হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

কাজে আসছে না ৩৩৬ কোটি টাকার রূপপুর রেলস্টেশন

জহুরুল ইসলাম, পাবনা

উন্নয়নের নামে আওয়ামী লুটপাটের এক দৃশ্যমান স্থাপনা পাবনার রূপপুর রেলওয়ে স্টেশন। উদ্বোধনের তিন বছর পেরোলেও একদিনের জন্যও রেলপথটিতে চলেনি কোনো ট্রেন। অব্যবহৃত পড়ে আছে সুবিশাল স্টেশন। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী মালামাল পরিবহনের পরিকল্পনায় নির্মিত সর্বাধুনিক স্টেশনটিতে আসেনি কোনো মালামাল। প্রশ্ন উঠেছে রূপপুর প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যানে না থাকলেও, কার স্বার্থে তৈরি হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকার এই ব্যয়বহুল স্টেশন। এই অনিয়ম তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এবং রেলওয়ের তত্ত্বাবধানে রূপপুর রেলওয়ে স্টেশন ও ২৬.৫২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চলে স্টেশনটি নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। প্রকল্পের আওতায় ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন থেকে ঈশ্বরদী হয়ে রূপপুর পর্যন্ত ১৩টি লেভেল ক্রসিং, ৭টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কম্পিউটার বেজ, কালার লাইট ও সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, উন্নয়নের গালভরা বুলিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিশেষ মহলকে সুবিধা দিতেই অপ্রয়োজনীয় ও ব্যয়বহুল এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সে সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ছিলেন ইয়াফেস ওসমান, আর রেলমন্ত্রী ছিলেন মুজিবুল হক। ভারত-বাংলাদেশের একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানিকে ডুয়েল-গেজ রেললাইনটি নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালের জুনে রেললাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়, তবে এখনো সেটি ব্যবহার করা হয়নি।

রেলওয়ের একটি সূত্র জানায়, রূপপুর প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যানে রেল পরিবহন পরিকল্পনা না থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্স এবং সাবেক এমপি কাজী নাবিল আহমেদের মালিকানাধীন ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন (বাংলাদেশ) এবং জিটিপি ইনফ্রাপ্রজেক্টস (ভারত)-এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উদ্বোধনের সময় বলেছিলেন, রূপপুর স্টেশন থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে না। এটি শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালপত্র ও ভারী যন্ত্রপাতি আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হবে। এ রেল সংযোগ রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রকে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যুক্ত

করবে, ফলে পণ্য পরিবহন আরো সহজ হবে। রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি ঈশ্বরদী ইপিজেডের মালামালও এই স্টেশনের মাধ্যমে পরিবহন করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি কেবলমাত্র নদী ও সড়কপথেই প্রকল্প এলাকায় আনা হচ্ছে।

রূপপুর রেল স্টেশনে গিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের পর থেকে কোনো কাজেই লাগেনি বিপুল ব্যয়ে নির্মিত স্টেশনটি। কার্যক্রম না থাকায় স্টেশনটিতে নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া দেখা মেলে না কোনো কর্মকর্তার। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে শত কোটি টাকার সরঞ্জাম। টিকিট কাউন্টার, গুডস বুকিং রুম, গেস্ট রুম, ভিআইপি রুম, প্রথম শ্রেণির ওয়েটিং রুম— সব কক্ষই তালাবদ্ধ।

স্থানীয় বাসিন্দা কালু প্রাং বলেন, ‘রূপপুর প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের জন্য ঈশ্বরদী বাইপাস থেকে রূপপুর পর্যন্ত যে রেলপথ নির্মিত হয়েছে, তা আজ পর্যন্তও অকেজো। ৩ বছরেও এই স্টেশনে কোনো ট্রেন যাতায়াত করেনি, রেলের কোনো আয়ও হয়নি। এটি আদৌ ব্যবহৃত হবে নাকি দুর্নীতি, লুটপাট করার জন্য এটি করা হয়েছেÑতা খতিয়ে দেখা দরকার।’

বিদ্যুৎ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় জানিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি রূপপুর কর্তৃপক্ষ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ড. জাহেদুল হাছান আমার দেশকে বলেন, ‘এই স্টেশন ব্যবহার সম্পূর্ণটা নির্ভর করছে রেলওয়ের উপর। রুপপুর প্রকল্পের সঙ্গে এটি সংশ্লিষ্ট না।’ কেন এটি নির্মাণ করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাস্টার ট্রান্সপোর্টেশন পরিকল্পনায় রেললাইন অন্তর্ভুক্ত ছিল না। কেন এটি তৈরি করা হয়েছে, তা আমি জানি না।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজে রেলপথের ব্যবহার নিয়ে ধোঁয়াশায় স্বয়ং রেল বিভাগও। বিকল্প বাণিজ্যিক ব্যবহার নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক লিয়াকত শরীফ খান বলেন, স্টেশন ও রেলপথ নির্মাণ করেছে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তারা চাইলে যে কোনো সময় এটি ব্যবহার করতে পারে। মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ হয়েছে। আমরা ঈশ্বরদী ইপিজেড ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্টেশনটির সুবিধা নিয়ে আলাপ করেছি। তবে, ওই বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ তুলনামূলক কম। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাড়লে আমদানি-রপ্তানিতে রূপপুরের রেলপথ ও স্টেশনের সুবিধা নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, ২০২০ সালে রূপপুর রেলপথ ও স্টেশন নির্মাণে অর্থ অপচয় এবং অনিয়ম নিয়ে অডিট আপত্তি ওঠে। সম্প্রতি এ বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

জামিন পেলেও দেশে ফেরা হচ্ছে না অন্তঃসত্ত্বা সোনালিসহ ৬ ভারতীয়র

৮ কুকুরছানা হত্যায় মামলা: গ্রেপ্তার সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী

নওগাঁয় ১২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলো তাপমাত্রা

রাতের আঁধারে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

মাদক বিরোধী অভিযানে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ৪

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার শাস্তির দাবিতে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

ঈশ্বরদীতে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষে ভাইরাল সেই যুবক গ্রেপ্তার

দুই বাংলাদেশিকে হত্যার পর পদ্মায় ফেললো বিএসএফ

নামাজে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নিহত

কৃষি খাতে সিন্ডিকেট হটাতে আমরণ অনশনে এনসিপি নেতা