হোম > মতামত

নাশকতা ও হাসিনার পুতুল খেলা

সৈয়দ আবদাল আহমদ

প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন। সামগ্রিক বিবেচনায় তার এই ভাষণটি হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ভাষণটি এমন একসময়ে দিতে যাচ্ছেন, যখন ভাষণের ঠিক আগে তার সরকারের কয়েকটি বড় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে তার সরকারের পতন ঘটাতে নানামুখী ষড়যন্ত্র ও নাশকতার কর্মকাণ্ড চলছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হবে ৮ আগস্ট। এক বছরের মাথায় এসে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কব্যবস্থা বাংলাদেশের সামনে বড় একটি দুশ্চিন্তার কারণ ছিল। এই পাল্টা শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশ তিন মাস ধরে এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটিয়েছে। এ ধরনের অনিশ্চয়তা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য খুবই কঠিন অবস্থার সৃষ্টি করে। সেই অবস্থার অবসান হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমিয়েছে। ফলে বাংলাদেশে স্বস্তি নেমে এসেছে। বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক শেষ পর্যন্ত ২০ শতাংশে নির্ধারিত হয়েছে। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় বলা হয়েছে, নতুন শুল্কহার ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্কহার ৩৭ শতাংশ ঘোষণা করেছিল। এরপর এটা ৩৫ শতাংশ করা হয়। চূড়ান্ত আলোচনায় সেই ৩৫ থেকে ১৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। শুল্ক নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান আলোচনার দরকষাকষিতে সফল হয়েছেন। দরকষাকষির পর পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর কথাও বলেছে বাংলাদেশ।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সাফল্যে খুশি হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের আলোচকরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে বাণিজ্য আলোচনায় অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা ও সেটাকে আরো এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবিচল প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছেন।’ তিনি বলেন, দরকষাকষির পর যে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, এটি ঐতিহাসিক। এটি আমাদের সুস্পষ্ট কূটনৈতিক সাফল্য।

পরাজিত শক্তি তথা আওয়ামী ব্যবসায়ীরা এই সাফল্য হোক, সেটা চাননি। চুক্তির আগে তাদের কথাবার্তাই এর প্রমাণ। বিশেষ করে ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদের বক্তব্যে মনে হয়েছে, ড. ইউনূস সরকার এ ক্ষেত্রে যেন ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশ সমূহ-বিপদে পড়তে যাচ্ছে। কিন্তু ইউনূস সরকার ও তার উপদেষ্টারা দেখিয়ে দিয়েছেন দেশের প্রতি তাদের আন্তরিকতা রয়েছে এবং তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েই ফয়সালা করেছেন। বাংলাদেশের সব ব্যবসায়ী এই সাফল্যে খুশি। বিজিএমইএ বলেছে, রপ্তানি খাতে এটি নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। বিকেএমইএ বলেছে, যেটুকু প্রত্যাশা করেছিলাম, প্রাপ্তি তার চেয়েও বেশি হয়েছে। এই সাফল্যের ফলে রপ্তানিকারকরা নতুন বাজার ধরতে উৎসাহিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের মানুষের কাছে অগ্রাধিকার হচ্ছে শেখ হাসিনা ও সহযোগীদের বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও একটি সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন করা। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে ইতিহাসসেরা সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার অন্তর্বর্তী সরকার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার শুরু হয়ে গেছে।

আগামী অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে এ ক্ষেত্রে দেশের মানুষ আদালত থেকে বিচারের রায় পেতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে। আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন, তারা বিচার কার্যক্রম সততা ও দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ তাদের অর্থসম্পদ দিয়ে কিনতে পারবেন না। কারো রক্তচক্ষুকেও তারা ভয় করেন না। বিচার কার্যক্রম থেকে কোনো শক্তি তাদের বিরত রাখতে পারবেন না। রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিসি) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা সব অপরাধের নিউক্লিয়াস। এর আগে ট্রাইব্যুনালে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বলেন, তিনি শেখ হাসিনাসহ আসামিদের আইনের সর্বোচ্চ সাজা চান। পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও এ মামলায় আসামি। পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন অপরাধের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন।

রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রেও বড় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সফল আলোচনা হয়েছে। প্রায় দুই মাস ধরে এ আলোচনা চলেছে। আলোচনার প্রথম দফায় ৬২টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়। দ্বিতীয় পর্বে মৌলিক সংস্কারের ক্ষেত্রে সব দল আটটি বিষয়ে পুরোপুরি একমত হয়েছে এবং ১০টি বিষয়ে ভিন্নমতসহ সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেসব বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে তা হলোÑসংসদীয় কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনি এলাকার সীমানা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমাসম্পর্কিত বিধান, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ এবং পুলিশ কমিশন গঠন। যেসব বিষয়ে ভিন্নমতসহ সিদ্ধান্ত হয়েছে তা হলোÑ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিধান সংবিধানে যুক্ত করা, নারী প্রতিনিধিত্ব, দ্বিকক্ষের সংসদ গঠন, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও উচ্চকক্ষের ক্ষমতা, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতির নিয়োগ কর্মে জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির বিষয়ে ঐকমত্য। তবে বিএনপি দুটি বিকল্প রাখার পক্ষে, যা তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে রাখবে।

‘জুলাই জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। জুলাই সনদে আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দলগুলোর পরামর্শ বা সংশোধনী নিয়ে সেগুলো সমন্বয় করে জুলাই সনদ খুব দ্রুত চূড়ান্ত হবে। এরপর জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করবে। তবে ‘জুলাই ঘোষণা’ কাল মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় ঘোষণা করা হবে শেরেবাংলা নগরের মহাসমাবেশে। এ জন্যই সারা দেশ থেকে আট জোড়া ট্রেনে করে ছাত্রদের ঢাকায় আনা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম জুলাই ঘোষণার কথা জানিয়েছেন।

ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে এগুলো ছাড়াও এক বছরের সাফল্যগুলো বিস্তারিতভাবে আসবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ভাষণে তিনি আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একটি নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে বড় একটি ঐকমত্য হচ্ছে, দুই মেয়াদ অর্থাৎ দশ বছরের বেশি কেউ দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে একটা ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে বলে অনেকেই মনে করেন। এ ছাড়া টেকসই গণতন্ত্রের ক্ষেত্রেও ওই জাতীয় ঐক্য এক বড় অগ্রগতি।

এসব অগ্রগতিতে পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা খুবই নাখোশ। তারা এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে ব্যর্থ এবং পারলে পতন ঘটানোর জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে। নাশকতার আলামত এরই প্রমাণ। ফ্যাসিস্টের দোসররা সচিবালয়ে যেমন তৎপর, তেমনি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীতেও তৎপর। ভারত থেকে পলাতক আওয়ামী নেতারা নানাভাবে মুরব্বিদের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছেন।

শেখ হাসিনার পুতুল খেলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনকালে রাষ্ট্রকে পুতুল খেলার বস্তুতে পরিণত করেছিলেন। তখন গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করে দেওয়া হয়। সুশাসন নির্বাসনে চলে যায়। বিচারব্যবস্থাকে ফ্যাসিবাদের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়। আর নির্বাচনব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

১/১১-এর সেনাসমর্থিত জরুরি সরকারটি ছিল প্রতিবেশী ভারতের ষড়যন্ত্রের অংশ। ভারতের পছন্দের দল আওয়ামী লীগকে যাতে ক্ষমতায় আনা যায়, সেই লক্ষ্য নিয়েই মঈন-ফখরুদ্দীনের সরকারটি করা হয়। শেখ হাসিনা বারবার উচ্চারণ করেছেন ১/১১-এর সরকারটি তার আন্দোলনের ফসল। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তার বইতে স্পষ্ট করে বলে গেছেন তারা কীভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা মিথ্যা হলফনামা দিয়ে সংসদ সদস্য হন। সংসদ সদস্যের প্রার্থিতায় তিনি অযোগ্য ছিলেন। তার এমপি পদ অবৈধ, তার প্রধানমন্ত্রিত্ব অবৈধ এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকারটিও ছিল অবৈধ। দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের তদন্তে এ বিষয়গুলো প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা এগুলোকে কোনো পরোয়াই করেননি। গায়ের জোরে ক্ষমতা চালিয়েছেন।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে ৫৭ জন চৌকস দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার মাধ্যমে তিনি সর্বস্তরে তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং অনুগত নির্বাচন কমিশন গঠন করে ২০১৪ সালে বিনাভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালে নিশিরাতের ভোট এবং ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন করেন। শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ গঠনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমাজের সর্বস্তরে বিভাজন তৈরি করে। তিনটি ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ আবির্ভূত হয় ভয়ংকর ফ্যাসিবাদী রূপে। দুর্নীতি হয় তাদের সুনীতি। খুন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেশে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে তাদের একক জমিদারির বাইরে কিছুই ভাবতেন না। পিলখানায় গণহত্যা, শাপলা চত্বরে হেফাজতের গণহত্যা, মাওলানা সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গণহত্যা, ফতোয়ার রায় নিয়ে প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণহত্যা, মোদিবিরোধী মিছিলে গণহত্যা এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান দমনে গণহত্যা সাক্ষী বাংলাদেশের মানুষ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমনে অন্যদের সঙ্গে তিনিও ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। কিন্তু বিচারের বৃহত্তম স্বার্থে তিনি রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করার অভিপ্রায় প্রকাশ করায় তাকে রাজসাক্ষী করেছে রাষ্ট্র। রাজসাক্ষী হওয়ার পর ১৬৪ ধারায় তিনি যে জবানবন্দি দেন, সেই জবানবন্দিতে শেখ হাসিনার নৃশংসতা, নির্মমতা এবং রাষ্ট্র নিয়ে তিনি কী ধরনের ছিনিমিনি খেলেছেন, তারই বিবরণ পাওয়া যায়।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জবানবন্দিতে বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সেই আন্দোলন দমনের জন্য কচি-কচি বাচ্চাকে গুলি করে মারার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। মারণাস্ত্র অর্থাৎ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন, হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করতে বলেছেন, ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আন্দোলনকারীদের দমন করতে বলেছেন। অন্যদিকে দলীয়ভাবে ওবায়দুল কাদের ও জাহাঙ্গীর কবীর নানককে নির্দেশ দেন তারা যেন ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী ক্যাডারদের আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করে।

ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে গত ২৪ মার্চ দেওয়া এই জবানবন্দিতে পুলিশের সাবেক আইজি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০২২ সাল থেকে তিনি পুলিশের আইজি ছিলেন। এর আগে র‌্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি জানান, শেখ হাসিনা কীভাবে ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোট করেছেন। বলেছেন, এই নিশিরাতের ভোটের পরামর্শ শেখ হাসিনাকে দিয়েছিলেন তৎকালীন আইজিপি ড. জাভেদ পাটোয়ারী। তিনি শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দেন আগের রাতেই যেন ৫০ শতাংশ সিলমারা ব্যালট দিয়ে বাক্স ভরে রাখা হয়। শেখ হাসিনা সেটাই করেন। এ ছাড়া শেখ হাসিনা বিভিন্ন বাহিনীর পছন্দের কর্মকর্তাদের দিয়ে গুম করেছেন, গোপন বন্দিশালা আয়নাঘর স্থাপন করেছেন এবং বিভিন্ন কৌশলে জুলাই আন্দোলন দমন করেছেন।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জবানবন্দিতে বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাবের তৎকালীন ব্যারিস্টার ডিজি হারুন অর রশিদের পরিকল্পনায় ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় হেলিকপ্টার ব্যবহার এবং অপারেশন পরিচালনা করা হয়। তিনি আরো জানান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাকে ডেকে নিয়ে বললেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। তাই গুলি চালাও। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও ডিপিপ্রধান হারুন মারণাস্ত্র দিয়ে গুলি চালাতে অতিউৎসাহী ছিলেন। নির্দেশনা পেয়ে তারা চায়নিজ রাইফেল ব্যবহার করে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন ছাত্র-জনতার ওপর। একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সহযোগিতায় ছাত্রলীগ দিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো হয়। আসাদুজ্জামান খান কামাল ডিবি হারুনকে ডাকতেন ‘জিন’। এই ‘জিন’ দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় নিয়মিত বৈঠক বসত। এটি অফিসিয়ালবহির্ভূত বৈঠক। এই বৈঠকে চিহ্নিত কিছু পুলিশ অফিসার, ওসি, ডিসি, এনটিএমসির মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, ডিজিএফআই, এনএসআইয়ের ডিজিসহ আওয়ামী ও শেখ হাসিনার আস্থাভাজন অফিসাররা থাকতেন। সেই বৈঠকেই নির্ধারিত হয়েছে দমন-পীড়ন কীভাবে চালাতে হবে। এক কথায় শেখ হাসিনার কাছে রাষ্ট্র ছিল এক পুতুল খেলা। তিনি যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই রাষ্ট্র নিয়ে পুতুল খেলা খেলেছেন। সারা দেশের মানুষ তাই তার বিচার কীভাবে হয় দেখার অপেক্ষায় আছে।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, আমার দেশ

abdal62@gmail.com

ইসলামে সময়ের গুরুত্ব

যুক্তরাষ্ট্র কি গাজায় সংঘাতে জড়াবে?

আস্থাহীন উদ্যোক্তা স্থবির কর্মসংস্থান

ভারতের প্রেসক্রিপশনে গোয়েন্দা সংস্থার অবক্ষয়

রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ন্যায়বিচারে যুগান্তকারী ঘটনা

বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং বাড়াতে যা প্রয়োজন

ইউক্যালিপটাস আকাশমণি ও সেগুনের কথা

আগামী সংসদ নির্বাচনে ভারত ফ্যাক্টর

নতুন নিরাপত্তা সমীকরণে ভারত

শিবিরের উত্থান : ছাত্ররাজনীতির নতুন চ্যালেঞ্জ