সরকারি বিধিবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সাথে সাংঘর্ষিক 'বিশেষ বিধান' অপসারণপূর্বক স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি-বিধিমালা আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রণয়ন ও প্রকাশ করা না হলে ১০ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) নিয়মিত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি ডিপোর সামনে মেট্রোরেলের নিয়মিত ৯ম- ১৬তম গ্রেডের কর্মকর্তা কর্মচারীগণের ব্যানারে এক মানববন্ধন থেকে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
বক্তারা বলেন, ২০১৩ সালে ডিএমটিসিএল প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ এক যুগ অতিবাহিত হলেও প্রতিষ্ঠানের ৯০০-র বেশি নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য এখনো কোনো স্বতন্ত্র চাকরি-বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের অপারেশন শুরুর পর হতে উন্মুক্ত নিয়োগের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ঢাকাবাসীকে সুষ্ঠু মেট্রো সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দিন-রাত নিরলসভাবে অত্যন্ত দক্ষতা ও নিরাপত্তার সাথে যথাযথ পরিচালনা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করে যাচ্ছে। চাকরি-বিধিমালা না থাকায় কঠোর পরিশ্রম ও প্রতিযোগিতা করে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ দিনের অসন্তোষ এবং হতাশা। ছুটি, সিপিএফ, গ্র্যাচুইটি, শিফট-অ্যালাউন্স/ওভারটাইম, গ্রুপ-ইন্স্যুরেন্সসহ ন্যায্য বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা এবং দীর্ঘমেয়াদি পদোন্নতির সুযোগ থেকে কর্মচারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। অতীতে এক সহকর্মীর মৃত্যুর পরও সরকারিভাবে কোনো ক্ষতিপূরণ প্রদান করা সম্ভব হয়নি—এটিও চাকরি-বিধিমালা না থাকারই ফল। নিয়মিত কর্মচারীদের পক্ষে সরকারি বিধি ও নিয়ম নীতি অনুসরণ করে আধুনিক ও বাস্তবসম্মত চাকরি-বিধিমালা প্রণয়নের দাবিতে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত, মৌখিকসহ সর্বোপায়ে দীর্ঘদিন ধরে অসংখ্যবার দাবি জানিয়ে আসার পরও অদ্যাবধি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
উপদেষ্টা (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) মহোদয়-এর নির্দেশনা মোতাবেক (স্মারক নং-২৮.০০.০০০০.০০০.৬০.০০১.২৪.১২২, তারিখ-১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. এর (খ) অনুসারে) ৬০(ষাট) কর্মদিবসের মধ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি-বিধিমালা প্রণয়ন করার নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও উক্ত সময়ের মধ্যে তা প্রণয়ন না হওয়ায়, বিগত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি. স্থায়ী পদে নিযুক্ত নিয়মিত কর্মচারীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি. ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ এক মাসের মধ্যে (২০ মার্চ ২০২৫ খ্রি.) চাকরি-বিধিমালা প্রণয়নের আশ্বাস দেওয়ায় আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করার দীর্ঘ ০৯ মাস পেরিয়ে গেলেও আজও চাকরি-বিধিমালার কোনো দেখা মেলেনি।
যদিও একটি খসড়া চাকরি-বিধিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে, তবে সেখানে এমআরটি লাইন-৬ ও অন্যান্য প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ী করার উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থি ও দেশে প্রচলিত আইনের বিরোধী একটি বিতর্কিত “বিশেষ বিধান” একাদশ অধ্যায়ে সন্নিবেশ করা হয়েছে। এই অবৈধ বিশেষ বিধানকে বলবৎ রাখার অপচেষ্টা ডিএমটিসিএলকে গত ১৩ বছর ধরে চাকরি-বিধিমালা প্রণয়ন থেকে পিছিয়ে দিয়েছে। ফলে নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাধ্য হয়ে পুনরায় কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
আজ ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ডিএমটিসিএল-এর নিয়মিত কর্মচারীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতে পরিচালক (প্রশাসন) উপস্থিত হয়ে আশ্বাস প্রদান করেন যে, তিনি আগামী ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখের বোর্ড মিটিংয়ে অবৈধ “বিশেষ বিধান” অপসারণপূর্বক সার্ভিস রুল প্রণয়ন ও প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করবেন এবং এই বিষয়ে বোর্ডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।