দীর্ঘ নয় মাসেও স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ আট দফা দফা বাস্তবায়ন না হওয়ায় রংপুরে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে মহাসড়ক অবেরোধ করে বিক্ষোভ করেছে কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা। সোমবার তাজহাট কৃষি ডিপ্লোমা ইন্সিটিটিউটরা থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে তাজহাট মোড়ে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এ ঘণ্টা ব্লকেডে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
ব্লকেডের সময় আবু সাঈদের বাংলায় বৈষম্যের ঠাই নাই; আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ; উচ্চ শিক্ষা বিলাসিতা নয়, অধিকার; খামার বাড়ির সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও; কৃষির সৈনিক এক হও লড়াই করো সহ বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কৃষি ইন্সটিটিউটের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সুস্মিতা বলেন, আমাদের জন্য স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে এটা বিলাসিতা নয়, এটা আমাদের অধিকার। কারণ আমরা যেসব শিক্ষার্থী কৃষি ডিপ্লোমা পড়ি, তাদের ২/১ জন বাদে সময় মধ্য বিত্ত ও নিম্ন মধ্য বিত্ত পরিবারের। আমাদের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের। এই দাবি কেন মানা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন রাখেন এই শিক্ষার্থী।
অংশগ্রহণকারী ৫ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মাঈশা আখতার মুক্তি জানান, আমরা ২০২৪ এর জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ৫ আগস্টের পর আমরা খামারবাড়িতে আন্দোলন করেছে। সরকারের কাছে বলে আসছি। আমাদের যৌক্তিক আটদফা মেনে নেয়ার জন্য সরকার আমাদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু ৯ মাসেও তার পূরণ করা হয় ন। আমরা মনে করি পরিকল্পিতভাবে আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। সেকারণে আমরা ক্লাস পরীক্ষা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। দাবি মেনে নিয়ে আমাদের ক্লাস পরীক্ষায় বসার এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া হোক।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছামিউল ইসলাম বলেন, একনাগারে ১৭ দিনের আন্দোলন শেষে গত ২১ এপ্রিল কৃষি উপদেস্টাসহ সংশ্লিষ্টদের আশ্বাস পেয়ে আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তারা আমাদের মানতে টালবাহনা করছে। সেকারণেই আমরা পড়ার টেবিল পরীক্ষার টেবিল ছেড়েছি। আজ এক ঘণ্টার মহাসড়ক ব্লকেড করলাম। প্রতিদিনই এর মাত্রা বাড়বে। প্রয়োজনে আমরা সচিবালয় ব্লোকেড কর্মসূচিতে যাবো।
মোসাদ্দেক হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী আন্দোলনকারী প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, তাহলে এই দেশে কৃষি শিক্ষা এতো অবহেলিত কেন? উচ্চ শিক্ষা কেন আমরা পবো না? আমরা চাই স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা ক্লাস পরীক্ষা ছেড়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ থেকে উঠবো না।
ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে গেজেট প্রকাশ ও নিয়মিত নিয়োগ নিশ্চিত, কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক সংকট দূরীকরণ, কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষাকে কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অধীন থেকে বের করে সম্পূর্ণভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আলাদা প্রতিষ্ঠান, সব কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের অগ্রাধিকার, বেসরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের জন্য ন্যূনতম দশম গ্রেডের বেতন কাঠামো, মাঠ সংযুক্তি ভাতা প্রদান এবং চাকরিতে প্রবেশের পর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের জন্য ছয় মাসের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে কৃষি শিক্ষার্থীরা।