নীলফামারীর জেলা পরিষদ কার্যালয়ের প্রধান সহকারী আব্দুল হাই এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে জানা যায়, আব্দুল হাই তথ্যগোপন করে নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ছাড়পত্রের মাধ্যমে ম্যানেজ করে নিজের ছেলে ওমর ফারুককে দিয়ে বাগিয়েছেন কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারীর পদ।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ১২ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় বিভাগ থেকে উপসচিব মোহাম্মদ সামসুল হক স্বাক্ষরিত একটি ছাড়পত্রে জেলা পরিষদে সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত শূন্যপদে জনবল নিয়োগের ছাড়পত্রের মেয়াদ বৃদ্ধি উল্লেখ করে চাওয়া হয় একজন উচ্চমান সহকারী ও দুজন অফিস সহায়ক।
২০২৩ সালের ২২ আগস্ট পর্যন্ত ছাড়পত্রের মেয়াদ মঞ্জুরি স্পষ্টত উল্লেখ থাকলেও যথা সময়ে সেটির বাস্তবায়ন করেনি জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ রয়েছে, পরিবারকেন্দ্রিক কার্যালয়ে পরিণত করার হীন প্রতিযোগিতায় আব্দুল হাই নিজের ছেলে ওমর ফারুককে দিয়ে বাগিয়েছেন উচ্চমান সহকারীর পদ। এ নিয়ে আব্দুল হাই পরিবারে দুই শ্যালকসহ ক্রমন্বয়ে বাগিয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানের মোট ৪টি ভিন্ন ভিন্ন পদ। এমনকি আব্দুল হাই এর ছেলে কার্যালয়টির উচ্চমান সহকারী পদে নিয়োগ পাওয়া ওমর ফারুকের সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। তার উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল জিপিএ ২.৯০। যা আবেদনের অযোগ্যতা বলে বিবেচিত একটি পাস। বিজ্ঞপ্তিতে স্নাতক ডিগ্রি চাওয়া হলেও তৃতীয় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস একজনকে কিভাবে নিয়োগ দেয়া হয়, এমন প্রশ্ন সবার মুখে মুখে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল হাই ও তারই ছেলে ওমর ফারুক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন মন্তব্য করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।
জানতে চাইলে নীলফামারী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান।
প্রসঙ্গত: নীলফামারীতে দুদকের গণশুনানি আয়োজনে দুদক চেয়ারম্যানসহ নীলফামারীর উচ্চ পদস্থ অসংখ্য কর্মকর্তা আর হাজার হাজার মানুষের সামনে জাহিদ হোসেন নামে এক ভুক্তভোগীর দ্বারা ‘দুর্নীতির গডফাদার’ হিসেবে আখ্যা পান আব্দুল হাই।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আব্দুল হাই এর দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেও শুধু মাত্র হাইকোর্টে দায়ের করা একটি রিট এর বরাত পেয়েই দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না দুদক। ফলে, কার্যালয়টিকে দুর্নীতির আতুর ঘর পরিবারকেন্দ্রিক কার্যালয় বানিয়ে ফায়দা লুটছেন আব্দুল হাই। শুধু তাই নয়, আব্দুল হাই এর দুর্নীতির কবলে পড়ে ভুক্তভোগীদের অশ্রুফোঁটা যেন কার্যালয়টির কার্পেটের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।
অনুসন্ধান বলছে, নীলফামারী জেলা পরিষদে ২০১৯ সালে জনবল নিয়োগে, নিয়োগ নীতিমালার ব্যাত্যয় ঘটিয়ে ৩২ বছর বয়সী প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে মহামান্য হাইকোর্টে রিট করেন জাহিদ হোসেন নামের একজন ভুক্তভোগী।
এদিকে, জেলা পরিষদে নিয়োগের দুমাসের মধ্যেই নিয়োগকৃত প্রার্থীদের বেতনভাতাদি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন কার্যালয়টির অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থাকা আব্দুল মোতালেব সরকার। পরবর্তীতে কি আদেশ মুলে বন্ধ থাকা বেতন ভাতাদি পুনরায় চালু করে সেটি চলমান রেখেছেন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।
সেটি স্পষ্টসহ কার্যালয়টির প্রধান সহকারী আব্দুল হাইয়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ভুক্তভোগীরা।
দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে থেকে মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আর মার্কেট নির্মাণের প্রকল্প নিয়েও উঠেছে ব্যাপক দুর্নীতির চিত্র।