সাকিব আল হাসান তার পারফরম্যান্সের মতো কথাবার্তায়ও প্রায় সময়ে আলোচনায় থাকতে পছন্দ করেন। সেই বেফাঁস মন্তব্য বা কথাবার্তা তাকে সমস্যায়-সংকটে ফেলেছে এমন নজিরও কম নয়। সর্বশেষ নিজের অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের প্রসঙ্গে তিনি সাকিব বলেছেন, ‘আমি জেনে শুনে কিছুটা ইচ্ছাকৃতভাবেই অবৈধ অ্যাকশনে বোলিং করেছি!’
একটি পডকাস্টে আলোচনা করার সময় সাকিব এই স্বীকারোক্তি দেন। ২০২৪ সালে ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব সারের হয়ে খেলার সময় সাকিব অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষেধাজ্ঞায় পড়েন। গত বছরের ডিসেম্বরে বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি তিনি। দুই দফায় এই পরীক্ষণে নেগেটিভ ফল আসে। অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য কাউন্টিতে নিষেধাজ্ঞায় পড়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাকিব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও নিষেধাজ্ঞায় পড়েন। সেই নিষেধাজ্ঞা পরে কাটিয়ে উঠলেও সাকির আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারেননি। রাজনৈতিক জটিলতায় পড়ে বাংলাদেশের হয়েও সাকিব গেল সেপ্টেম্বরের পর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাঠে নামতে পারেননি।
পডকাস্টে দীর্ঘ আলোচনায় সাকিব খোলামেলাভাবে এই অবৈধ বোলিং অ্যাকশন প্রসঙ্গে বলছিলেন, সারে কাউন্টির হয়ে সেই ম্যাচে আমি ৭০ ওভারের বেশি বোলিং করেছিলাম, আমার মনে হয় সেসময় আমি কিছুটা ইচ্ছেকৃতভাবেই অবৈধ অ্যাকশনে বোলিং করেছি। আমি আমার টেস্ট ক্যারিয়ারে কখনোই কোনো এক ম্যাচে ৭০ ওভারের মতো বোলিং করিনি। টনটনে সমারসেটের বিরুদ্ধে সারের হয়ে খেলা সেই চারদিনের ম্যাচে ৭০ ওভারের বেশি বোলিং করেছিলাম। ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম আমি। সেই ম্যাচের আগে আমি পাকিস্তানে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছিলাম। আমরা পাকিস্তানে সেই সিরিজ জিতেছিলাম। তারপর আমি সেখান থেকে সারে কাউন্টিতে চারদিনের ম্যাচ খেলতে যাই। লম্বা স্পেলে আমি বোলিং করার সময় শুধু ভাবছিলাম আম্পায়ার হয়তো বা আমাকে অন্তত (অবৈধ অ্যাকশনের প্রসঙ্গে) সতর্ক করতে পারেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। আর তার সেটা না করাটাও ছিল নিয়মের মধ্যে। তাই আমার কোনো অভিযোগ নেই। তারপর আমাকে বোলিং অ্যাকশনের জন্য পরীক্ষা দিতে হয়। সেই টেস্টে আমি ফেল করি। তারপর আমি আমার পরীক্ষার রিপোর্ট দেখি, তারপর বলি আচ্ছা ঠিক আছে-তাহলে এই জিনিস ঘটেছে। আমি তখন কয়েক সপ্তাহ অনুশীলন করার পর সারেতে ফিরি। সেখানে তারা আমাকে অনেক সহায়তা করে। আমি দুটো সেশন অনুশীলন করি। দেখলাম আমি স্বাভাবিক বোলিং অ্যাকশনে ফিরে এসেছি। আমার জন্য এটা এমন সহজই ছিল।’
সাকিব সারের হয়ে সেই ম্যাচে ৬৩.২ ওভার বোলিং করেছিলেন। প্রথম ইনিংসে ৩৩.৫ ওভার এবং দ্বিতীয় দফায় ২৯.৩ ওভার বোলিং করেছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনে ধরা পড়ার পর তাকে দুই দফা বোলিং শুদ্ধিকরণের জন্য পরীক্ষণে বসতে হয়। চেন্নাইয়ে দ্বিতীয় দফায় সেই বোলিং টেস্টে ফেল করার পর নির্বাচকরা তাকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে রাখেননি। তবে বিসিবি সে সময় জানিয়েছিল সাকিব শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে পারেন। কিন্তু নির্বাচকরা তাকে জাতীয় দলের জন্য আর বিবেচনায় আনেননি। আর চলতি আগস্টে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার জন্য ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বিসিবিকে জানিয়ে দেন সাকিবকে যেন জাতীয় দলের জন্য গণ্য না করা হয়।