হোম > আমার দেশ স্পেশাল

শহীদ আবুল হোসেনের পরিবারে ক্ষোভ, হতাশা

এখনো গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি নাম

নজমুল হুদা শাহীন, ঢাকা উত্তর

সাভারের আশুলিয়ায় জুলাই আন্দোলনের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় নিহত আবুল হোসেনের নাম এখনো শহীদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে নিহতের পরিবারে ক্ষোভ ও হতাশা বেড়েছে। এছাড়া আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন এ শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

আবুল হোসেনের স্ত্রী লাকী আক্তার জানান, তার স্বামীর শহীদ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্তিতে আমলাতান্ত্রিক যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে বিব্রত তারা। ঘটনার এক বছর চার মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারিভাবে জুলাই শহীদদের তালিকায় তার স্বামী দিনমজুর আবুল হোসেনের নাম নেই।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বিষয়টি আটকে আছে বলে অভিযোগ এই নারীর। আদালতের আদেশের পরও তালিকাভুক্তিতে কেন বিলম্ব হচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।

লাকী আক্তার জানান, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার স্বামীর লাশ শনাক্ত হয় প্রায় এক বছর হয়ে গেছে। তিনি ট্রাইব্যুনালে গিয়ে মামলায় সাক্ষ্যও দিয়েছেন। এর পরও গেজেটে নাম ওঠেনি আবুল হোসেনের। সরকারি একাধিক তালিকার কোনোটিতেই শহীদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি আবুল হোসেনকে।

এর আগে লাশ পোড়ানোর ভিডিওতে গায়ের জার্সির অংশবিশেষ দেখে স্বামীকে শনাক্ত করেছিলেন লাকী আক্তার। সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের মুহূর্তে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট থেকে নিখোঁজ ছিলেন দিনমজুর আবুল হোসেন। ওই মাসের শেষদিকে আশুলিয়া থানার পাশে একটি ভ্যানের ওপর লাশ স্তূপ করে পুড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে ঢেকে রাখা একটি লাশের বের হয়ে থাকা হাত ও জার্সির রঙ দেখে সেটিকে আবুল হোসেনের লাশ হিসেবে শনাক্ত করেন তার স্ত্রী। এর পর হতদরিদ্র এই নারী বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে স্বামীর লাশ শনাক্ত করতে সমর্থ হন।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আবুল হোসেনের লাশ অজ্ঞাত পরিচয়ে আশুলিয়া থানার পাথালিয়া ইউনিয়নের আমবাগান কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর পরও গেজেট আকারে প্রকাশ হয়নি আবুল হোসেনের নাম। ফলে স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা এখনো আর্থিক সুবিধা পাননি। গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত সর্বশেষ গেজেটেও নাম ওঠেনি আবুল হোসেনের। এর আগের গেজেটেও তার নাম প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

অনেকটা আক্ষেপের সুরে লাকী আক্তার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে ঢাকায় গিয়েছিলাম আমার শাশুড়িকে নিয়ে। তখন এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমি তাকে আবুলের গেজেটভুক্তি না হওয়ার কথা বলি। এছাড়া হাসনাত আবদুল্লাহ ও উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গেও একাধিকবার দেখা করে তা বলেছি। জুলাই ফাউন্ডেশন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনেকবার গিয়েছি। কিন্তু গেজেটে অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে না আবুল হোসেনের নাম।’ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে কখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাপের বাড়িতে আবার কখনো কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতে হচ্ছে তাকে। দুই সন্তান ১২ বছরের জুনায়েদ হোসেন মাহিদ এবং ২০ মাস বয়সি মোহাম্মদ সাফওয়ানকে নিয়ে অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তায় দিন কাটছে লাকীর।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকী আক্তার বলেন, ছোট বাচ্চাটা ২০ মাস বয়স হলেও এখনো হাঁটতে পারে না। শিশুটিকে নিয়ে ডাক্তার-কবিরাজের কাছে অনেক ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে তার দুই পা মাটিতে ফেলতে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

জুলাই ফাউন্ডেশন কী করেছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ আবুল হোসেনের স্ত্রী জানান, তারা বলছেন আমাদের হাতে কোনোকিছু নেই। আপনারা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন। তারা আরো বলেছে, মন্ত্রণালয় যদি ক্লিয়ারেন্স দেয়, তাহলে তারা হয়তো কিছু টাকা দেবে। তবুও ওখানে সব কাগজপত্র জমা দিয়ে এসেছি। তারা যেভাবে বলেছে আমরা সেভাবেই সচিবালয়ে কাগজ জমা দিয়েছি। পরে ডিসি অফিসে ডাকলে ওখানেও কাগজ জমা দিয়েছি। কিন্তু শহীদ আবুল হোসেনের নাম কিছুতেই গেজেটভুক্ত হচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমে তার স্বামীর পরিচয় প্রকাশের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাসহ অনেকেই তাদের বাসায় এসেছিলেন। কিন্তু এখন আর তেমন কেউ আসেন না বা খোঁজ নেন না বলে আক্ষেপ করেন লাকি।

এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আবুল হোসেনের লাশ আশুলিয়ার আমবাগান কবরস্থান থেকে তুলে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশনা দিলেও ঢাকা জেলা প্রসাশন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে জুলাই শহীদদের তালিকায় আবুল হোসেনের নাম অন্তর্ভুক্তির নির্দেশও দেয় ট্রাইব্যুনাল। তবে তাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। লাকী আক্তারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ সম্প্রতি এ আদেশ দেয় বলে জানান প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।

লাশ উত্তোলনের বিষয়ে জানতে ঢাকা জেলা প্রশাসক রেজাউল করিমের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে আশার বাণী শুনিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণলয় গঠিত মেডিকেল টিমের প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন। তিনি জানান, আবুল হোসেনের নাম গেজেটভুক্ত হওয়ার সব কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। কোনো জটিলতা নেই। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তার নাম আগামী গেজেটে প্রকাশ হবে।

গত রোববার বিকালে লাকী আক্তার আমার দেশকে বলেন, আমি শুরু থেকে বলে আসছি যে, স্বামীর একটা হাড্ডি পেলেও আমি নিয়ে যাব। আমি তার লাশ কবর দিতে চাই। এছাড়া অতিদ্রুত আমার স্বামীর নাম গেজেট আকারে প্রকাশ হবে বলে আশা করছি।

সিআইডির ট্রেনিং সেন্টারে মিললো এসআইয়ের ঝুলন্ত লাশ

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী গ্রেপ্তার

সাপের ভ্যাকসিনের অভাবে শিশুর মৃত্যু

গৃহকর্মী নিয়োগের আগে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার অনুরোধ ডিএমপি কমিশনারের

গভীর রাতে ৩০০ ফিটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা

সুশাসন ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান

লালবাগে পূর্ব শত্রুতার জেরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

শান্তি চুক্তি ভেঙে ফের দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ

ছাত্রীদের জন্য ছাত্র সংসদ জাকসুর সীরাত সন্ধ্যা

মোহাম্মদপুরে মা–মেয়ে খুন: গৃহকর্মীকে খুঁজছে পুলিশ