হোম > জুলাই বিপ্লব

আশ্রয়দাতার বাড়িতে গিয়ে খুন করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা

মাহমুদুল হাসান আশিক

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজশাহী নগরীতে শুরু হওয়া আন্দোলনে অংশ নেন মো. সাকিব আনজুম (২৮)। ৫ আগস্ট আন্দোলনের একপর্যায়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে কয়েকজন নারীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন সাকিব।

এ সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। তাকে একটি বাড়িতে নেওয়া হলে সেই বাড়িটি ঘেরাও করে সন্ত্রাসীরা। সেখানে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুলিবিদ্ধ সাকিবের মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে শুরু থেকেই ছিলেন মো. সাকিব আনজুম। ৫ আগস্ট কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজশাহীর তালাইমারি শহীদ মিনার এলাকার নিজ বাসা থেকে বের হন। দুপুর ১২টার দিকে তালাইমারি নর্দান মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট অভিমুখে যাওয়া আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার সঙ্গে যোগ দেন। আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের কাছাকাছি যেতেই ককটেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে থাকে পুলিশ।

তাদের সঙ্গে ছিল আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যুগপৎ আক্রমণে সে সময় কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান আন্দোলনকারীরা। এ সময় নারী শিক্ষার্থীসহ কিছু আন্দোলনকারী একটি গলিতে আশ্রয় নেন। সেখানে গিয়ে হামলা করে সন্ত্রাসীরা। তাদের কবল থেকে নারী শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে সামনে এগিয়ে যান সাকিব।

এ সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলি এসে লাগে সাকিবের বুকে। আন্দোলনকারীরা সাকিবকে নিয়ে পঞ্চবটির একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা খবর পেয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়িটি ঘেরাও করে। সেখানে সাকিবকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা।

এদিকে সাকিবদের আশ্রয় নেওয়া বাড়িটি সন্ত্রাসীরা ঘিরে রেখেছে জানতে পেরে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার একটি অংশ সেখানে এলে শুরু হয় সন্ত্রাসীদের মুহুর্মুহু গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ। কিন্তু ছাত্র-জনতা সামনে এগোতে থাকলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঘটনাস্থল। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে সেখানে আহত হন বিপুলসংখ্যক আন্দোলনকারী। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার তুমুল প্রতিরোধে সন্ত্রাসী বাহিনী পরাস্ত হয়ে পালিয়ে যায়।

সাকিবের বাবা ও স্বজনরা তার আহত হওয়ার খবর পেয়ে খুঁজতে থাকেন রাজশাহীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। বেলা সাড়ে ৩টার পর এক নিকটাত্মীয়কে একজন ফোন করে বলেন, ‘শাহ মখদুম কলেজের সামনে একটি লাশ পড়ে আছে, এসে একটু দেখে যাও।’ সেখানে গিয়ে স্বজনরা দেখেন সাকিবের রক্তমাখা নিথর দেহ পড়ে আছে। তার শরীরে একাধিক গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন।

বাবা মইনুল হক তার আদরের সন্তানের এমন নির্মম মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি ছেলের নিথর দেহ নিয়ে যান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা যখন জানালেন সাকিব শাহাদাতবরণ করেছেন, তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা। পরে রাজশাহী নগরের টিকাপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয় শহীদ মো. সাকিব আনজুমকে।

সাকিব কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বরেন্দ্র কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্নাতকোত্তর করার জন্য। এরই মাঝে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার ঘটনাটি সাকিবদের হৃদয়ে নাড়া দেয়।

তাই রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে শুরু করেন সাকিব। বড় ভাইয়ের আন্দোলনে সম্পৃক্ততা দেখে ছোট দুই ভাই মো. সজিব আনজুম (২৪) রাজশাহীতে ও আসিফ আনজুম (১৭) ঢাকার উত্তরায় আন্দোলনে অংশ নেন।

তিন ছেলে আন্দোলনে ছিলেন জানিয়ে সাকিবের বাবা মো. মাইনুল হক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ উৎখাত করতে গিয়ে এক সন্তান শহীদ হয়েছে। বাকি দুই সন্তান এখনও আছে। আবারও যদি দেশের প্রয়োজনে জীবন দিতে হয়, আমি আমার সন্তানদের নিয়ে প্রস্তুত আছি।’

বিকেএসপিতে জুলাই বিপ্লবে আহত যোদ্ধাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের সনদ প্রদান

দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর চায় শহীদ শিশুদের পরিবার

বাবুগঞ্জে ৩ শহীদ পরিবারের প্রতিক্রিয়া, ‘রায় ঘোষণা নয়, দ্রুত কার্যকর চাই’

জুলাই যোদ্ধাকে বাদী সাজিয়ে বানোয়াট মামলা

অর্থাভাবে অপারেশন করাতে পারছেন না জসিম

মাদরাসা ও সংসার হারিয়ে দিশেহারা জুলাইযোদ্ধা শফিকুর

গুলি খেয়ে কাতরাচ্ছিলেন তাইম, দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিল পুলিশ

স্বামী হত্যাকারীদের ফাঁসি চান শহীদ মিজানুর রহমানের স্ত্রী

টিয়ারশেলের স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন রাফি

অবহেলার শিকার শহীদ নুরুল মোস্তফার পরিবার