হোম > ফিচার > ক্যাম্পাস

সাইটেশন জালিয়াতি করে ‘সেরা গবেষক’ শেকৃবির প্রোভিসি অধ্যাপক বেলাল

সিরাজুদ্দৌলা আরাফাত, শেকৃবি

অধ্যাপক বেলাল

গবেষণা জগতে একজন গবেষকের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব মাপার অন্যতম সূচক হলো সাইটেশন সংখ্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি বা গবেষণা অনুদান নির্ধারণে এই সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে সাইটেশন বৃদ্ধি করতে কৃত্রিম পন্থা গ্রহণের অভিযোগও নতুন নয়। সম্প্রতি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপ-উপাচার্য এবং উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বেলাল হোসাইনের বিরুদ্ধেও সাইটেশন জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি গুগল স্কলারে নিজের প্রোফাইলে অন্য গবেষকদের প্রবন্ধ যুক্ত করেছিলেন। ফলে তার সাইটেশন সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে প্রায় ১৩ হাজারে পৌঁছায়। পরে বিষয়টি আলোচনায় এলে তার পূর্বের প্রোফাইলটি গুগল স্কলার থেকে মুছে যায় এবং বর্তমানে বিদ্যমান প্রোফাইলে মাত্র ৩০০-এর মতো সাইটেশন দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, এই নতুন প্রোফাইলেও জালিয়াতির মতো অনিয়ম রয়ে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গুগল স্কলারের প্রোফাইল গবেষকরাই পরিচালনা করেন এবং প্রবন্ধগুলো নিজ উদ্যোগে যুক্ত করতে হয়। অভিযোগ ওঠে, নামের মিল থাকা বিভিন্ন দেশের গবেষকের প্রবন্ধ ড. বেলালের প্রোফাইলে যুক্ত করা হয়েছিল। এসব সাইটেশনের ভিত্তিতেই তিনি ২০২২ সালে ‘ওয়ার্ল্ড সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাংকিং’-এ শেকৃবির সেরা গবেষক এবং ২০২৩ সালে বাংলাদেশের তৃতীয় সেরা গবেষক হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তবে অভিযোগ ওঠার পর তার নাম আর সে তালিকায় পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক বেলাল বলেন, র‍্যাংকিং নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ নেই। আমি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করি। নাম একইরকম হওয়ায় অন্যদেরও কিছু পেপার আমার প্রোফাইলে যুক্ত হয়েছে। এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। আমার দুটি প্রোফাইল ছিল, এর মধ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেইল দিয়ে; অন্যটি পিএইচডির সময়কার ইমেইল দিয়ে তৈরি করা।

তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ওই র‍্যাংকিংয়ে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের গবেষকদের মধ্যে ৩য় স্থান অর্জন করায় তিনি স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি দেশসেরা গবেষকের তালিকায় আসার ব্যাপারটি স্বীকার করেন। আবার তার একাধিক প্রোফাইলের ইমেইল দুটি নয়; বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেইলই দুই জায়গায় ব্যবহার করেছেন। তাকে একাধিকবার তার বিভাগ থেকে এগুলো সংশোধনের জন্য বলা হলেও তিনি গুরুত্ব দেননি। এছাড়া তার একাডেমিক সিভির সম্মাননা অংশেও র‍্যাংকিং আসার ভুয়া তথ্যগুলো যুক্ত রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ গবেষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গবেষক নিজ থেকে এসব গবেষণা প্রবন্ধ যুক্ত না করলে তার প্রোফাইলে যুক্ত হতো না। তার নিজস্ব সাইটেশন ৩০০-এর মতো। সেই জায়গায় প্রায় ১৩ হাজার সাইটেশন যুক্ত করা কোনো অনিচ্ছাকৃত কাজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেইল দিয়ে আইডি ভেরিফাই না হলে সাইটেশন যুক্ত হয় না। সাইটেশন জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে গুগল স্কলার এসব গবেষককে লাল তালিকাভুক্ত করে।

এছাড়া ২০২৪ সালে প্রসিদ্ধ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উইলি-হিন্দাউইর বায়োমেড রিসার্চ ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে তার প্রকাশিত তিনটি গবেষণা প্রবন্ধ তথ্য জালিয়াতির কারণে বাতিল হয়। তিনটি গবেষণাই সম্পূর্ণ পৃথক বিশেষায়িত শাখার। এদের কোনোটি বন্যপ্রাণী নিয়ে, কোনোটি ফার্মাসিউটিক্যালস নিয়ে, আবার কোনোটি ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে রচিত প্রবন্ধ। এসব গবেষণা প্রবন্ধের করেসপন্ডিং অথরিটি (নেতৃত্বদানকারী লেখক) তিনি নিজে। উদ্ভিদ রোগতত্ত্ববিদ ড. বেলালের একইসঙ্গে এত গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়া একাডেমিক বিশেষজ্ঞরা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন। যদিও জিজ্ঞেস করলে তিনি বাতিল হওয়া প্রবন্ধের বিষয়ে অস্বীকার করেন।

বাতিল হওয়া এসব প্রবন্ধ এবং প্রকাশকের মন্তব্য যাচাই করে দেখা গেছে, গবেষণা সততা-যাচাই দল লেখকের কাছে ডেটার উৎস, মূল তথ্য, পরীক্ষার ফলাফল এবং প্রমাণপত্র চাইলে পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

এতে তার ভুল তথ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি গবেষণা যাচাইয়ে অনিয়মের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে একই অভিযোগে এক সহকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সুস্পষ্ট কিছু লেখা না থাকায় তাকে মৌখিকভাবে তিরস্কার করা ছাড়া কিছুই করা হয়নি। একই ঘটনা উপ-উপাচার্যের ক্ষেত্রে ঘটবে কি না বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ সরাসরি উত্তর দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘এটা তো মাত্র জানলাম। দেখি কি করা যায়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক বলেন, এসব ব্যক্তির কারণে বাংলাদেশি গবেষণা জগৎ এক কঠিন বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে। এসব জালিয়াতি এবং রিট্র্যাকশন শুধু তার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চপদের ব্যক্তিদের গবেষণা নৈতিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেনি; পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের মানও ক্ষুণ্ণ করেছে। পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সংকটের আরো একটি উদাহরণ সামনে এনেছে। বিশ্ববিদ্যালয় বা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে—সেটি এখন দেখার বিষয়।

নির্ধারিত সময়ে ‎ব্রাকসু নির্বাচনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

জালিয়াতি করে নিয়োগ, আওয়ামীপন্থি শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ

জবিতে ভর্তি আবেদনের সময় ২ দিন বাড়ল

যথাসময়ে জকসু নির্বাচন না হলে প্রশাসনকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে: ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান

আন্তর্জাতিক আদালতে সীমান্ত হত্যার বিচারের আহ্বান ডাকসুর

ডেঙ্গুতে আরো ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৯০

জকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ স্থগিত

২৮ ডিসেম্বর খুলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জানুয়ারি থেকে পরীক্ষা শুরু

আবাসিক হলগুলোয় মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, উদাসীন প্রশাসন

ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক কর্তৃক শহীদের সংখ্যা বিকৃতির অভিযোগ ছাত্রশক্তির