হোম > বাণিজ্য

বোর্ড ভেঙে দেওয়া ১৪ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে তিনগুণ

রোহান রাজিব

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনিয়ম হওয়া ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব ব্যাংকের লুকানো খেলাপি ঋণ সামনে আসতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহাসন এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করেছেন। এই ১৪ ব্যাংকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক লাখ তিন হাজার ১৯২ কোটি টাকা বা প্রায় তিনগুণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর শেষে এই ১৪ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৫২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে ছিল ৪৯ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। এই ব্যাংকগুলো থেকে এস আলম, বেক্সিমকোসহ কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপ ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে।

এসব ঋণ এখন খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবে গত বছরের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে এসব ব্যাংকের অনিয়ম সামনে আসতে শুরু করে। এতে ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহক টাকা তুলে নেয়। আবার কিছু ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের টাকা দিতে না পারলে ব্যাংক খাতে অস্থিরতা শুরু হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার পর ব্যাংক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরেছে।

বোর্ড ভেঙে দেওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ছিল ৩২ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ। ব্যাংকটি এখন ১৩ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে ভুগছে। ছয় মাস আগে এর খেলাপি ঋণ ছিল সাত হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৫ হাজার ৯২ কোটি টাকা।

গত আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির পর্ষদে আধিপত্য বিস্তার করেছিল বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। গ্রুপটির হাতে ব্যাংকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬০ দশমিক ৫০ শতাংশ। ব্যাংকটি এখন ১৮ হাজার ৭২০ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে ভুগছে। ছয় মাস আগে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ২০ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা।

দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংকটির সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। কিন্তু ঋণে ব্যাপক অনিয়ম, সুশাসনের অভাব ও পরিচালকদের দ্বন্দ্বের কারণে এটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ব্যাংকটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সিকদার গ্রুপের। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন।

ছয় মাসে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৩ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ২৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। গত জুন শেষে ছিল এক হাজার ৪৬ কোটি টাকা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ ছিল বির্তকির্ত ব্যবসয়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের হাতে। এস আলম এই ব্যাংক থেকে ২৩ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা সরিয়েছে। এসব ঋণ এখন খেলাপি হচ্ছে।

একই গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৭ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে তা ছিল দুই হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এই ছয় মাসে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। এ ছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১৩ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা আর জুন শেষে ছিল এক হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।

বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকেও ছয় মাসে খেলাপি ঋণে বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে। তথ্য অনুযায়ী, এই ছয় মাসে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৩ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ছিল ১৭ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে ছিল তিন হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি সাত হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা।

ছয় মাসের ব্যবধানে ইউসিবির খেলাপি ঋণ তিন হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ছয় হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চার হাজার ১১৫ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে চার হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক হাজার ৬৮৪ কোটি বেড়ে চার হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা হয়েছে। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেড়ে ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের ১২৯ কোটি টাকা বেড়ে ডিসেম্বরে হয়েছে এক হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা।

গত সপ্তাহে নতুন করে যে তিনটি ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে, এদের মধ্যে দুটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে। তথ্য অনুযায়ী, ছয় মাসে মেঘনা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১৯ কোটি এবং এনআরবিসি ব্যাংকের ৩৩৯ কোটি টাকা। তবে এই সময় এনআরবি ব্যাংকের ১১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী আমার দেশকে বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ছেÑ এ গল্প আর কত দিন শুনব? বাংলাদেশ ব্যাংক তাহলে কি সমস্যার সমাধান করতে পারছে না? বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে, কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কত টাকা খেলাপি ঋণ আদায় হলো। খেলাপি ঋণের কারণে কতজন আইনের আওতায় এসেছে। ছয় মাসে কী পদক্ষেপ নেওয়া হলো, জাতি জানতে চায়। না হলে মনে হবে মূল সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু বোর্ড ভেঙে বসে থাকলেই হবে না, বাস্তব চিত্র দেখতে চায় মানুষ।

বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ আলোচনা সম্পন্ন

বিজিবিএর বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

১৬ মাস তালিকাভুক্তিবিহীন

ই-রিটার্ন ব্যবস্থায় যুক্ত হবে ব্যাংকিং তথ্য: এনবিআর চেয়ারম্যান

কৃষি ও এসএমই ঋণ বাড়াতে প্রভিশন হার আরও কমাল বাংলাদেশ ব্যাংক

ছয় মাসে ২৯৩ কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

তিন মাসে ভোক্তা ঋণ কমেছে ২২ হাজার কোটি টাকা

সংকুচিত হয়ে আসছে ইউরোপের রপ্তানি বাজার

ছয় সুগার মিল চালুর ঘোষণা শুধু কাগজেই

ডিসেম্বরের ১৭ দিনে এলো ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স