ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনার জেরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে এই রিপোর্ট লেখার সময় ক্যাম্পাসে সেনাসদস্যদের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
তবে, এর আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী উভয়পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও প্রথম দু’ঘণ্টায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ।
সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জন শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা রাশেদ খান। তাদের মধ্যে একজনের মাথা ফেটে গেছে বলে জানান তিনি। তবে আহতদের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এলাকাবাসী মাইকিং করে আশপাশ থেকে লোক জড়ো করে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগ শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধভাবে স্থানীয়দের ওপর হামলা চালিয়ে মারপিট ও ভাঙচুর করেছে।
উভয়পক্ষই দাবি করেছে, তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যবিপ্রবির এক ছাত্রীর মোবাইল ফোনসেটে ত্রুটি দেখা দিলে তিনি পাশের আমবটতলা বাজারের একটি দোকানে মেরামত করতে দেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই মোবাইল ফোনসেট আনতে গেলে দোকানি ওই ছাত্রীর সঙ্গে ‘খারাপ আচরণ’ করেন। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে যবিপ্রবি থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী বাজারে গিয়ে ওই দোকানিকে মারপিট করে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় গোলযোগের সূত্রপাত হয়। যা একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে রূপ নেয়। ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হন। একপর্যায়ে মাইকে ঘোষণা শুনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের তিন গ্রাম ইসলামপুর, শ্যামনগর ও সাজিয়ালির লোকজন। উভয়পক্ষ লাঠিসোটা হাতে মুখোমুখী অবস্থান নেয়।
এলাকাবাসী যবিপ্রবির পূর্বপাশে আমবটতলা বাজার এলাকায় এবং শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে পশ্চিমের বেলতলা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। মাঝে-মধ্যে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসয় যশোর-চৌগাছা সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত সোয়া ৮টার দিকে যবিপ্রবি প্রধান ফটকের সামনে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, দু’পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে।
রাত সোয়া ৯টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা ও যবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী রাশেদ খান জানান, চার গাড়ি সেনাসদস্যদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক পুলিশ, ডিবি পুলিশ এবং র্যাব সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভূমিকা পালন করে। তারা শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী-উভয়পক্ষকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরিয়ে দেন। পাশাপাশি তারা যশোর-চৌগাছা সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, যবিপ্রবি শিক্ষকরা উদ্যোগী হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে একস্থানে জড়ো করে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেয়ার কাজ করছেন।