হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

ইউরোপ-আমেরিকায় যাচ্ছে চাটমোহরের কুমড়ো বড়ি

রকিবুর রহমান টুকুন, চাটমোহর (পাবনা)

আবহমান গ্রামবাংলার রান্নাঘরের অবিচ্ছেদ্য উপাদান কুমড়ো বড়ি। সুস্বাদু এ খাবারের নাম শুনলেই বাঙালি রসনায় পানি চলে আসে। ডাল, চাল ও কুমড়ার মিশেলে তৈরি ঐতিহ্যবাহী এ খাবার এখন শুধু দেশেই নয়, পৌঁছে যাচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার প্রবাসী বাঙালিদের রান্নাঘরেও।

শীতের সুস্বাদু তৃপ্তিময় রসনা পূর্ণ করে এ কুমড়ো তরকারি। এক সময় পাবনার চাটমোহরে ঘরের বধূরা শখ করে নিজেদের উৎপাদিত ডাল দিয়ে এ নিরামিষ খাবার তৈরি করতেন। কৈ, মাগুর বা শোল মাছের ঝোলে কুমড়ো বড়ির স্বাদ ছিল অতুলনীয়। কালের পরিবর্তনে সেই সৌখিনতা এখন পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক উৎপাদনে, যা নিম্নবিত্ত অনেক পরিবারের জীবিকার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

চাটমোহরের কুমড়ো বড়ি এখন শুধু স্থানীয় চাহিদা মেটাচ্ছে না, জেলা শহর, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের কাঁচা বাজারেও যাচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের চাহিদায় এটি রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, ইতালি, ফ্রান্স, সৌদি আরব ও দুবাইয়েও।

চাটমোহর উপজেলার শাহী মসজিদ এলাকা, দোলং, বোথর, মথুরাপুর, বালুচর ও রামনগরসহ আশপাশের গ্রামে দুশতাধিক পরিবার কুমড়ো বড়ি উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল হান্ডিয়াল, ছাইকোলা, নিমাইচড়া, মূলগ্রাম ইউনিয়নে তৈরি হচ্ছে এ কুমড়ো বড়ি। বাড়ির নারীরা তৈরি করেন, পুরুষরা বাজারজাত করেন, এ যৌথ উদ্যোগে অনেক পরিবার এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী।

দোলং গ্রামের শিলা রানী জানান, প্রায় ৫০ বছর ধরে এ কাজ করছি। একটা সময় অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদের। সারাদিন ডাল ভিজিয়ে শিল-পাটায় বাটতে হতো, এখন মেশিনে গুঁড়ো করি। এতে আমাদের সময় বেঁচে যাচ্ছে আবার পরিশ্রমও কম। তাছাড়া এখন অল্প সময়ে বেশি বড়ি তৈরি করতে পারছি।

একই গ্রামের চাপা রানী ও মায়া বলেন, পরিবারের পুরুষ সদস্যরা সাধারণত ডাল ভিজিয়ে মেশিনে গুঁড়ো করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে বড় গামলা বা বালতিতে ডালের গুঁড়োর সঙ্গে পাকা চালকুমড়া, কালোজিরা, গোলমরিচসহ নানা মসলা মিশিয়ে বড়ি তৈরি করি। এরপর টিনের বা কাঠের পিঁড়িতে সরিষার তেল মাখিয়ে সুতি কাপড়ের সাহায্যে জিলেপি তৈরির মতো বড়ি বানিয়ে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। ৩/৪ দিন কড়া রোদে শুকালে প্রস্তুত হয়ে যায় সুস্বাদু কুমড়ো বড়ি। এ কাজগুলো নারীরাই করে থাকেন।

স্থানীয়রা জানান, আকার ভেদে প্রতিটি বুড়ো চাল কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে কিনতে হয়। এছাড়াও ৮৫-৯০ টাকা কেজি খেসারি, অ্যাংকর ডাল ৬০ এবং ১২০ টাকা কেজি দরে মাসকলাই ডাল কিনে কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়।

স্থানীয় উৎপাদক উত্তম ও প্রদীপ জানান, প্রতি কেজি ডাল থেকে ৭৫০ থেকে ৮০০ গ্রাম বড়ি তৈরি হয়। বাজারে ডালের ধরনভেদে দাম পড়ে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। মাসকলাই ও অ্যাংকর ডালের বড়ির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

তারা আরো বলেন, চাটমোহরের উৎপাদিত কুমড়ো বড়ি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে জেলা শহর হয়ে এখন রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের কাঁচা বাজারগুলোতে স্থান করে নিয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা কুমড়ো বড়ি কিনতে আসেন। তবে অর্ডার দিয়ে বানালে খরচ কিছুটা বেশি পড়ে। শিল পাটায় বাটা ডালের বড়ির কদরও সব সময় একটু বেশি থাকে। স্বাদেরও ভিন্নতা রয়েছে।

চাটমোহরের তরুণ কুমার বলেন, নারীরা প্রতিদিন প্রায় ২০ কেজি ডালের বড়ি তৈরি করতে পারেন। বাড়ির দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে তারা এ কাজ করেন। কারণ ভোর থেকে শুরু করে সকাল ৯টার মধ্যে বড়ি তৈরি বা রোদে দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হয়।

মূলত আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত কুমড়ো বড়ি বাজারে বিক্রি হয়। এ মৌসুমে ব্যবসা করে সংসারে বাড়তি আয় করে বহু পরিবার স্বাবলম্বী হচ্ছে। অনেক নিম্নবিত্ত পরিবার তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অনেকে সচ্ছলতাও এনেছেন সংসারে।

স্থানীয়রা বলেন, চাল কুমড়া ও ডালের এ মিশ্রণ শুধু সুস্বাদুই নয়, রান্নার সময় মিঠা পানির মাছের সঙ্গে মিললে স্বাদের জুড়ি নেই। নিরামিষ তরকারিতেও এর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়।

পুষ্টিবিদ কুমকুম ইয়াসমিন জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম মাষকলাইতে আছে ৩৪১ মিলিগ্রাম ক্যালরি, ৯৮৩ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, প্রোটিন ২৫ গ্রাম, সোডিয়াম ৩৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম, আয়রন সাত দশমিক ৫৭ মিলিগ্রাম। অপরদিকে চালকুমড়া একটি পুষ্টিকর সবজি। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার রয়েছে। চালকুমড়া যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকসহ বহু রোগের ক্ষেত্রেও উপকারী। চালকুমড়া ও মাষকলাইয়ের সমন্বয়ে তৈরি কুমড়ো বড়ি নিঃসন্দেহে একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার।

বিএনপি প্রার্থী আমিনুলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রেলপথ অবরোধ

ঈশ্বরদীতে ডাকাতি, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট

একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন জনগণ মানবেন না: মঞ্জুরুল ইসলাম

চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনিকে গণসংবর্ধনা

বিএনপির বিজয় নিশ্চিত জেনে একটি দল ষড়যন্ত্র শুরু করেছে: দুলু

বালুবাহী বাল্কহেডে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ১০

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী: সাদিক কায়েম

একটা দল বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুলের গণসমাবেশে যোগ দিচ্ছেন না জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ

পদ্মার চরে খড় ব্যবসাকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী বিরোধ