ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর কর্মকর্তা মো. আতাহার আলী খানকে বদলি করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কর কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ সিটি করপোরেশন-১ শাখার যুগ্মসচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়। নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চাকরি চলে গেলে ৫ আগস্টের পর আবার চাকরিতে যোগদান করেন তিনি।
ইতিপূর্বে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করে কর কর্মকর্তা মো. আতাহার আলী খানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে মামলা করে। আদালত থেকেও তাদের পুনর্নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। ছিল অডিট আপত্তিও। এত কিছুর পর ১৩ বছরের মাথায় মো. আতাহার আলী খান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ফের যোগদান করেন। আরো কয়েকজন যোগদান করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন দিয়েছেন। এ ঘটনায় রাজধানীর নগর ভবনে চলে আলোচনা-সমালোচনা। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রভাব বিস্তার করে ও ডিএসসিসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের খুশি করে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ৭ জানুয়ারি বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে ডিসিসি। এর মধ্যে পাঁচটি ছিল প্রথম শ্রেণির কর কর্মকর্তার পদ। ২০০৬ সালের ১৩ অক্টোবর কর কর্মকর্তা পদে আবেদনকারীদের লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। চার দিন পর ১৮ অক্টোবর একই দিনে তাদের মৌখিক পরীক্ষা, নিয়োগ আদেশ জারি, নিয়োগপত্র প্রদান, বাছাই কমিটির মিটিং এবং নিয়োগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ডিসিসি। মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টায় এতগুলো কাজ শেষ করা হয়। বেশি তড়িঘড়ি করে এত কিছু করতে গিয়ে অনিয়মের অনেক প্রমাণ রয়ে যায়। এরপরই ফেঁসে যান নিয়োগপ্রাপ্তরা। এরপর তৎকালীন প্রশাসক হিসেবে খলিলুর রহমান যোগ দেওয়ার পরই তদন্তে এসব অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে আসে।
চাকরিতে আবেদনের সময় আতাহার আলী খান বি.কম ও এম.কমের দুটি সার্টিফিকেট দাখিল করেন। দেখা যায় বি.কম ও এম.কমের সেশন একই ১৯৯৫-৯৬, যা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উপরন্তু এম.কমের সনদে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কোনো স্বাক্ষর নেই এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ডিএসসিসির কর্মকর্তা বলেন, আতাহার আলী খান সিটি করপোরেশনের চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘন করে নিজ নামে ও পরিচিত জনের নামে একাধিক দোকানও বরাদ্দ নিয়েছেন। এ অবস্থায় তারা আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালত তাদের বিপক্ষে রায় দেন। আপিল বিভাগে গেলে আদালত তাদের পুনর্নিয়োগের বিষয়ে স্থগিতাদেশ জারি করেন। তিনি প্রভাব বিস্তার করতেন ও ডিএসসিসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের খুশি করে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন।
এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) রাজস্ব বিভাগের বাজার সার্কেল-৩ এর কর কর্মকর্তা আতাহার আলী খানকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। তৎকালীন জারিকৃত অফিস আদেশে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০১৯ এর বিধি ৬৪(২) মোতাবেক জনস্বার্থে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্বার্থ রক্ষার্থে চাকরি থেকে তাকে অপসারণ করা হলো।