হোম > জাতীয়

সিভিল সার্ভিসকে গণমানুষের হতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার

সিভিল সার্ভিসকে সব ধরনের রাজনৈতিক তাঁবেদারি থেকে বেরিয়ে এসে গণমানুষের হতে হবে। এই সার্ভিস সম্পর্কে গত ১৭ বছরে মানুষের মধ্যে যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, সেই নেতিবাচকতা থেকে ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টের ছাত্র আন্দোলন আমাদের বেরিয়ে আসার এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিতে না পারলে ভবিষ্যতে এই সার্ভিস বিপন্ন হতে পারে। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে লেখা হবে নতুন ইতিহাস।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, “রাষ্ট্রটাকে ফ্র্যাজাইল (অস্থিতিশীল) করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করা হয়েছে। সিভিল সার্ভিস ‘মিসডিরেক্টেড’। এ বিষয়ে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। এটি সিভিল সার্ভিসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা পুরোনো পথে চলব, না কি নতুন পথ বেছে নেব?”

২০২৪ সালের আন্দোলনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আপনারা কি এমন আরেকটা উদাহরণ দিতে পারবেন যেখানে আন্দোলন করতে গিয়ে এত মানুষকে মরতে হয়েছে? এই তরুণরা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, কিভাবে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে হয়। আমাদেরকে এই তরুণদের কাছে থেকে শিক্ষা নিতে হবে কিন্তু আমরা কেউ সেই শিক্ষা নিতে চাই না । ২০১৮ সালের কিশোররা ২০২৪ সালে তরুণ হয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “প্রশাসন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যদি এই আন্দোলনের তাৎপর্য উপলব্ধি করে, তাহলে কাঠামো বদলের এই পদক্ষেপ কার্যকর হতে পারে। তা না হলে আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি। আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য একটি মহাসুযোগ। এখন প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর সরকারপন্থি হওয়ার কোনো চাপ নেই— সুতরাং এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে আমাদের পুরোনো ইমেজ ভেঙে নতুন ইমেজ তৈরি করার সময় এসেছে। আত্মসমালোচনার জায়গা তৈরি করতে হবে। গত ২০-২৫ বছর ধরে সিভিল সার্ভিসে ইমেজ উন্নয়নের জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমাদের দুর্নাম রয়েছে—সেখান থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।”

মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব ড. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের চোখের সামনে ২৮ লাখ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। আমরা জানি কারা করেছে, কিন্তু কিছু করতে পারিনি। আমাদের মানবাধিকার কমিশন আছে, কিন্তু ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের সময় এত মৃত্যু দেখেও তারা একটি প্রতিবাদ করেনি।”

তিনি আরও বলেন, “দুদক, অডিট, ১২টি ইন্সপেকশন ডিপার্টমেন্ট, ইডি, মিডিয়া, মাফিয়া, ব্যাংকিং মাফিয়া, স্বর্ণ চোরাচালান মাফিয়া—মানুষ এখন প্রশাসনকে বিশ্বাস করে না। অথচ আমরা ‘সার্ভেন্ট অব দ্য রিপাবলিক’। আমরা কোনো দলের সৈনিক নই। সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করতে পারি না, কিন্তু সত্য কথা বলতে পারি।”

“জনগণকে বোঝাতে হবে—আমি আপনার সেবার জন্য আছি। তারা যেন আর দেয়ালে দেয়ালে না লিখে, ‘এই সরকার আমাদের না’। সিভিল সার্ভিস হবে জনগণকেন্দ্রিক—এটি জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। প্রতিটি সেবা প্রার্থীর প্রত্যাশা থাকে, সে যেন সেবা পায়।”

মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি বলেন, “হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট কারা বানিয়েছে—এই দায় তো আপনারা (আমলারা) এড়াতে পারেন না। এত কঠিন পরীক্ষা দিয়ে আপনারা প্রশাসনে এসেছেন—আমাদের সেবা করার জন্য। কিন্তু এখন ৭১ এবং ২৪-কে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। ৭১ আমাদের পরিচয়, আর ২৪-এর আন্দোলন হয়েছে ৭১-কে মনে রেখেই। আমাদের হারানোর কিছু নেই।”

মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, “মুগ্ধ বা আমি—আমরা সরকারি চাকরির প্রতি আসক্ত ছিলাম না। মুগ্ধ আন্দোলনে গিয়েছিল দেশের তরুণদের কথা ভেবে। কিন্তু আমলাদের পক্ষ থেকেও আমাদের উপর চাপ ছিল, যেন মুগ্ধর মৃত্যুর বিষয়টা ‘মিট’ করে ফেলি, যেন গণভবনে যাই। কিন্তু আমরা যাইনি।”

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। মূল আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের সচিব ড. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, সাবেক সচিব এ.বি.এম. আব্দুস সাত্তার, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ লাসনা কবীর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাফিউল ইসলাম।

সেমিনারে বিশেষ আলোচক হিসেবে অংশ নেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ’র ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, আবু সাঈদের ভাই মো. রমজান আলী, মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি এবং শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খাতুন দীপ্তি।

অন্তরের অন্তস্তল থেকে হাদির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন: প্রধান উপদেষ্টা

জাতির উদ্দেশে ভাষণে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা

বিজয় দিবসে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শপথ নেয়ার আহ্বান হেফাজতের

ষড়যন্ত্রে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না: প্রধান উপদেষ্টা

জাতির উদ্দেশে ভাষণে যা যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা

নির্বাচনের প্রতিটি মুহূর্ত উৎসবমুখর করে রাখবে তরুণরা: প্রধান উপদেষ্টা

সন্ত্রাস ও রক্তপাত করে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে কেউ থামাতে পারবে না

জাতির উদ্দেশে ভাষণে হাদিকে নিয়ে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা

জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

হাদির অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন, মস্তিষ্কে অপারেশনের অপেক্ষায় ডাক্তাররা