বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় বড় ভূমিকা রাখছে। গত অর্থবছর রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে এবং চলতি বছর তা ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। অর্থনৈতিক সংকটের সময়েও রেমিট্যান্স দেশকে সহায়তা করেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরাটন হোটেলে এনআরবি গ্লোবাল কনভেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিশ্বজুড়ে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাদের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ আরও দৃঢ় করা এবং দেশের জন্য কাজ করতে তাদের আগ্রহী করে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি জানান, তিনি ৩২ বছর যুক্তরাষ্ট্রে এবং চার বছর কানাডায় বসবাস করেছেন। সে হিসেবে তিনি নিজেকেও একজন ‘আধা-এনআরবি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসীম। কেবল মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ায় কর্মরত শ্রমিকদের ওপর নির্ভর না করে বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত প্রবাসীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো জরুরি।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রবাসীরা চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইটি বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন এবং দেশের স্বার্থে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয়।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সময় বিদেশে কাজ করার পর দেশে ফিরে আসা সহজ নয় এবং এটি একটি আবেগপূর্ণ ও কষ্টকর প্রক্রিয়া। তবে সম্পূর্ণভাবে দেশে ফিরে না এসে আংশিকভাবে দেশ ও বিদেশে অবস্থান করেও দেশের জন্য কাজ করা সম্ভব।
বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি প্রবাসীদের বিপুল সম্পদের কথা উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, সেই সম্পদের সামান্য অংশও যদি বিনিয়োগ হিসেবে দেশে আসে, তবে তা শত শত বিলিয়ন ডলারের সমান হতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এনআরবি প্রতিনিধিরা একবারের জন্য নয়, বরং নিয়মিতভাবেই মাতৃভূমির সেবায় যুক্ত থাকবেন।
সরকার প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সীমিত সক্ষমতার মধ্যেও এনআরবি ব্যাংক, সিআইপি সুবিধা এবং বিমানবন্দরে বিশেষ অপেক্ষা কক্ষের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এনআরবিদের জন্য দেশের দরজা সবসময় খোলা রয়েছে এবং তারা বিদেশ থেকেও ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছেন।
তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পেছনে বিশ্বজুড়ে থাকা এনআরবি বাংলাদেশিদের বড় অবদান রয়েছে। এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। পাশাপাশি তিনি সফল প্রবাসীদের বাংলাদেশের বেকারত্ব, শিক্ষা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যখাতে অবদান রাখার আহ্বান জানান।
শেষে তিনি বলেন, প্রবাসীদের সবসময় সশরীরে দেশে থাকতে হবে না। তারা অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (ওবিইউ), শেয়ারবাজার বা সরকারি ডলার বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারেন, যা আকর্ষণীয় মুনাফা দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেবল বাংলাদেশের টানেই প্রবাসীরা দেশে এসেছেন উল্লেখ করে তিনি সেই চেতনা ধরে রেখে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।