স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি আবর্তিত হয়েছে রুশ-ভারত অক্ষশক্তির প্রভাব বলয়ের মধ্যে। শেখ মুজিবুর রহমানের তিন বছরের কম সময়ের শাসনে সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের ছিল না কোনো স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে দুই পরাশক্তির প্রতিযোগিতায় সোভিয়েত ব্লকের দিকে ঝুঁকে ছিল বাংলাদেশ। ফলে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ছিল অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। বাংলাদেশকে সে সময় দেখা হতো ভারতের স্যাটেলাইট রাষ্ট্র হিসেবে। শেখ হাসিনা তার দেড় দশকের শাসনে বাবার পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছেন। তার বাবা ভারতের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৭৪ সালে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন; কিন্তু হাসিনা সে সাহসটুকু দেখাতে পারেননি। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে ঘোষণা দিয়েছিলেনÑভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক হচ্ছে ‘স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্কের মতো! আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান নেতা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেনÑদিল্লি আছে তো আমরা আছি। দিল্লি আমাদের সঙ্গে থাকবে। হাসিনা নিজে জানান, তিনি ভারতকে এমন কিছু সুবিধা দিয়েছেনÑযা চিরদিন ভারত মনে রাখবে। একটি সরকারের নীতিনির্ধারকরা যখন প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য দেন, তখন সহজেই অনুমান করা যায় দেশটির পররাষ্ট্রনীতি কীভাবে আবর্তিত হতে পারে। বাস্তবতা হলো, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভারতের ইচ্ছার বাইরে বাংলাদেশের কোনো স্বাধীন ভূমিকা ছিল না।
বিদেশনীতি তো বটেই, হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও পুরোমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা সফরে এসে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে যেতে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। বিরোধী দলের বর্জন করা এই নির্বাচন যাতে এরশাদের দল বর্জন না করে, সেজন্য তিনি ঢাকা সফরে আসেন। এ ধরনের নগ্ন হস্তক্ষেপ থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কীভাবে পরিচালিত হবে তা নির্ধারণ করে দিত দিল্লি। এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গুম-খুনের সঙ্গে ভারতের সংশ্লিষ্টতার বহু অভিযোগ আছে। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ ও সুখরঞ্জন বালি গুমের সঙ্গে সরাসরি ভারতের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত।
হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে ভারত তার কৌশলগত স্বার্থ পূরণে বাংলাদেশকে ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি, যোগাযোগ ও প্রতিরক্ষার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে এক ধরনের ঔপনিবেশ স্থাপন করেছিল ভারত। নয়াদিল্লির কৌশল ছিল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করা। হাসিনার শাসনামলে চীনের সঙ্গে বড় কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও কৌশলগত দুটি প্রকল্প সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর ও তিস্তা প্রকল্পে ভারতের বাধার কারণে চীনের সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগে ভারত নীরব থেকেছে। এর কারণ ছিল এই সেতুর মাধ্যমে কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। এছাড়া এ ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগের সামর্থ্য ভারতের ছিল না।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের পর বাংলাদেশের ওপর ভারতের কর্তৃত্ব অনেকটাই হাতছাড়া হয়ে যায়। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটা খুবই স্পষ্ট ছিল যে, ভারতের সমর্থন নিয়ে হাসিনা কোনো ধরনের নির্বাচন ছাড়াই জোরপূর্বক ক্ষমতায় ছিল। ভারতের স্বার্থ পূরণের বিনিময়ে তাকে সব ধরনের সমর্থন দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিল ভারত। হাসিনার পতনের পরও বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে ভারতের নীতিতে কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি।
হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও পুরোমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা সফরে এসে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে যেতে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। বিরোধী দলের বর্জন করা এই নির্বাচন যাতে এরশাদের দল বর্জন না করে, সেজন্য তিনি ঢাকা সফরে আসেন। এ ধরনের নগ্ন হস্তক্ষেপ থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কীভাবে পরিচালিত হবে তা নির্ধারণ করে দিত দিল্লি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ ছিল ভারতের প্রভাব বলয়ের বাইরে এসে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণের চেষ্টা করা। ড. ইউনূস ভালোভাবেই জানেন হাসিনা পরিচালিত হতো দিল্লি থেকে। এ কারণে দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি ভারতকে প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন হাসিনা ভারতে থাকলেও তিনি যেন সেখান থেকে কোনো কথা না বলেন। একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করেন, বাংলাদেশে যে কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করলে তার প্রভাব উত্তর-পূর্ব ভারতসহ গোটা অঞ্চলে পড়তে পারে। এ সতর্কবার্তাটি জরুরি ছিল এ কারণে যে, জিয়াউর রহমানের সময় ভারত কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সীমান্তে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। এবারও যাতে ভারত এ ধরনের হঠকারি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে আমরা জিয়াউর রহমানের উত্থানের কিছু মিল খুঁজে পাই। সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্থান ঘটে জিয়াউর রহমানের। শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় শাসন কায়েমের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলেন। পরে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ তৈরি করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভিত্তি সৃষ্টি করেন। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমানের দুঃশাসনে দুর্বল ও ভঙ্গুর এক দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান। যে দেশ ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে সারা বিশ্বে পরিচিত হয়েছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর হতাশ এক জাতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে।
জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশের মানুষ যেন আত্মমর্যাদা ফিরে পেতে শুরু করে। এর প্রতিফলন ঘটে পররাষ্ট্রনীতিতে। রুশ- ভারত অক্ষশক্তির বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ অনুসরণ করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি। ১৯৭৭ সালের ১ আগস্ট জিয়াউর রহমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন হলো এই যে, বাংলাদেশ এখন তার জাতীয় স্বার্থে নিজেই নিজের স্বার্থ দেখা এবং স্বাধীনভাবে নীতি প্রণয়নের মতো অবস্থানে পৌঁছেছে।’
জিয়াউর রহমানের আমলে পররাষ্ট্রনীতিতে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসে চীন ও মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে। তিনি ভারতের প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে গুরুত্ব দেন। এ সময় গঙ্গার পানি প্রত্যাহার ও বাংলাদেশ সীমান্তে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলতে থাকে। চীন সরকার পানি প্রত্যাহার ও সীমান্ত ঘটনাবলি নিয়ে সরকারি নিন্দা জানায়। এ সময় বাংলাদেশে সেচ প্রকল্পে সহায়তা দিতে ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বরে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে। এর আগে নভেম্বরে জাতিসংঘে বাংলাদেশ ফারাক্কা ইস্যু উত্থাপন করলে চীন তাতে পূর্ণ সমর্থন জানায়।
এরপর ১৯৭৭ সালের ২-৬ জানুয়ারি জিয়াউর রহমান চীন সফরে যান। সফর শেষে ঢাকা ও পিকিং থেকে একযোগে যে যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়, তাতে বলা হয়Ñবাইরের হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ, জাতীয় স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতীয় অর্থনীতি বিকাশে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের অর্জিত বিরাট সাফল্যের কথা চীন সরকার এবং দেশটির জনগণ গভীর আনন্দের সঙ্গে উল্লেখ করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ন্যায়সংগত সংগ্রামের প্রতি চীনের সরকার ও জনগণ তাদের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে আমরা জিয়াউর রহমানের উত্থানের কিছু মিল খুঁজে পাই। সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্থান ঘটে জিয়াউর রহমানের। শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় শাসন কায়েমের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলেন। পরে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ তৈরি করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভিত্তি সৃষ্টি করেন।
চীনের পাশাপাশি জিয়াউর রহমান মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের পর সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশের একাধিক ট্রেড অ্যান্ড গুডউইল ডেলিগেশন বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশ সফর করে। ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে জিয়াউর রহমান নিজে সৌদি আরব সফরে যান।
পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি চীন ও মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পর্কের যে ভিত্তি রচনা করেন, তা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বাধীন ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়া অনুসরণ করেন। এমনকি হাসিনার প্রথম দফার শাসনামলে (১৯৯৬-২০০০) ভারতের চাপের মুখে এই নীতি অনুসরণের চেষ্টা করা হয়।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির যে ভিত্তি তৈরি করেন, তাতে বড় পরিবর্তন আসে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। এ সময় থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর ভারতের একধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী মন্তব্য করেন, তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এমন এক অবস্থানে নিতে চান, যেখান থেকে আর কখনো সে সম্পর্কে ফাটল ধরানো যাবে না। এ সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের ভারত সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ওপর ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা সম্পর্কে চার দশকের নীতির পরিবর্তন ঘটে।
কাকতালীয় দিক হলো, সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান যেমন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন, তেমনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসও গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেন। দুজেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুব পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার ও স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমান এ দেশের মানুষের কাছে ছিলেন সম্মান আর শ্রদ্ধার পাত্র। অপরদিকে ড. ইউনূস একমাত্র বাংলাদেশি নোবেল বিজয়ী এবং আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ হিসেবে এ দেশের মানুষের কাছে ছিলেন খুবই পরিচিত এক ব্যক্তি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসতে থাকে। জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির দিকে বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাধীন নীতি ভারত সরকারের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এর প্রতিফলন আমরা দেখছি ভারতের গণমাধ্যমে ইউনূস ও বাংলাদেশবিরোধী প্রচার থেকে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণের পর তার পররাষ্ট্রনীতির বড় দুটি সাফল্য হচ্ছে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর এবং সম্প্রতি তার চীন সফর। জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর এমন এক সময় হয়, যখন বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের জন্য সাহায্য কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে আমেরিকায় ট্রাম্প প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই শঙ্কা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা আবারও বিশ্বের নজর কাড়ে। আমেরিকা সাহায্য অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলোরও সাহায্য অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে শুল্ক সমস্যা সমাধানে যে সাফল্য দেখিয়েছেন ড. ইউনূস, তা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের সঙ্গে চীনের কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। তার চীন সফরের কারণে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার আওতায় তিস্তা নদী প্রকল্পে চীন সম্পৃক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনায় জিয়াউর রহমান প্রথম চীনকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। চীনা কোম্পানিগুলো যদি বাংলাদেশে শিল্প-কারখানা স্থাপন শুরু করে, তাতে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা যায়।
এ সফরে আরেকটি দৃশ্যমান অগ্রগতি হলো মোংলা বন্দর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে চীনের সঙ্গে চুক্তি করা।
ড. ইউনূসের সরকার ভারতনির্ভর পররাষ্ট্রনীতির বাইরে এসে চীনের পাশাপাশি তুরস্ক ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। এ দুটি দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ একদিকে ইউরোপ থেকে ইউরো ফাইটার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে; একইসঙ্গে পাকিস্তান থেকে জেএফ-১৭ কেনার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া তুরস্ক থেকে ড্রোন ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হয়েছে। অর্থাৎ, পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা কৌশলে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নতুন আত্মচেতনার উন্মেষ ঘটাচ্ছে।
লেখক: সহযোগী সম্পাদক, আমার দেশ