এসএম আতাউর রহমান
সাজেককে বলা হয় মেঘের রাজ্য, কেউ বলেন মেঘের দেশ, আবার কেউ বলেন মেঘবালিকা। মেঘের সেই মায়াবী সাজেক এখন সেজেছে নতুন রূপে। মেঘের চাদরে মুড়িয়ে রেখেছে নিজেকে। মেঘে ঢাকা, কুয়াশা, হিমশীতল বাতাস, পাহাড় আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য এখানে মিলেমিশে একাকার। মেঘের ভেলায় ভাসা অন্যরকম এক স্বর্গীয় রাজ্যই সাজেক ভ্যালি। যে নামেই ডাকি না কেন তাতে সাজেকের রূপ-যৌবনে ভাটা পড়ে না।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বরফঢাকা উপত্যকাগুলো জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। বিশেষ করে ভারতের কাশ্মীর, সিমলা, মানালি কিংবা সিকিমের ইয়ামথাং ভ্যালির মতো উপত্যকা জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আমাদের দেশে বরফ পড়ে না। সে অর্থে উপত্যকাও কম। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি উপত্যকা সাজেক ভ্যালি। মাটির পাহাড় বেশি বৈচিত্র্যময়। তাই সাজেক ভ্যালি যেমন সবুজ তেমন যেন মেঘ-মোড়ানো কোনো উর্বশী। জনপ্রিয় এই ভ্রমণ গন্তব্যটি তাই অন্য সবার চেয়ে আলাদা। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত।
ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে সাজেক এখন অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। পাহাড় কখনো মানুষকে একেঘেয়ে করে না। তাই সাজেক বারবার পর্যটকদের হাতছানি দেয়। অগ্রণী ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার উদ্যোগে এবং শাখার মহাব্যবস্থাপক জাহানারা বেগমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কয়েকজন উদ্যমী নির্বাহী ও কর্মকর্তার নিরলস প্রচেষ্টায় সফলতা পায় আমাদের সাজেক ভ্রমণ।
এবারে সাজেকযাত্রা। চাকরিজীবনের ছন্দপতন ঘটিয়ে ক্ষণিকের জন্য আবার সেই আড্ডার জীবনে ফেরা। ভ্রমণের আনন্দ শুরু হয়ে যায় মূলত রাজধানী থেকে বাসে ওঠার পরই। দৈনিক বাংলার মোড় থেকে দুটি গ্রীনলাইন ভলভো বাসে উঠলাম প্রায় ৬০ জন। চলার মাঝপথে দু-চারজন উঠলাম বাসে। শুরু হলো আমাদের স্বস্তির যাত্রা।
১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত হওয়ায় ঢাকা থেকে বের হওয়ার সময় গাড়ির চাপ বেশি ছিল। ঢাকা থেকে বের হওয়ার জ্যাম ঠেলে চলতে থাকে আমাদের বাস। জমে ওঠে আমাদের গল্প-আড্ডা। একে একে সবাই বলতে থাকে জমানো কথা, সমবেত কণ্ঠে গান আর নাচ।
রাত দেড়টায় আমাদের বাস পৌঁছায় কুমিল্লা। সেখানে ২০ মিনিটের যাত্রাবিরতি। সবাই চা-পর্ব শেষ করে আবার গাড়িতে উঠে যাই। এ যাত্রায় কেউ ঘুমায়, কেউ নাচ-গানে মশগুল।
ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙে মূলত বাসের অস্বাভাবিক মুভমেন্টের কারণে। আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে চলার কারণে বাসের এমন মুভমেন্ট। বুঝতে পারলাম আমরা ঢুকে পড়েছি পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে। বাসের পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখে পড়ে খাগড়াছড়ির মূল আকর্ষণ পাহাড়। ছোট ছোট পাহাড় ভেদ করে সরু রাস্তায় ছুটে চলছে আমাদের গাড়ি। কিছুক্ষণ পর সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ আমরা পৌঁছে যাই খাগড়াছড়িতে। নেমে পড়ি সবাই। শীতের স্নিগ্ধ সকাল আর পাহাড়বেষ্টিত খাগড়াছড়ির নির্মল প্রকৃতি একটা অন্যরকম অনুভূতি জাগায়। সাজেক রাঙামাটি জেলায় হলেও যাওয়ার জন্য খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়াই প্রথম পছন্দ।
বাস থেকে নেমে গ্রামীণ আবহে গড়া সুন্দর রেস্টুরেন্টে নাস্তা সেরে নিই। এখান থেকেই ভাড়া করতে হয় সাজেক যাওয়ার অন্যতম বাহন চান্দের গাড়ি। বিভিন্ন প্যাকেজে পাওয়া যায় এই গাড়ি। আমাদের আগে থেকেই ভাড়া করা চান্দের গাড়ি যথাসময়ে উপস্থিত। চালকের ফোন পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে নেমে আসি সবাই। শহরের একটা হোটেলে আমাদের সাময়িকভাবে রুম নেওয়া ছিল। মূলত ফ্রেশ হওয়ার জন্য এই রুম নেওয়া। সব পর্যটকের জন্যই এই সুবিধা আছে।
এবার চান্দের গাড়িতে সাজেকযাত্রা
নাস্তা সেরে উঠে পড়ি চান্দের গাড়িতে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। বলতে গেলে প্রায় চার ঘণ্টার পথ। কিন্তু চার ঘণ্টায় সেখানে যাওয়া যায় না। একে তো পাহাড়ি উঁচুনিচু আঁকাবাঁকা পথ, তার ওপর কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে সাজেকযাত্রায়। খাগড়াছড়ি থেকে প্রথমে পৌঁছাতে হবে দিঘিনালায়। সেখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প আছে। মূলত সেনাবাহিনী পর্যটকদের নিরাপত্তায় দিনে দুবার পর্যটকদের গাড়ি সাজেকে পৌঁছে দেয়। সেনাবাহিনীর এসকর্ট দিনে দুবার ছাড়ে। প্রথমটি ছাড়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে (একটু কম-বেশি হতে পারে। দ্বিতীয়টি ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে। ৯টার মধ্যেই আমরা পৌঁছে যাই দিঘিনালা ক্যাম্পে। সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে তথ্য দিতে হয়। তথ্য দিয়ে সেখানে অপেক্ষা করতে থাকি। একে একে অন্য গাড়িগুলো চলে আসে। এরপর সকাল ১০টার কিছু সময় পর ছেড়ে দেয় এসকর্ট। দিঘিনালায় পাহাড়ি ফলমূল উপভোগ করলাম, যেমন পেঁপে, আনারস, কলা ইত্যাদি।
পাহাড়ি পথ বেয়ে চলে গাড়ির বহর। সবুজে ঘেরা পাহাড়ি রাস্তায় সে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। দুদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। এই অনেক ওপরে তো আবার অনেক নিচে। প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে থাকবেন আপনি। উঁচুনিচু পথে পরক্ষণেই চমকে উঠবেন। কিছু কিছু রাস্তা এত উঁচু যে ভয়ে চোখ বন্ধ রাখতে হয়। পথে পথে পাহাড়ি শিশুদের আতিথেয়তা অনেক ভালোলাগার বিষয়।
পাহাড়ি এই অঞ্চলে মানুষের ঘনবসতি নেই। কিছু দূর পরপর রাস্তার পাশে চোখে পড়ে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দাদের বাড়ি। এই রাজ্য শুধু তাদেরই। এখানে নেই কোলাহল নেই। লড়াই করে টিকে থাকাই এখানকার সহজ-সরল বাসিন্দাদের মুখ্য চিন্তা। তাদের জীবনযাপনে নেই কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া। পথে পথে পর্যটকদের দেখে চোখে-মুখে তৃপ্তির ভাষা ফুটে ওঠে। আর এখানকার ছোট ছোট শিশু হাত নেড়ে অভিবাদন জানায় পর্যটকদের। তাদের এই অভিবাদন জানানোর পেছনে ক্ষুদ্র কিছু প্রত্যাশা কাজ করে; আর তা হলো পর্যটকদের কাছ থেকে চকলেট-চিপসের মতো সামান্য উপহার পাওয়া। পর্যটকরাও তাদের হতাশ করেন না। পর্যটকদের উপহার পেয়ে তাদের খুশির যেন সীমা ধরে না। এভাবে পথের অ্যাডভেঞ্চার শেষ করে দুপুরে পৌঁছালাম সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাজেকে।
রোমাঞ্চকর রিসোর্ট
চান্দের গাড়ি থেকে নেমে সোজা চলে গেলাম আগে থেকে ঠিক করে রাখা সাজেকের সবচেয়ে নান্দনিক নাস্রাং রিসোর্টে। মোটামুটি আধুনিক সব সুযোগই রাখা হয়েছে এসব রিসোর্টে। রিসোর্টগুলো এমনভাবে বানানো যেখান থেকে উপভোগ করা যায় পুরো পাহাড়ের সৌন্দর্য। দুচোখ যতদূর যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। রিসোর্টের ঠান্ডা পানিতে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম দুপুরের খাবার খেতে। অবশ্য সাজেকে খাবার গ্রহণের ঘণ্টাখানেক আগে হোটেলে বলে রাখা ভালো, কারণ হোটেলগুলোয় বাড়তি খাবার করা হয় না। তবে আগে থেকে বলে আমাদের খাবার চুক্তি করা থাকায় কোনো অসুবিধা হয়নি। দুপুরের খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে নাস্রাং রিসোর্টে পাহাড়ের চূড়ায় মনোমুগ্ধকর গ্রামীণ হাঁড়িভাঙা ও ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ মিনিট পায়ে হাঁটার পথে সর্বোচ্চ কংলাকের চূড়ায় সবাই আরোহণ করলাম। চূড়ায় ওঠার সঙ্গী হিসেবে ১০ টাকায় ভাড়া করা বাঁশের লাঠি নেওয়া হয়েছে। সেখানে টক, ঝাল ও মিষ্টি চা উপভোগ করি এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা করি। এরপর সূর্যাস্ত দেখার জন্য সাজেক হ্যালিপ্যাডে যাই। সেখানে সূর্যাস্ত উপভোগ করি; বিন্নি ধানের চালের মালপোয়া, জিলাপি, বাঁশের পেঁয়াজু, পেঁপে, বাঁশের চোঙায় চা উপভোগ করি। তারপর সন্ধ্যা নেমে এলে সবাই রিসোর্টে ফিরে আসি। নাস্রাং রিসোর্টে পাহাড়ের চূড়ায় আমাদের আলোচনা, রেফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষে রাতের খাবার গ্রহণের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের প্রথম দিনের কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটে।
দ্বিতীয় দিন : মেঘের চাদরে মোড়ানো সাজেকের সকাল
সাজেকে যারা যাবেন, কখনোই ভোর মিস করবেন না। সাজেকের ভোর-সকালের সঙ্গে কোনোকিছুরই তুলনা চলে না। মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম ভোর সাড়ে ৫টায়। তবে পাহাড়ের ডাকে ঘুম ভাঙে তার আগেই। পাহাড় তার সৌন্দর্য দেখার জন্যই হয়তো কানে কানে বলে যায়—‘ওঠো হে পথিক, দেখো আমাকে।’ ঘুম-ঘুম চোখে দরজা খুলতেই হিমশীতল একরাশ বাতাস এসে ছুঁয়ে যায় শরীর, স্নিগ্ধ করে মন। বাইরে কুয়াশার চাদরে পাহাড়ের যেন নিজেকে লুকানোর চেষ্টা। কিন্তু পাহাড় পারে না তার সৌন্দর্য লুকাতে। কুয়াশা ভেদ করে চোখ খুঁজে নেয় তার সৌন্দর্য। সূর্যিমামার অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। চারদিকে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। সূর্যিমামা উঠে পড়ল। তার রক্তিম আলো পাহাড়ের গায়ে পড়তেই আড়মোড়া ভাঙে সবুজ পাহাড়, হেসে ওঠে সূর্যের সঙ্গে। নাস্রাং রিসোর্টে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সূর্যোদয় দেখতে দেখতে সেখানে কিছু ছবি তুলি। তারপর অনেকে মিলে মেঘের সঙ্গে মিতালি করতে করতে সাজেক হ্যালিপ্যাডের দিকে যাই। সেখানে গিয়ে মেঘ উপভোগ করতে করতেই হঠাৎ সাজেক ভ্যালিতে বৃষ্টি নেমে এলো। বৃষ্টি আর মেঘের অপরূপ প্রকৃতির ছোঁয়ায় সবাই এক অন্যরকম পরিবেশে হারিয়ে যাই। বৃষ্টি থামলে আমরা রিসোর্টে চলে আসি। সকালের নাস্তা সেরে সাজেককে বিদায় জানাই।
সাজেককে বলা হয় মেঘের রাজ্য, কেউ বলেন মেঘের দেশ, আবার কেউ বলেন মেঘবালিকা। মেঘের সেই মায়াবী সাজেক এখন সেজেছে নতুন রূপে। মেঘের চাদরে মুড়িয়ে রেখেছে নিজেকে। মেঘে ঢাকা, কুয়াশা, হিমশীতল বাতাস, পাহাড় আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য এখানে মিলেমিশে একাকার। মেঘের ভেলায় ভাসা অন্যরকম এক স্বর্গীয় রাজ্যই সাজেক ভ্যালি। যে নামেই ডাকি না কেন তাতে সাজেকের রূপ-যৌবনে ভাটা পড়ে না।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বরফঢাকা উপত্যকাগুলো জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। বিশেষ করে ভারতের কাশ্মীর, সিমলা, মানালি কিংবা সিকিমের ইয়ামথাং ভ্যালির মতো উপত্যকা জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আমাদের দেশে বরফ পড়ে না। সে অর্থে উপত্যকাও কম। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি উপত্যকা সাজেক ভ্যালি। মাটির পাহাড় বেশি বৈচিত্র্যময়। তাই সাজেক ভ্যালি যেমন সবুজ তেমন যেন মেঘ-মোড়ানো কোনো উর্বশী। জনপ্রিয় এই ভ্রমণ গন্তব্যটি তাই অন্য সবার চেয়ে আলাদা। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত।
ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে সাজেক এখন অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। পাহাড় কখনো মানুষকে একেঘেয়ে করে না। তাই সাজেক বারবার পর্যটকদের হাতছানি দেয়। অগ্রণী ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার উদ্যোগে এবং শাখার মহাব্যবস্থাপক জাহানারা বেগমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কয়েকজন উদ্যমী নির্বাহী ও কর্মকর্তার নিরলস প্রচেষ্টায় সফলতা পায় আমাদের সাজেক ভ্রমণ।
এবারে সাজেকযাত্রা। চাকরিজীবনের ছন্দপতন ঘটিয়ে ক্ষণিকের জন্য আবার সেই আড্ডার জীবনে ফেরা। ভ্রমণের আনন্দ শুরু হয়ে যায় মূলত রাজধানী থেকে বাসে ওঠার পরই। দৈনিক বাংলার মোড় থেকে দুটি গ্রীনলাইন ভলভো বাসে উঠলাম প্রায় ৬০ জন। চলার মাঝপথে দু-চারজন উঠলাম বাসে। শুরু হলো আমাদের স্বস্তির যাত্রা।
১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত হওয়ায় ঢাকা থেকে বের হওয়ার সময় গাড়ির চাপ বেশি ছিল। ঢাকা থেকে বের হওয়ার জ্যাম ঠেলে চলতে থাকে আমাদের বাস। জমে ওঠে আমাদের গল্প-আড্ডা। একে একে সবাই বলতে থাকে জমানো কথা, সমবেত কণ্ঠে গান আর নাচ।
রাত দেড়টায় আমাদের বাস পৌঁছায় কুমিল্লা। সেখানে ২০ মিনিটের যাত্রাবিরতি। সবাই চা-পর্ব শেষ করে আবার গাড়িতে উঠে যাই। এ যাত্রায় কেউ ঘুমায়, কেউ নাচ-গানে মশগুল।
ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙে মূলত বাসের অস্বাভাবিক মুভমেন্টের কারণে। আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে চলার কারণে বাসের এমন মুভমেন্ট। বুঝতে পারলাম আমরা ঢুকে পড়েছি পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে। বাসের পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখে পড়ে খাগড়াছড়ির মূল আকর্ষণ পাহাড়। ছোট ছোট পাহাড় ভেদ করে সরু রাস্তায় ছুটে চলছে আমাদের গাড়ি। কিছুক্ষণ পর সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ আমরা পৌঁছে যাই খাগড়াছড়িতে। নেমে পড়ি সবাই। শীতের স্নিগ্ধ সকাল আর পাহাড়বেষ্টিত খাগড়াছড়ির নির্মল প্রকৃতি একটা অন্যরকম অনুভূতি জাগায়। সাজেক রাঙামাটি জেলায় হলেও যাওয়ার জন্য খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়াই প্রথম পছন্দ।
বাস থেকে নেমে গ্রামীণ আবহে গড়া সুন্দর রেস্টুরেন্টে নাস্তা সেরে নিই। এখান থেকেই ভাড়া করতে হয় সাজেক যাওয়ার অন্যতম বাহন চান্দের গাড়ি। বিভিন্ন প্যাকেজে পাওয়া যায় এই গাড়ি। আমাদের আগে থেকেই ভাড়া করা চান্দের গাড়ি যথাসময়ে উপস্থিত। চালকের ফোন পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে নেমে আসি সবাই। শহরের একটা হোটেলে আমাদের সাময়িকভাবে রুম নেওয়া ছিল। মূলত ফ্রেশ হওয়ার জন্য এই রুম নেওয়া। সব পর্যটকের জন্যই এই সুবিধা আছে।
এবার চান্দের গাড়িতে সাজেকযাত্রা
নাস্তা সেরে উঠে পড়ি চান্দের গাড়িতে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। বলতে গেলে প্রায় চার ঘণ্টার পথ। কিন্তু চার ঘণ্টায় সেখানে যাওয়া যায় না। একে তো পাহাড়ি উঁচুনিচু আঁকাবাঁকা পথ, তার ওপর কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে সাজেকযাত্রায়। খাগড়াছড়ি থেকে প্রথমে পৌঁছাতে হবে দিঘিনালায়। সেখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প আছে। মূলত সেনাবাহিনী পর্যটকদের নিরাপত্তায় দিনে দুবার পর্যটকদের গাড়ি সাজেকে পৌঁছে দেয়। সেনাবাহিনীর এসকর্ট দিনে দুবার ছাড়ে। প্রথমটি ছাড়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে (একটু কম-বেশি হতে পারে। দ্বিতীয়টি ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে। ৯টার মধ্যেই আমরা পৌঁছে যাই দিঘিনালা ক্যাম্পে। সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে তথ্য দিতে হয়। তথ্য দিয়ে সেখানে অপেক্ষা করতে থাকি। একে একে অন্য গাড়িগুলো চলে আসে। এরপর সকাল ১০টার কিছু সময় পর ছেড়ে দেয় এসকর্ট। দিঘিনালায় পাহাড়ি ফলমূল উপভোগ করলাম, যেমন পেঁপে, আনারস, কলা ইত্যাদি।
পাহাড়ি পথ বেয়ে চলে গাড়ির বহর। সবুজে ঘেরা পাহাড়ি রাস্তায় সে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। দুদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। এই অনেক ওপরে তো আবার অনেক নিচে। প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে থাকবেন আপনি। উঁচুনিচু পথে পরক্ষণেই চমকে উঠবেন। কিছু কিছু রাস্তা এত উঁচু যে ভয়ে চোখ বন্ধ রাখতে হয়। পথে পথে পাহাড়ি শিশুদের আতিথেয়তা অনেক ভালোলাগার বিষয়।
পাহাড়ি এই অঞ্চলে মানুষের ঘনবসতি নেই। কিছু দূর পরপর রাস্তার পাশে চোখে পড়ে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দাদের বাড়ি। এই রাজ্য শুধু তাদেরই। এখানে নেই কোলাহল নেই। লড়াই করে টিকে থাকাই এখানকার সহজ-সরল বাসিন্দাদের মুখ্য চিন্তা। তাদের জীবনযাপনে নেই কোনো আধুনিকতার ছোঁয়া। পথে পথে পর্যটকদের দেখে চোখে-মুখে তৃপ্তির ভাষা ফুটে ওঠে। আর এখানকার ছোট ছোট শিশু হাত নেড়ে অভিবাদন জানায় পর্যটকদের। তাদের এই অভিবাদন জানানোর পেছনে ক্ষুদ্র কিছু প্রত্যাশা কাজ করে; আর তা হলো পর্যটকদের কাছ থেকে চকলেট-চিপসের মতো সামান্য উপহার পাওয়া। পর্যটকরাও তাদের হতাশ করেন না। পর্যটকদের উপহার পেয়ে তাদের খুশির যেন সীমা ধরে না। এভাবে পথের অ্যাডভেঞ্চার শেষ করে দুপুরে পৌঁছালাম সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাজেকে।
রোমাঞ্চকর রিসোর্ট
চান্দের গাড়ি থেকে নেমে সোজা চলে গেলাম আগে থেকে ঠিক করে রাখা সাজেকের সবচেয়ে নান্দনিক নাস্রাং রিসোর্টে। মোটামুটি আধুনিক সব সুযোগই রাখা হয়েছে এসব রিসোর্টে। রিসোর্টগুলো এমনভাবে বানানো যেখান থেকে উপভোগ করা যায় পুরো পাহাড়ের সৌন্দর্য। দুচোখ যতদূর যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। রিসোর্টের ঠান্ডা পানিতে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম দুপুরের খাবার খেতে। অবশ্য সাজেকে খাবার গ্রহণের ঘণ্টাখানেক আগে হোটেলে বলে রাখা ভালো, কারণ হোটেলগুলোয় বাড়তি খাবার করা হয় না। তবে আগে থেকে বলে আমাদের খাবার চুক্তি করা থাকায় কোনো অসুবিধা হয়নি। দুপুরের খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে নাস্রাং রিসোর্টে পাহাড়ের চূড়ায় মনোমুগ্ধকর গ্রামীণ হাঁড়িভাঙা ও ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ মিনিট পায়ে হাঁটার পথে সর্বোচ্চ কংলাকের চূড়ায় সবাই আরোহণ করলাম। চূড়ায় ওঠার সঙ্গী হিসেবে ১০ টাকায় ভাড়া করা বাঁশের লাঠি নেওয়া হয়েছে। সেখানে টক, ঝাল ও মিষ্টি চা উপভোগ করি এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা করি। এরপর সূর্যাস্ত দেখার জন্য সাজেক হ্যালিপ্যাডে যাই। সেখানে সূর্যাস্ত উপভোগ করি; বিন্নি ধানের চালের মালপোয়া, জিলাপি, বাঁশের পেঁয়াজু, পেঁপে, বাঁশের চোঙায় চা উপভোগ করি। তারপর সন্ধ্যা নেমে এলে সবাই রিসোর্টে ফিরে আসি। নাস্রাং রিসোর্টে পাহাড়ের চূড়ায় আমাদের আলোচনা, রেফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষে রাতের খাবার গ্রহণের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের প্রথম দিনের কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটে।
দ্বিতীয় দিন : মেঘের চাদরে মোড়ানো সাজেকের সকাল
সাজেকে যারা যাবেন, কখনোই ভোর মিস করবেন না। সাজেকের ভোর-সকালের সঙ্গে কোনোকিছুরই তুলনা চলে না। মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম ভোর সাড়ে ৫টায়। তবে পাহাড়ের ডাকে ঘুম ভাঙে তার আগেই। পাহাড় তার সৌন্দর্য দেখার জন্যই হয়তো কানে কানে বলে যায়—‘ওঠো হে পথিক, দেখো আমাকে।’ ঘুম-ঘুম চোখে দরজা খুলতেই হিমশীতল একরাশ বাতাস এসে ছুঁয়ে যায় শরীর, স্নিগ্ধ করে মন। বাইরে কুয়াশার চাদরে পাহাড়ের যেন নিজেকে লুকানোর চেষ্টা। কিন্তু পাহাড় পারে না তার সৌন্দর্য লুকাতে। কুয়াশা ভেদ করে চোখ খুঁজে নেয় তার সৌন্দর্য। সূর্যিমামার অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। চারদিকে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। সূর্যিমামা উঠে পড়ল। তার রক্তিম আলো পাহাড়ের গায়ে পড়তেই আড়মোড়া ভাঙে সবুজ পাহাড়, হেসে ওঠে সূর্যের সঙ্গে। নাস্রাং রিসোর্টে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সূর্যোদয় দেখতে দেখতে সেখানে কিছু ছবি তুলি। তারপর অনেকে মিলে মেঘের সঙ্গে মিতালি করতে করতে সাজেক হ্যালিপ্যাডের দিকে যাই। সেখানে গিয়ে মেঘ উপভোগ করতে করতেই হঠাৎ সাজেক ভ্যালিতে বৃষ্টি নেমে এলো। বৃষ্টি আর মেঘের অপরূপ প্রকৃতির ছোঁয়ায় সবাই এক অন্যরকম পরিবেশে হারিয়ে যাই। বৃষ্টি থামলে আমরা রিসোর্টে চলে আসি। সকালের নাস্তা সেরে সাজেককে বিদায় জানাই।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, শাকসু বানচালের চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থীরা এটা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। যদি আগামী সোমবার ভিসি এসে নির্বাচন কমিশন গঠন করে রোডম্যাপ ঘোষণা না করেন, তাহলে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের...
৫ ঘণ্টা আগেসংগঠনের তথ্য, উপহার প্রদান, অনুভূতি বক্স এবং মেহেদি দেওয়ার জন্য উৎসবের ছাউনিতে চারটি আলাদা বুথ। সেখানে ছিল নারী শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আয়োজকরা নতুন সদস্য আহ্বান ও প্রচারপত্র বিলি করেন। ফটকের সামনে একটি ব্যানারে লেখা, ‛প্রিয় ভাইয়েরা, ভেতরে প্রবেশ ও উঁকি মারা থেকে বিরত থাকুন।’
৫ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
৬ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
৭ ঘণ্টা আগে