দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর মাড়াষ গ্রামে এক একর জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন সিতাকোট বিহার। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘সীতার কোট’ নামে বেশি পরিচিত। বৌদ্ধধর্মীয় এই বিহারটি সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা প্রত্নতত্ত্ববিদদের। শুধু ইতিহাস নয়, সীতা ও বাল্মীকিকে ঘিরে থাকা লোককথারও গভীর ছাপ রয়েছে এই স্থাপনাটির সঙ্গে।
স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, বনবাসের সময় সীতা নাকি আশুড়ার বিল সংলগ্ন এ স্থানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কাছাকাছি একটি ঢিবিতে বসেই বাল্মীকি, রামায়ণের সাত কাণ্ড রচনা করেন এমনও বিশ্বাস স্থানীয়দের মাঝে প্রচলিত। তবে এসবের আনুষ্ঠানিক প্রমাণ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নথিতে নেই।
১৯৬৮ সালে প্রথম খননে সিতাকোট বিহারের অস্তিত্ব প্রকাশ পায়। পরে ১৯৭২-৭৩ সালের খননে উন্মোচিত হয় ৬৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৬৫ মিটার প্রস্থের বর্গাকৃতির বিশাল বিহার। এতে আবিষ্কৃত হয় ভিক্ষুদের ব্যবহারের ৪১টি কক্ষ, আলাদা প্রবেশপথ ও নিবেদন সামগ্রী রাখার কুলঙ্গি। কেন্দ্রস্থলের বিস্তৃত আঙিনা এবং পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের তিনটি কক্ষ ভিক্ষুদের উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
গাইবান্ধা থেকে আসা দর্শনার্থী তাজুল ইসলাম বলেন, সিতাকোট বিহার খুব শান্ত ও মনোমুগ্ধকর। এখানে এলেই ইতিহাসের ভেতরে হারিয়ে যেতে হয়। সামান্য উন্নয়ন করা হলে এটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হতে পারে।
পীরগঞ্জ উপজেলা থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী আবদুস সালাম বলেন, এত পুরোনো স্থাপনাও এত সুন্দরভাবে টিকে আছে এটা সত্যিই বিস্ময়কর। সিতাকোট বিহার আমাদের ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী। এটি নবাবগঞ্জের জন্য গর্বের বিষয়।
নবাবগঞ্জ পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ বিপ্লব কুমার সাহা বলেন,
সিতাকোট বিহার শুধু একটি প্রত্নস্থল নয়, এটি আমাদের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অপরিহার্য অংশ। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, সীতা বনবাসের সময় আশুড়ার বিল সংলগ্ন এই স্থানেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভক্তরা এখানে এসে আরাধনা করেন। একই সঙ্গে অনেক দর্শনার্থীও ঐতিহাসিক নিদর্শনটি দেখার জন্য প্রতিনিয়ত ভিড় করেন। যদি স্থানটি সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা যায়, তবে এটি দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রত্ন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিল্লুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ সিতাকোট বিহারটি সংস্কারের লক্ষ্যে পরিদর্শন করেছে। ঐতিহাসিক সিতাকোট বিহারের প্রবেশের জন্য রাস্তা প্রশস্ত করণের কাজ শুরু করা হবে শীঘ্রই এবং সিতাকোট বিহারের নাম ফলকের কাজ প্রায় শেষ।