রংপুরের আবু সাঈদ ও চট্টগ্রামের ওয়াসিম আকরামের হত্যাকাণ্ড জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি করেছিল। ২০২৪ সালের আজকের দিনটিতে ওই নির্মম মৃত্যুর প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল সারা দেশ। রাজপথে পুলিশের গুলিবর্ষণে নির্মম হত্যার শিকার হন আবু সাঈদ। আর ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরাম রাজপথে মিছিল নিয়ে এগিয়ে গেলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ওই দিন হত্যার শিকার হন আরো চারজনসহ মোট ছয়জন। গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন শতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছিল।
ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে সংঘর্ষ এবং রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, সিলেটসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনভর বিক্ষোভ চলে। ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগকে হটিয়ে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দেশের সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
রংপুরে পুলিশের গুলিতে আজকের দিনে শহীদ হন আবু সাঈদ, যিনি কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। ওই ঘটনার ভিডিও ও ছবি সেদিন রাতেই সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
১৬ জুলাই ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে একটি পরিপত্র জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
একই দিন চট্টগ্রামের মুরাদপুরে গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরাম এবং আরো দুজন। রাজধানীতে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের সামনে সংঘর্ষে নিহত হন দুই আন্দোলনকারী। আহত হন অনেকে। রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, পাবনা, সিলেট, দিনাজপুরসহ দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হলরুমে আগুন, জাবিতে উপাচার্যের বাসভবনে পেট্রোলবোমা হামলা ও শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সাংবাদিকরাও হামলার শিকার হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয় ছাত্রলীগ।
আন্দোলনের আলোকবর্তিকা আবু সাঈদ
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ। সেদিন দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ ও গুলি করে। সেদিন আবু সাঈদের অবস্থান ছিল প্রথম সারিতে। তিনি দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়েছিলেন—ভিডিওতে সে দৃশ্য স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। ওই সময় পুলিশ তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। গুরুতর আহতাবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেলা ৩টা ৫ মিনিটের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তার বুকে প্রায় ১০-১৫ মিটার দূর থেকে শটগানভর্তি মেটাল প্যালেট দিয়ে দুবার গুলি করা হয়। ৪০–৫০টি মেটাল প্যালেট প্রবেশ করে ভেতরে রক্তক্ষরণ ঘটেছিল, যা মৃত্যুর প্রধান কারণ।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও বলছে, সার্জিক্যাল রাবার বুলেট চালানোর ফলে ইনার অর্গান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তক্ষরণ ঘটে এবং এটি পুলিশ কর্তৃক চালিত পরিকল্পিত গুলিতে ‘হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে চিহ্নিত।
সেদিন ছেলের মৃত্যুতে আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কখনো ছেলের রক্তমাখা জামা নিজের বুকে চেপে ধরে বিলাপ করছিলেন, কখনো চিৎকার করে বলছিলেনÑ‘আমার সোনারে মাইরা ফেললো রে! ও তো শুধু বইলাইতো… রাজনীতি করত না… ক্যান গুলি করল?’
মায়ের মুখে এমন আর্তনাদ শুনে উপস্থিত সাংবাদিকরাও সেদিন কেঁদেছিলেন।
বাবা মকবুল হোসেন ছেলের লাশের পাশে বসে নিথর চোখে তাকিয়েছিলেন। কোনো কথা বলছিলেন না। এক সময় কাঁপা গলায় বলেন, ‘আমার ছেলে রাজনীতি করত না। ও শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করত। আজ প্রতিবাদের গলায় গুলি চালালো।’
বড় ভাই রমজান আলী কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাঈদের লাশ নিতে যখন গিয়েছিলাম, হাসপাতালের বাইরে আমাদের দাঁড়াতে দেয়নি। এটা হত্যাকাণ্ড, বিচার চাই… বিচার চাই…।’
গ্রামে যখন আবু সাঈদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়, তখন গ্রামজুড়ে শোক নেমে আসে। নারীরা ঘর থেকে বেরিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ বলেন, ‘এমন সরল পোলারে মাইরা ফেলল! তার কী দোষ আছিল?’
দাফনের সময় স্থানীয় ইমাম আবেগ ধরে রাখতে না পেরে বলেন, ‘এটা শহীদের জানাজা। আল্লাহ এ শহীদকে কবুল করুন।’
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আবু সাঈদের লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজে নেওয়া হলে একপর্যায়ে মায়ের বুক ফেটে কান্না উঠে আসে—তিনি ছেলের মুখ চেপে ধরে বলছিলেন, ‘ওঠরে সাঈদ… তুই ওঠ! আমি তোরে বইলা যাইছি রে না যাইতে… আমার কথা শুইনিস না রে…।’
তার বড় ভাই রমজান আলী ১৮ জুলাই রংপুরে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৭ জনের নাম ও প্রায় ১৩০ থেকে ১৩৫ জন অজ্ঞাত আসামিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়, যেখানে সাব-ইন্সপেক্টর আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের কয়েকজনকেও অভিযুক্ত করা হয়।
আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আবু সাঈদ রক্তাক্ত এক নাম, যা এখন প্রতিরোধের প্রতীক। একটি প্রজন্মের ন্যায্য দাবি আদায়ের যুদ্ধে তিনি বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আবু সাঈদের মৃত্যু শুধু একটি প্রাণহানিই নয়, এটি রাষ্ট্রীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি জ্বলন্ত জবানবন্দি।
চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম
১৬ জুলাই ২০২৪। সরকারি চাকরিতে কোটা নামক বৈষম্যের প্রতিবাদে ক্ষোভে উত্তাল দেশ। আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে প্রতিহত করতে তখন পুলিশের সঙ্গে মাঠে নামে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সশস্ত্র হেলমেট বাহিনী। ওই দিন দুপুরেই রংপুরে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হন আবু সাঈদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসেন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ছাত্র-জনতা। ঘরে বসে থাকতে পারেননি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরামও। ফেসবুকে সহকর্মীদের ষোলশহর রেলস্টেশনে আসার আহ্বান জানিয়ে নিজেও রওনা দেন। কিন্তু স্টেশনে পৌঁছানোর আগেই চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী নুরুল আজিম রনিসহ তার ক্যাডারদের সামনে পড়েন ওয়াসিম। পুলিশ পাহারায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে দেশের দ্বিতীয় ও চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম।
সেদিন চট্টগ্রামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের তিন ঘণ্টার সংঘর্ষে ওয়াসিম ছাড়াও নিহত হন মো. ফারুক (৩২) এবং ফয়সাল আহমেদ (২০)। ফারুক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী এবং ফয়সাল এমইএস কলেজের স্নাতকের ছাত্র ছিলেন।
ওয়াসিম আকরাম কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বাজার পাড়ার শফি আলমের ছেলে। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে ওয়াসিম সেজো। বাবা ও বড় ভাই তিন বছর ধরে সৌদি আরবে থাকতেন। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট এক বোনকে নিয়ে মা থাকেন গ্রামের বাড়িতে। চট্টগ্রাম শহরের একটি মেসে থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্রদলের চট্টগ্রাম কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।
ভিসাসংক্রান্ত জটিলতায় সন্তানকে শেষ দেখাও দেখতে পারেননি ওয়াসিমের বাবা। ওয়াসিমের মৃত্যুর দেড় মাস পর দেশে ফেরেন তিনি। কাছাকাছি সময়ে আসেন বড় ভাইও। পরিবারের ছোট ছেলের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন দুজনই। বিদেশে আর ফিরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সন্তানের কবরের পাশে কাটে বাবার দিনরাত। ছোট ভাইয়ের মৃত্যুতে মন ভেঙে যাওয়ায় বড় ভাইও আর প্রবাসে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সম্প্রতি পেকুয়ায় ওয়াসিমের গ্রামের বাড়ি গিয়ে কথা হয় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ওয়াসিমের মা ঘরে থাকা ছেলের দুটি ছবি বাঁধিয়ে রেখেছেন। ঘরের দেয়ালে টাঙানো ছবি দুটির দিকে তাকিয়ে থেকেই দিন কাটে তার। মাঝে মধ্যে দেয়াল থেকে ছবিগুলো নামিয়ে আঁচল দিয়ে মুছে দেন পরম মমতায়, যাতে ধুলাবালি না লাগে। তিনি জানান, ছেলে চলে গেছে এক বছর হতে চলল। ফ্যাসিবাদী শাসনেরও অবসান হয়েছে প্রায় একই সময়। কিন্তু সন্তান হত্যার বিচার এখনো পাননি তিনি। সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা তার বাড়ি এসেছেন, সান্ত্বনা দিয়েছেন। কিন্তু বিচারের অগ্রগতি দৃশ্যমান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় ও মুরাদপুর থেকে মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন ওয়াসিম আকরাম। ১৫ জুলাই ষোলশহর রেলস্টেশনে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হন তিনি। পরদিন আহতাবস্থায়ই আন্দোলনে যোগ দিয়ে মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন। মূলত আগের দিন আহত হওয়ার কারণেই ছাত্রলীগের হামলা ঠিকমতো মোকাবিলা করতে পারেননি ওয়াসিম।
চানখাঁরপুলে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ, সারা দেশে রক্তাক্ত সংঘর্ষ
সেদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজধানীর চানখাঁরপুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এতে পাঁচ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন, আহত হন অন্তত ৩০ জন। হামলার নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর বিন আব্দুল আজিজ। তার সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের শতাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনার শুরু দুপুর ২টার দিকে, যখন শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য এলাকা থেকে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল নিয়ে চানখাঁরপুলের দিকে এগোচ্ছিলেন। হঠাৎ ছাত্রলীগের একটি সশস্ত্র দল তাদের ওপর হামলা চালায়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আশপাশে। একপর্যায়ে কাউন্সিলরের অনুসারীরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। সংঘর্ষ চলে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এ সময় শিক্ষার্থীদের অবস্থানে পুলিশ থাকলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমও ভূমিকা পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় । পরদিন আবার গায়েবানা জানাজা ও স্মরণ কর্মসূচির ডাক দেন তারা।
সারা দেশে বিক্ষোভে আওয়ামী লীগের সহিংসতা
চানখাঁরপুলের ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, নওগাঁ, দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, ফরিদপুরসহ অন্তত সাতটি জেলায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর হামলায় আহত হন শতাধিক শিক্ষার্থী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর পেট্রোলবোমা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়।
এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-আরিচা, খুলনা-যশোরসহ প্রায় সব মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গাজীপুরে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ মিছিল, বগুড়ায় বনানী-সাতমাথা সড়ক, ময়মনসিংহ টাউন হল, কুমিল্লা, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, রংপুর, নারায়ণগঞ্জÑপ্রতিটি শহরেই বিক্ষোভ হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সন্ধ্যায় রাজধানীসহ পাঁচটি শহরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করে সরকার। একই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ ছয় তরুণ শহীদের মৃত্যুই দেখিয়ে দেয়Ñএকটি প্রজন্ম যখন ন্যায়ের জন্য রাস্তায় নামে, তখন দমন-পীড়ন কোনো কাজেই আসে না। বরং তা বিক্ষোভকে বিস্ফোরণে পরিণত করে। এই রক্তাক্ত দিনটি বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায় হিসেবে যুক্ত হলো।