস মিয়া বাসের সিটে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ঠিক তখনই তিনজন দুর্বৃত্ত এসে হঠাৎ করে বাসে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন পুরো বাসে ছড়িয়ে পড়ে, বের হওয়ার সুযোগ পাননি জুলহাস। ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগের অংশ হতে পারে।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে।