সুনামগঞ্জের হাওরজুড়ে চলছে সোনালি ফসল তোলার উৎসব। চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষক, কৃষাণীর মুখে ফুটেছে হাসি। অনুকূল আবহাওয়া, সময়মতো কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং মাঠপর্যায়ের নিবিড় তদারকির কারণে এ বছরের উৎপাদন আগের সব রেকর্ড ছাড়ানোর পথে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জে ৮২ হাজার ৬৫৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ হয়েছে। উফশী, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাত মিলিয়ে চালের হিসাবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন। এর আনুমানিক বাজারমূল্য দাঁড়াবে ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকারও বেশি।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত জেলার হাওরগুলোতে প্রায় ৫০ শতাংশ ধান কাটা শেষ। কৃষি বিভাগের অনুমান—আরো ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই পুরো জেলার ধান কাটার কাজ শেষ হবে, যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে। কৃষাণ–কৃষাণিরা এখন ধান ঘরে তুলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্থ সময় পার করছেন কৃষকরা। কৃষাণীরাও ধান খলার মাঠে কুলা হাতে ধান থেকে ছোঁচা ঝাড়ছেন। বাম্পার ফলনে তাদের মুখে ফুটেছে খুশির ছাপ।
ডাকুয়ার হাওরের কৃষক রফিকুল ইসলাম ধানের স্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আল্লাহর রহমতে আশা করি আমরা লাভবান হব।
জোয়ালভাঙা হাওরের কৃষক হাসান আলীবলেন, ফসল ঘরে তুলতে পেরে সত্যিই আনন্দিত। আল্লাহর সাহায্যে এবার আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। আশা করি বাজারে ন্যায্য দামও পাব।
অচিন্তপুরের কৃষক আবদুল হামিদ বলেন, দশ কেদার আমন জমি চাষ করেছি। প্রতি কেদারে ১৫ মন করে ধান পেয়েছি।
ধান ঘরে তুলতে পেরে অনেক স্বস্তি মনে হচ্ছে। আল্লাহর রহমতে আশা করি লাভও হবে।
বিশ্বম্ভরপুরের কৃষক রাশেদ খান বলেন, পাশাপাশি আবহাওয়া ও সরকারের সহায়তায় চাষাবাদ অনেক সহজ হয়েছে। ফসল ভালো হওয়ায় মন খুশিতে ভরে গেছে। আশা করি বাজারে ন্যায্য দাম পাব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, আমরা মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন, সঠিক রোপণ, সার প্রয়োগ এবং কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। মাঠে আমাদের কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়েছেন। তারই ফলে হাওরে বাম্পার ফলন হয়েছে।