টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং হেলমেট বাহিনী তৈরি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদের দায়ে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাবেক এপিএস এএইচএম ফুয়াদের (৫২) প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।
মানিলন্ডারিং মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে আদালতের নির্দেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এই সম্পদ জব্দ করে। সোমবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান এসব তথ্য জানান।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের আদেশে ফুয়াদের মোট ৫ কোটি ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার ৫৮৬ টাকা মূল্যমানের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। জব্দকৃত এসব সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং ৩৮.৯৩৩ (আটত্রিশ দশমিক নয় তিন তিন) শতাংশ জমি।
সিআইডির অনুসন্ধানে ফুয়াদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মন্ত্রীর এপিএস থাকাকালীন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি ফরিদপুরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। অভিযোগ রয়েছে, ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে ফুয়াদ গড়ে তোলেন কুখ্যাত ‘হেলমেট বাহিনী’।
এই পেটুয়া বাহিনী ব্যবহার করে এলজিইডি, স্বাস্থ্য প্রকৌশল, শিক্ষা অধিদপ্তর, গণপূর্ত, বিএডিসি, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ এবং সড়ক ও জনপথসহ সরকারি প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের টেন্ডার প্রক্রিয়া তিনি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতেন। টেন্ডার থেকে নির্দিষ্ট হারে কমিশন আদায় এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হন।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ফুয়াদ কেবল নিজের কাছে রাখেননি, তা ছড়িয়ে দিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের নামেও। নিজের নামের বাইরে তিনি প্রথম স্ত্রী ফারজানা ফুয়াদ, দ্বিতীয় স্ত্রী তাসলিমা আক্তার বাবলী এবং দ্বিতীয় পক্ষের শাশুড়ি নাদিরা বেগমের নামে বহু জমি কিনেছেন। এসব সম্পত্তির দখলদারিত্ব বজায় রাখা হতো তার ভাই ও ভাগিনাদের মাধ্যমে। এছাড়া বেনামে বিলাসবহুল বাস কিনে পরিবহন খাতেও তিনি কালো টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে সিআইডি নিশ্চিত হয়েছে।
এসব অপরাধের প্রেক্ষিতে সিআইডি বাদী হয়ে গত ৩ আগস্ট ফরিদপুর কোতোয়ালী থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে (মামলা নং-১৩) মামলা দায়ের করে। বর্তমানে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মামলাটির তদন্ত পরিচালনা করছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন এবং এই চক্রের অপরাপর সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।