গণসংহতি আন্দোলনের (জিএসএর) প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। পতিত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দেশি-বিদেশি দোসররা নৈরাজ্য তৈরি করে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের রুখে দেওয়ার জন্য জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে জিএসএর নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, তাসলিমা আখতার ও হাসান মারুফ রুমী গতকাল দিবাগত রাতে সংঘটিত হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানটের কার্যালয় পরিদর্শন করেন এবং বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন।
জিএসএর নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, শহীদ শরিফ ওসমান হাদি যখন ইতিবাচক ধারায় গণতান্ত্রিক পথে তার রাজনীতি বিনির্মাণ করছিলেন, তখন তিনি হামলার শিকার হলেন। নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জনগণের মধ্যে কাজের মাধ্যমে ওসমান হাদী মানুষের কাছে আপন হয়ে উঠেছিলেন। তার ওপর হামলা দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর আঘাত। অবিলম্বে তার হত্যাকারীদের গ্রেফতার, তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনাটা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দায়িত্ব ছিল। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর খবর যখন এলো, তখন দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে রেখে যাবতীয় হামলা ঠেকানোর দায়িত্ব ছিল তার। তাতে তিনি শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন, গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন, অবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
জিএসএর রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, এই হামলা বাংলাদেশের গণমাধ্যম, বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে আমরা আছি, তাকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই দঙ্গলবাজিকে প্রতিহত করতে হবে। প্রতিহিংসার রাজনীতিকে প্রতিহত করে সকলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
জিএসএর রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের সব দঙ্গলবাজির ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত রহস্যময় এবং নীরব। তাদের এই রহস্যজনক নীরবতা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং হতাশাব্যঞ্জক। এটি আমাদের স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, সরকার চায় গণমাধ্যম আতঙ্কে থাকুক এবং কথা না বলুক।
ফিরোজ আহমেদ আরও বলেন, গতকাল রাতে ছায়ানট, প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের মতো প্রতিষ্ঠানের ওপর ভয়াবহ আক্রমণ চালানো হয়েছে। শরিফ ওসমান হাদীর মৃত্যুর ঘটনায় সারা দেশের মানুষ শোকাহত ছিল এবং বিচার দাবি করছিল, কিন্তু সেই শোককে ছাপিয়ে একদল দঙ্গলবাজ পরিকল্পিতভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হামলা চালিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে যাদের এই হামলায় দেখা গেছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা কোনো প্রতিহিংসা চাই না, কিন্তু বাংলাদেশকে যারা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, তাদের কঠোর বিচার চাই।
ফিরোজ আহমেদ বলেন, এই ধরনের সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতা আগামী নির্বাচনকে একটি বড় হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। যারা শেখ হাসিনার কায়দায় আবারও বাংলাদেশকে বিভাজন করার চেষ্টা করছে এবং সহিংসতা উসকে দিচ্ছে, তাদের প্রতিহত করতে হবে। একদল উগ্র দঙ্গলবাজরা বাংলাদেশকে দখল করে নিয়েছিল। সরকারের কোন তৎপরতা আমরা দেখিনি। নূরুল কবীরের মতো মানুষকে কালকে দঙ্গলবাজদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তার মতো মানুষের ওপর হামলা থেকে বোঝা যায়, তারা কোনো নিরীহ ক্ষুব্ধ জনতা না, তারা একটা সংগঠিত অংশ। এই সংগঠিত অংশ কীভাবে সামনের দিনে বাংলাদেশকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে, সে বিষয়ে আমাদেরকে সতর্ক হওয়া দরকার।