হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

নবান্নে আগের মতো জৌলুস নেই চলনবিলে

রকিবুর রহমান টুকুন, চাটমোহর (পাবনা)

বাংলার মানুষের চিরাচরিত আদি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নবান্ন উৎসব। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এ উৎসবের রীতি। রূপসি বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ তার ‘খুঁজে তারে মরো মিছে’ কবিতায় লিখেছেন ‘সেই সব ভিজে ধূলো, বেলকুঁড়ি-ছাওয়া পথ—ধোঁয়া ওঠা ভাত/ কোথায় গিয়েছে সব?—অসংখ্য কাকের শব্দে ভরিছে আকাশ/ ভোর রাতে—নবান্নের ভোরে আজ বুকে যেন কিসের আঘাত!’ কবি কীসের আঘাতের কথা বলেছেন তার কবিতায়—সেটা অনুমেয় না হলেও নবান্নের কথা উঠলেই একটা আঘাত এসে পড়ে বৈকি।

চলনবিল অঞ্চলে ফসলের মাঠ জুড়ে নতুন ধানের ম-ম গন্ধে জানান দিচ্ছে দ্বারে কড়া নাড়ছে অগ্রহায়ণ। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব। এক সময় নবান্ন নিয়ে কতই না আনন্দ-বেদনার উৎসব আমেজ ছিল বিলের কৃষি জীবনে। এখনো উৎসব আছে তবে অপসংস্কৃতির কারণে গ্রামীণ উৎসবগুলোতে ভাটা পড়েছে অনেকখানি।

কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই চলনবিল পাড়ের বন্দি গ্রামগুলোতে নবান্নের একটা আমেজ চলে আসে। বিলের অভাবী উঠানগুলোও নিকানো হয় নবান্নের আগমনী বার্তায়।

কার্তিক-অগ্রহায়ণ মানেই এখনো গ্রামীণ কৃষিসমাজে এক ধরনের উৎসব। কারণ বর্ষায় রোপণ করা বোনা আমন ধান (কালা বকরি, আজল দিঘা, বাঁশিরাজ) এ সময়ই কাটা হয়। ধান কাটা শুরু হলেই অনন্য আনন্দ বয়ে আনে এ ‘নবান্ন উৎসব’। এলাকাভেদে পৌষ মাস অবধিও চলে নবান্নের আনুষ্ঠানিকতা।

নতুন ধান কাটা-মাড়াই সাধারণত শেষ হয় অগ্রহায়ণের আগেই। সেই ধান কাঠখড়ির আগুনে মাটির চুলায় সেদ্ধ করে শুকানো হয়। ভাপা, চিতই, পাকান, কুলসিসহ নানা ধরনের পিঠাপুলির জন্য তৈরি হয় বউ-ঝিয়েরা। নতুন মেয়ে-জামাইদের নিয়ে আসা হয়।

আগে এ সময় বাড়ির আঙিনা রঙিন কাগজ কেটে সাজানো হতো। হাটবাজার থেকে খেজুরের পাটালি গুড় কিনে আনতেন কৃষক। প্রচলন ছিল নারীদের দলবেঁধে গীত পরিবেশনেরও। হিন্দু সমাজে (সনাতন) তো আনুষ্ঠানিকতা ছিল আরো বেশি।

নবান্ন উৎসব ঘিরে গ্রামের বাজারে বা হরিসভায় ভাষানযাত্রা, কবিগান, ফকিরান্তি গান, যাত্রা পালা, হাটুরে কবিতা, পুথিপাঠের আসর বসানো হতো।

সেসব সোনালি দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেক কিছু এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে। আগের মতো ঘটা করে আর নবান্ন উৎসব হয় না চলনবিলে। অনেক কিছুই হয়, তবে সেটা আধুনিক স্টাইলে।

১৮৭৪ সালে রমেশচন্দ্র দত্তের ‘বাংলার কৃষক’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়, আমন ধান বোনা হয় ভরা বর্ষাতে, নিচু জমিতে। সেই ধান কাটা হয় কার্তিকের শেষ থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত। তিনি নবান্ন উৎসবকে ‘আমন পার্বণ’ উল্লেখ করে বলেছেন, আমন ধান কাটা সারা হলে অনেক পরিবার একসঙ্গে জড়ো হয় এবং বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করে।

ইতোমধ্যেই চলনবিলে কৃষিসমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিলের মাঝখান দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মহাসড়ক। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। গরু-মহিষের গাড়ির পরিবর্তে এখন বাড়িতে বাড়িতে মোটরসাইকেল, স্মার্ট টেলিভিশন, তাতে আবার স্যাটেলাইট সংযোগ। বিলের বিভিন্ন গ্রামে রয়েছে মুরগি ও গরুর খামার। জীবনাচরণই পুরোপুরি বদলে গেছে। তা ছাড়া বড় কৃষক জমি এখন চাষাবাদ না করে বাৎসরিক লিজ দিয়ে টাকা নেন। তাই তাদের উঠান আর ধানের সোঁদা গন্ধে ভরে ওঠে না। তবে সেজন্য যে তারা অগ্রহায়ণের নবান্নে মেয়ে জামাই নিয়ে এসে পিঠাপুলি খান না, তা নয়। সেসব এখনো আছে।

আর একটা দিক ছিল চলনবিলের নবান্নে। এক সময় বিলের গ্রামান্তরে নানা বর্ণের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের বসবাস ছিল। ওঁড়াও, মাহাতো, বুনা, বাগদি, সাওতাল আরো কত রকম। এখন তাদের সংখ্যা একেবারে কমে গেছে। তাদের আয়োজন পুরো নবান্ন উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করত। ইঁদুরের গর্ত থেকে তোলা ‘গতর খাটা ধান’ ছিল ওদের নবান্নের পিঠাপুলির জোগান। পূর্ণিমা রাতে ঝুমুর গান আর নিজস্ব সংস্কৃতির উৎসব নিয়ে মত্ত থাকত তারা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গ্রামগুলোয় নবান্নের রাতগুলোতে আয়োজন হতো বহুমাত্রিক। এখন আর সেই ছন্দ নেই। কোথায় যেন চলে গেছে অভিমানী সেই সম্প্রদায়, নিয়ে যেন তাদের উৎসবের পুরো আবহ।

এখনো অবশ্য চলনবিলের মানুষ নবান্ন উপলক্ষে নতুন ধানের পিঠাপুলি খাওয়াতে মেয়ে জামাইকে নাইওরে নিয়ে আসেন। আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে সবাই। তবে ঐতিহ্য হারিয়ে বদলে গেছে সংস্কৃতির ধারা। পুরোনো আবহ বদলে সৃষ্টি হয়েছে নতুন আরেক ধারা।

নাটোরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু

বগুড়ার ‘নো প্রোমোশন নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি শুরু

বগুড়াতে চলছে নবান্ন উৎসব, মেলার প্রধান আকর্ষণ বড়বড় মাছ

নও মুসলিম বিধবা রহিমার ছাউনি ছাড়া ঘরে মানবেতর জীবন

বিএনপি প্রার্থী আমিনুলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রেলপথ অবরোধ

ঈশ্বরদীতে ডাকাতি, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট

ইউরোপ-আমেরিকায় যাচ্ছে চাটমোহরের কুমড়ো বড়ি

একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন জনগণ মানবেন না: মঞ্জুরুল ইসলাম

চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনিকে গণসংবর্ধনা

বিএনপির বিজয় নিশ্চিত জেনে একটি দল ষড়যন্ত্র শুরু করেছে: দুলু