হোম > জুলাই বিপ্লব

‘মার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণা, হামলায় নিহত শতাধিক

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব

আবু সুফিয়ান

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট অগ্নিগর্ভ ছিল সারা দেশ। কর্মসূচি ঠেকাতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার অনুগত বাহিনী নির্মমভাবে দমন-পীড়ন চালায়। এতে শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন সাধারণ মানুষ। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর বর্বর লাঠিচার্জ, গুলি বর্ষণ ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার সরকারের অমানবিক চরিত্র উন্মোচন করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক হিসেবে ঘোষণা করা হয় ‘মার্চ টু ঢাকা’।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব অঞ্চলে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসীরা ছাত্র ও জনতার ওপর নৃশংস হামলা চালায়। সংঘর্ষে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে একজন পুলিশ সদস্য প্রাণ হারান। আহত হন শত শত বিক্ষোভকারী। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে লাঠিসোঁটা, পিস্তল, শটগান, বন্দুকসহ আগ্নেয়াস্ত্র ছিল, যেখানে আন্দোলনকারীরা ছিলেন লাঠিসোঁটা নিয়ে।

ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নির্মম হামলা চালিয়ে আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও ছররা গুলি ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলেও, গণজাগরণ থামেনি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে কারফিউ জারির পরেও রাত ১০টা পর্যন্ত অনেক জায়গায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। ৫০টির বেশি জেলায় ব্যাপক সহিংসতা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।

শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলনে রাজধানীসহ সারা দেশে বাস ও ট্রেনসহ গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের বাড়ি, পুলিশের থানা, কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। চাঁদপুর, বরিশাল, দিনাজপুরসহ ৩৮টির বেশি জেলায় এসব হামলার খবর পাওয়া যায়।

২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন পুলিশের সহিংসতার পর জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে। এই গণঅভ্যুত্থান রক্তের বিনিময়ে দমন করে শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থা দেশের তরুণ-যুবকদের মৌলিক দাবিকে চরম অবজ্ঞা করে।

রাজধানীতে আটজন নিহত

৪ আগস্ট সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরকার ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও হামলা চালিয়ে গণতন্ত্রকে রক্তাক্ত করেছিল। সরকারপন্থী পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলি ছুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করে। আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল ও লাঠি হাতে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিল।

দিনভর সংঘর্ষে শাহবাগ, ধানমন্ডি, পল্টন, সায়েন্স ল্যাব, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা রক্তাক্ত হয়। আহত হয় ২২২ জন, ৬৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও খিলগাঁওয়ে গুলিবিদ্ধ কমপক্ষে ২২ জন চিকিৎসাধীন ছিল।

শাহবাগ মোড় ছিল বিক্ষোভকারীদের প্রধান কেন্দ্র। সেখানে গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয়। বাংলামোটর ও আশপাশের পুলিশ বক্স এবং কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে হামলা চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।

উত্তরায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলির শব্দ শোনা যায়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের গুলির আঘাতে বিক্ষোভকারীরা ব্যাপকভাবে আহত হন। রাত পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে।

মিরপুরে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গুলি চালিয়ে পরে এলাকা ছেড়ে যায়। ধানমন্ডিতে একটি পোশাক ব্র্যান্ডের শোরুমে আগুন দেওয়া হয়। রামপুরা ও বাড্ডায় শিক্ষার্থী-সাধারণ মানুষ সকাল থেকে বিক্ষোভ চালান। পুরান ঢাকার রায়সাহেববাজার থেকে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বাহিনীর একটি গাড়িতে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা।

গণহত্যায় মেতে ওঠে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো

৪ আগস্ট সকাল থেকেই শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশনায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর বর্বর হামলা চালায়। দলীয় নীতিনির্ধারণী বৈঠকের পর দুই থেকে তিনদিন রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। দলের শীর্ষ নেতারা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি ওঠার পর আর ঘরে বসে থাকা সম্ভব নয় বলে ঘোষণা দেন।

আওয়ামী লীগের সদস্যরা লাঠি, রামদা, দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের দমন করতে মাঠে নেমে পুলিশকে সহযোগিতা করে। পুলিশও গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলি ছুড়ে জনতার বিরুদ্ধে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়।

আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক ধানমন্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘ধৈর্যের শেষ সীমায়’ পৌঁছেছে বলে ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনকারীদের ‘জঙ্গিগোষ্ঠী’ আখ্যায়িত করে সব সহিংসতার দায় তাদের উপর চাপিয়ে দেন।

একদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০টি উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হয়। ১৩টি স্থানে মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের বাসভবনে হামলা হয়। কুষ্টিয়া, চাঁদপুর, বরিশাল, দিনাজপুর, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, লক্ষ্মীপুর, বগুড়া, খুলনাসহ অন্তত ৩৯ জেলায় এসব ঘটনা ঘটে।

সরকার মোবাইল ইন্টারনেট, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে জনসংযোগ বিচ্ছিন্নের চেষ্টা করেছিল।

৪ আগস্টের নৃশংস দমন প্রমাণ করেছে শেখ হাসিনার সরকার গণতান্ত্রিক অধিকার ও শান্তিপূর্ণ দাবিকে লাঠি, গুলি ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনায় রয়েছিল। এই বর্বরতা দেশের যুবসমাজের ওপর এক নির্মম আঘাত ও গণতন্ত্রের জন্য ভয়ঙ্কর সংকেত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

‘মার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণা

হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন ছাত্র সমন্বয়করা। তারা প্রথমে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাক’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। সেটি বাস্তবায়নে সারাদেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানানো হয়।

কিন্তু অসহযোগ আন্দোলনে ব্যাপকসংখ্যক মানুষ নিহত এবং সরকারদলীয় কর্মী ও পুলিশের যৌথ দমন অভিযানের কারণে এ কর্মসূচি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট পুনঃনির্ধারণ করা হয়।

রাজধানীর শাহবাগে বিকাল ৩টার দিকে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের দলীয় ক্যাডারদের রাস্তায় নামিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও গন্তব্য এক- বিজয় ছাড়া কিছু নয়। আমরা এখনো সময় দিচ্ছি। সরকার যদি সহিংসতা চালিয়ে যেতে থাকে, আমরা জানিয়ে দিতে চাই, আমরা গণভবনের দিকে তাকিয়ে আছি।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যদি আমার ভাইদের বুকে গুলি করা হয়, যদি আমার বোনেরা আর আহত হয়, তাহলে আমরা চুপ করে বসে থাকব না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলুন। যেখানেই আঘাত আসবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’

সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তিনি শিক্ষার্থীদের শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

বিকেএসপিতে জুলাই বিপ্লবে আহত যোদ্ধাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের সনদ প্রদান

দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর চায় শহীদ শিশুদের পরিবার

বাবুগঞ্জে ৩ শহীদ পরিবারের প্রতিক্রিয়া, ‘রায় ঘোষণা নয়, দ্রুত কার্যকর চাই’

জুলাই যোদ্ধাকে বাদী সাজিয়ে বানোয়াট মামলা

অর্থাভাবে অপারেশন করাতে পারছেন না জসিম

মাদরাসা ও সংসার হারিয়ে দিশেহারা জুলাইযোদ্ধা শফিকুর

গুলি খেয়ে কাতরাচ্ছিলেন তাইম, দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিল পুলিশ

স্বামী হত্যাকারীদের ফাঁসি চান শহীদ মিজানুর রহমানের স্ত্রী

টিয়ারশেলের স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন রাফি

অবহেলার শিকার শহীদ নুরুল মোস্তফার পরিবার