হোম > মতামত

পরিচয়ের রাজনীতি ও বাংলাদেশের বামপন্থা

ড. হাসান মাহমুদ

বাংলাদেশে প্রায়ই দেখা যায়, প্রগতিশীল রাজনীতি হিসেবে নিজেদের দাবি করা বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও দলগুলো জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নানা ইস্যুতে নানা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসে, সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সর্বজনীন মানবাধিকার এবং এ ধরনের ইস্যুতে সরব হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ইস্যুটিতে কোনোভাবে বাঙালি মুসলমানের সংশ্লিষ্টতা থাকলে, সেটিকে তারা প্রায় সবসময়ই এড়িয়ে যায় বা কৌশলী নীরবতা পালন করে। জনপরিসরে বামপন্থি রাজনীতির সর্বজনীনতার স্থলে এই পক্ষপাত এখন প্রায় দিবালোকের মতো পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, বাংলাদেশে বামপন্থিরা প্রায় সবসময়ই মুসলমান জনগোষ্ঠীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে নীরব থাকে। ফলে, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ জনসংখ্যার মুসলমানের মধ্যে বামপন্থার গ্রহণযোগ্যতা ক্রমাগত কমতে কমতে একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। প্রগতিশীল ও সর্বজনীন মানবাধিকারভিত্তিক রাজনীতির ধারক-বাহক হিসেবে সুপরিচিত বামপন্থিদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতায় কেন এমন দুর্গতি?Ñএই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বামপন্থার উত্থানপতনের দিকে লক্ষ করতে হবে।

হবসবমের তত্ত্ব : সর্বজনীনতার বাম রাজনীতি ও তার সংকট

এরিক হবসবম তার ১৯৯৬ সালের প্রবন্ধ ‘Identity Politics and the Left’-এ যুক্তি দিয়েছিলেন যে বাম রাজনীতির ঐতিহাসিক লক্ষ্য ছিল মূলত সর্বজনীন মুক্তি—অর্থাৎ সমগ্র মানবজাতির জন্য গণতন্ত্র, সমতা ও সামাজিক ন্যায়ের সংগ্রাম।

বামপন্থার জন্ম হয়েছিল এমন এক রাজনৈতিক কল্পনা থেকে, যেখানে মানুষকে শ্রেণি, জাতি, ধর্ম বা লিঙ্গের মতো বিভাজন অতিক্রম করে একটি বৃহত্তর মানবিক সংহতির মধ্যে যুক্ত করা যায়। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে, বিশেষ করে ১৯৬০-এর দশকের পর থেকে, হবসবম লক্ষ করেন যে বামপন্থা ধীরে ধীরে তার ঐক্যবদ্ধ সামাজিক ভিত্তি হারিয়ে ‘পরিচয় রাজনীতি’-এর দিকে সরে গেছে—যেখানে রাজনীতি সংগঠিত হয় জাতিগত, লিঙ্গভিত্তিক, যৌন বা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীগুলোর সীমিত স্বার্থের চারপাশে।

হবসবমের মতে, এই পরিবর্তন বাম রাজনীতির মূল শক্তিকে ক্ষয় করেছে। কারণ সর্বজনীনতা যেখানে সব মানুষের জন্য সমান মুক্তির স্বপ্ন বহন করে, সেখানে পরিচয় রাজনীতি সমাজকে ছোট ছোট গোষ্ঠীতে ভাগ করে দেয়, প্রত্যেকে নিজের স্বার্থে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ফলে বাম রাজনীতি আর একটি সমষ্টিগত আন্দোলন না হয়ে, হয়ে ওঠে অসংখ্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জোট, যাদের মধ্যে কোনো অভিন্ন উদ্দেশ্য বা মূল্যবোধ অবশিষ্ট থাকে না।

এই তত্ত্ব প্রয়োগ করে আমরা দেখতে পারি, সমসাময়িক বাংলাদেশের বাম রাজনীতিও প্রায় একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তার ঐতিহাসিক চরিত্র হারিয়েছে। যে বাম একসময় কৃষক-শ্রমিকের সর্বজনীন মুক্তির ভাষা বলত, আজ তা খণ্ডিত, সাংস্কৃতিকভাবে সীমাবদ্ধ এবং পরিচয়ভিত্তিক আন্দোলনের জটিলতায় জর্জরিত।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : শ্রেণিনির্ভর সর্বজনীনতা থেকে খণ্ডিত পরিচয় রাজনীতি

বাংলাদেশের বাম রাজনীতির সূচনা হয়েছিল ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে এবং শ্রেণিভিত্তিক শোষণবিরোধী সংগ্রামের মধ্যে। ১৯৪০-এর দশক থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত বামপন্থিরা কৃষক-শ্রমিক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, সাম্যবাদী রাজনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের মতো বৃহত্তর গণআন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এ সময়ের বাম রাজনীতি হবসবমের সংজ্ঞা অনুযায়ী সর্বজনীন ও সমষ্টিবাদী ছিল—তারা জাতি, ধর্ম, অঞ্চল বা লিঙ্গের পার্থক্যের ঊর্ধ্বে ওঠে ‘সমাজতান্ত্রিক মুক্তি’-এর এক যৌথ স্বপ্ন দেখেছিল।

ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধ, যদিও সাংস্কৃতিক ও জাতিগত উপাদান বহন করেছিল, তবু এগুলোর উদ্দেশ্য ছিল শুধু ‘পরিচয়ের স্বীকৃতি’ নয়, বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালের (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) ধারণা, যদিও একনায়কতান্ত্রিক বলে সমালোচিত, তবু এর মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতিকে একক সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচির অধীনে ঐক্যবদ্ধ করা—এক ধরনের জাতীয় সর্বজনীনতা, যা হবসবম প্রশংসা করতেন।

কিন্তু ১৯৭৫-এর পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসর দ্রুত পাল্টে যায়। সামরিক শাসন, বিশ্বব্যাপী নব্য উদারনৈতিক অর্থনীতি এবং পুঁজিবাদী বাজারব্যবস্থার প্রসার সমাজের শ্রেণিগত ভিত্তিকে দুর্বল করে ফেলে। ফলে বাম রাজনীতি তার ঐক্যবদ্ধ সংগঠন—শ্রমিক ইউনিয়ন, ছাত্র সংগঠন, কৃষক ফেডারেশন—সবকিছুতে ভাঙন দেখে। এই ভাঙনই জন্ম দেয় এমন এক বাম রাজনীতির, যা শ্রেণির বদলে ‘পরিচয়’-কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে।

বাংলাদেশের বাম রাজনীতিতে পরিচয় রাজনীতির রূপ

আজকের বাংলাদেশে বাম রাজনীতি একাধিক ছোট ছোট উপপরিচয়ে বিভক্ত—যেমন শহুরে ধর্মনিরপেক্ষ উদার বাম, পাহাড়ি বা আদিবাসী বাম, নারী ও পরিবেশভিত্তিক বাম, এনজিওকেন্দ্রিক মানবাধিকার বাম ইত্যাদি। এরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, কিন্তু হবসবমের ভাষায়, এরা ‘নিজেদের জন্য, নিজেদের মধ্যেই’ সীমাবদ্ধ—অর্থাৎ সর্বজনীন মুক্তির রাজনীতি নয়, বরং আত্মপরিচয়ের রাজনীতি।

ক. সাংস্কৃতিক ধর্মনিরপেক্ষতা একটি ‘পরিচয়’ হিসেবে

বাংলাদেশের নগরভিত্তিক বুদ্ধিজীবী বামপন্থিরা এখন প্রায়ই তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে সংজ্ঞায়িত করে ধর্মনিরপেক্ষতা-এর মাধ্যমে। ধর্মনিরপেক্ষতা একসময় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনের নীতি ছিল; এখন তা পরিণত হয়েছে এক ধরনের সাংস্কৃতিক পরিচয়চিহ্নে—যেখানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হওয়া মানে ‘উন্নত’ ও ‘আধুনিক’ হওয়া আর ধর্মানুগ জনগণকে দেখা হয় পশ্চাৎপদ হিসেবে।

ফলে ধর্মনিরপেক্ষ বাম ও গ্রামীণ ধর্মবিশ্বাসী জনগণের মধ্যে একটি গভীর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। হবসবমের মতে, এটি সেই একই প্রবণতা যেখানে বাম রাজনীতি সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংহতি হারিয়ে ‘উচ্চবিত্ত নৈতিকতার’ প্রতীক হয়ে পড়ে। সর্বজনীন সংহতির পরিবর্তে এটি তৈরি করে সাংস্কৃতিক বিভাজন।

খ. আঞ্চলিক ও জাতিগত বাম রাজনীতির উত্থান

চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলের (CHT) বাম রাজনীতি একসময় শ্রেণিভিত্তিক সমাজ পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা বহন করত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ি আন্দোলনটি ক্রমেই আদিবাসী বা জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রণের রাজনীতিতে রূপ নেয়।

যদিও তাদের সংগ্রাম ন্যায়সংগত, হবসবমের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বামপন্থার সর্বজনীন চরিত্রকে দুর্বল করে। কারণ, এখানে শ্রেণিভিত্তিক ঐক্যের পরিবর্তে এক নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর পরিচয়ই হয়ে ওঠে রাজনৈতিক কেন্দ্র। ফলে, সমগ্র বাংলাদেশের নিপীড়িত জনগণ একক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

গ. এনজিও ও লিঙ্গভিত্তিক বাম রাজনীতি

১৯৮০-এর পর থেকে বাংলাদেশে অনেক বামপন্থি কর্মী ও চিন্তাবিদ এনজিও এবং উন্নয়ন সংস্থায় যুক্ত হয়েছেন। সেখানে ‘রাজনীতি’ পরিণত হয়েছে ‘উন্নয়ন’ বা ‘ক্ষমতায়ন’-এর ভাষায়। নারী, পরিবেশ, মানবাধিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রের সংগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ হলেও, হবসবম যেমন বলেছিলেন, এগুলো প্রায়ই ছোট ও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং জনগণের সার্বিক মুক্তি বা অর্থনৈতিক কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে না।

ফলে বাম রাজনীতি পরিণত হয় পেশাদার ও প্রকল্পনির্ভর উদ্যোগে—যেখানে রাজনৈতিক সংগঠন নয়, বরং দাতা সংস্থার অগ্রাধিকারই নির্ধারণ করে কোন ইস্যু আলোচিত হবে। মুক্তির ভাষা প্রতিস্থাপিত হয় ‘ক্ষমতায়ন’-এর আমলাতান্ত্রিক শব্দে।

পরিচয়ের রাজনীতির পরিণতি : সর্বজনীন বৈধতা ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা

হবসবমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে বাম রাজনীতির তিনটি বড় ক্ষতি ঘটে, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা

বাংলাদেশের বাম রাজনীতি এখন আর কৃষক-শ্রমিক জনগণের বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। তাদের বক্তৃতা-লেখা-আন্দোলন মূলত নগর শিক্ষিত শ্রেণির বৃত্তে সীমিত। এই বিচ্ছিন্নতা হবসবমের ভাষায় ‘the Left without a people’—জনগণহীন বাম।

খণ্ডিত জোট রাজনীতি

নারীবাদী, পরিবেশবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, শ্রমিক বা পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো স্থায়ী ঐক্য নেই। তারা শুধু নির্দিষ্ট ইস্যুতে বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় একত্র হয়—যেমন হবসবম বলেছিলেন, ‘যুদ্ধকালীন অস্থায়ী জোটের মতো।’ ফলে এদের সংহতি টিকে না।

নৈতিকতা বনাম রাজনীতি

সমসাময়িক বাম রাজনীতি প্রায়ই নীতিগত অবস্থানকে কেন্দ্র করে নৈতিক আহ্বান তোলে—অন্যায়ের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়, কিন্তু রাজনৈতিক সংগঠন বা জনআন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনার শক্তি তৈরি করে না। এই প্রবণতা হবসবমের ভাষায় ‘moral protest replacing political mobilization’।

জাতীয়তা ও জনসমষ্টির ভাষা হারানো

যেমন হবসবম দেখিয়েছিলেন যে ব্রিটেনে থ্যাচার জাতীয়তাবাদী আবেগ দখল করে নিয়েছিলেন, তেমনি বাংলাদেশেও জাতীয়তাবাদ এখন ডানপন্থার দখলে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারকে ব্যবহার করে ‘জাতীয় পরিচয়’-এর প্রতীক তৈরি করেছে আর ইসলামি রাজনৈতিক শক্তি ধর্মীয় পরিচয়কে জাতীয় আত্মার প্রতিনিধিত্ব হিসেবে তুলে ধরেছে। বাম রাজনীতি এখানে কোনো বিকল্প ‘জনসমষ্টিগত জাতীয়তা’ (civic nationalism) গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে বামপন্থিরা জাতির রাজনৈতিক কল্পনা থেকে ক্রমেই বাদ পড়ে গেছে।

পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা : নতুন সর্বজনীনতার সন্ধান

যদি হবসবম আজ বাংলাদেশের বাম রাজনীতি বিশ্লেষণ করতেন, তিনি সম্ভবত বলতেন যে এখন সময় এসেছে বাম রাজনীতির সর্বজনীন চরিত্র পুনরুদ্ধারের। তার দৃষ্টিতে, শ্রেণি-সংগ্রামের পুরোনো কাঠামো হয়তো আজকের সমাজে পুরোপুরি কার্যকর নয়, কিন্তু বাম রাজনীতি আবার জনগণের সাধারণ স্বার্থ-এর ভাষায় ফিরতে পারে।

এর মানে হলো—

  • ধর্মনিরপেক্ষতা ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের সংযোগ স্থাপন করা, যাতে ধর্মনিরপেক্ষতা কোনো এলিট সাংস্কৃতিক পরিচয় না হয়ে, সাধারণ মানুষের জীবনের বাস্তব মুক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়।
  • নারী ও সংখ্যালঘু অধিকারের রাজনীতিকে আলাদা প্রকল্প না বানিয়ে, শ্রেণিবৈষম্য ও শোষণবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হিসেবে পুনর্গঠন করা।
  • জাতীয়তাবাদের পুনর্নির্মাণ—জাতিকে কোনো জাতিগত বা ধর্মীয় সত্তা নয়, বরং নাগরিক সংহতির ভিত্তিতে কল্পনা করা, যাতে প্রত্যেক বাংলাদেশি সমান মর্যাদায় রাষ্ট্রের অংশ হতে পারে।

এ ধরনের নাগরিক বা গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদই হতে পারে হবসবমীয় অর্থে এমন এক ‘সামষ্টিক পরিচয়’, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রগতিশীল। এতে বাম রাজনীতি আবার জনগণের প্রতিনিধি হতে পারে—‘সবাইয়ের জন্য’ রাজনীতি, ‘কিছুজনের জন্য’ নয়।

হবসবমের সতর্কবাণী ও বাংলাদেশের বাস্তবতা

হবসবম তিন দশক আগে যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন, তা আজ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আশ্চর্যভাবে সত্য প্রতীয়মান হয়।

বাংলাদেশের বাম রাজনীতি একসময় কৃষক-শ্রমিকের মুক্তির আন্দোলনের প্রতীক ছিল; আজ তা হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক প্রতীকের রাজনীতি, যেখানে সংগঠন নয়, বরং ব্যক্তিগত অবস্থানই রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তি। ধর্মনিরপেক্ষতা, নারীবাদ, মানবাধিকার—এসব গুরুত্বপূর্ণ হলেও, যখন এগুলো সমাজের সামগ্রিক মুক্তির পরিবর্তে নিজস্ব গোষ্ঠীচেতনার প্রকাশে সীমিত থাকে, তখন বাম রাজনীতি তার ঐতিহাসিক লক্ষ্য হারায়।

ফলে বাংলাদেশের বামপন্থা আজ এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে তার আছে আদর্শিক নৈতিকতা, কিন্তু নেই জনভিত্তি; আছে অভিজাত বুদ্ধিবৃত্তিক বক্তব্য, কিন্তু নেই সংগঠিত জনগণ। হবসবম যেমন বলেছিলেন, ‘If there is no people, but only peoples, there is no Left’—অর্থাৎ যখন জনগণ ভেঙে যায় অসংখ্য গোষ্ঠীতে, তখন প্রকৃত বাম রাজনীতি বিলুপ্ত হয়।

বাংলাদেশের বাম রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে এই প্রশ্নের উত্তরে—তারা কি আবার সেই সর্বজনীন ভাষায় ফিরতে পারবে, যেখানে শ্রমিকের মজুরি, কৃষকের জমি, নারীর মর্যাদা, সংখ্যালঘুর অধিকার এবং নাগরিকের মর্যাদা একই সংগ্রামের অংশ? যদি পারে, তবে বাম রাজনীতি আবার জনগণের কণ্ঠ হতে পারে। না পারলে, হবসবমের মতোই আমরা বলতে বাধ্য হব—এটি আর বাম নয়, এটি শুধু একদল বিচ্ছিন্ন পরিচয়গোষ্ঠীর জোট, যাদের কোনো ‘জনগণ’ নেই।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থওয়ের্স্টান বিশ্ববিদ্যালয় (কাতার)

প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও এনআইডি বিড়ম্বনা

‘নিরপেক্ষতা’র পক্ষ-বিপক্ষ

আমেরিকার ‘সফট পাওয়ার’কে ধ্বংস করছেন ট্রাম্প?

গণমাধ্যমে ইসলামবিদ্বেষ

জিয়ার প্রতিচ্ছবি থেকে ইউনূস এখন আইয়ুব-ইয়াহিয়া!

গাজা নিয়েও বিপদে ভারতীয় মুসলমান

বাম প্রগতিশীলতার মুখোশের আড়ালে

অজানা চাপ, দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তার রাজনীতি

আজাদ রহমান : বাংলা উচ্চাঙ্গসংগীতের নবধারার স্রষ্টা

রক্তের ঋণ বনাম ক্ষমতার উৎসব