কৃষিতে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন বগুড়ার সারিয়াকান্দির ১১৭ যমুনা চরের নারীরা। কৃষির উন্নয়নে তারা কাজ করছেন । যমুনার তপ্ত বালু ও উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে কাজ করে ফসল ফলাচ্ছেন। তারা সেখানে সকালের রোদে মরিচ তুলছেন।
সারিয়াকান্দির যমুনা অধ্যুষিত চরাঞ্চলগুলোয় এখন এমন দৃশ্য নিত্যদিনের। এ উপজেলার ১১৭ চরের নারীরা এখন পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কৃষিতে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন। তাদের শ্রমেই মূলত সচল রয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা, পরিবারে ফিরছে সচ্ছলতা।
উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সারিয়াকান্দির ১২টির মধ্যে ছয়টি ইউনিয়ন মূলত যমুনা নদীবেষ্টিত। এসব দুর্গম চরের প্রধান জীবিকা কৃষি। আগে এসব এলাকায় কেবল পুরুষরাই মাঠে কাজ করতেন কিন্তু গত কয়েক বছরে সে চিত্র বদলে গেছে। এখন বীজতলা তৈরি ও নিড়ানি দেওয়া থেকে শুরু করে ফসল তোলা এবং কাটা-মাড়াইয়ের কাজেও নারীরা সমানভাবে অংশ নিচ্ছেন।
কাজলা ইউনিয়নের ময়ূরেরচর গ্রামে দেখা যায়, মরিচের ক্ষেত থেকে মরিচ তুলছেন লক্ষ্মী রানী, হেলেনা বেগম ও জুলেখারা। আলাপকালে তারা জানান, সংসারের রান্নাবান্না ও আনুষঙ্গিক কাজ সেরে তারা দলবেঁধে মাঠে ছোটেন। দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে যা আয় হয়, তা দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ ও সংসারের বাড়তি চাহিদা মেটান তারা।
তবে এ সফলতার গল্পের আড়ালে রয়েছে বঞ্চনার দীর্ঘশ্বাস। শাহিদা আক্তার ও জুলেখা খাতুন নামে দুই নারী শ্রমিক আক্ষেপ করে বলেন, আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরুষের সমান পরিশ্রম করি কিন্তু পারিশ্রমিকের বেলায় পাই অর্ধেকেরও কম। পুরুষরা যেখানে ৫০০-৬০০ টাকা মজুরি পান, সেখানে আমাদের দেওয়া হয় মাত্র ২০০ থেকে ২৬০ টাকা।
স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অ্যাডভোকেসি সভার মাধ্যমে নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছে। তবে মাঠপর্যায়ে মজুরি বৈষম্য দূর না হওয়ায় নারীদের প্রকৃত অবদান অনেক ক্ষেত্রে মূল্যায়িত হচ্ছে না। সচেতন মহলের মতে, ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা গেলে চরাঞ্চলের নারীরা দেশের কৃষি উৎপাদনে আরো বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, নারীরা কৃষিকাজে অত্যন্ত যত্নশীল। বিশেষ করে ধান কাটা-মাড়াই থেকে শুরু করে মরিচ, পেঁয়াজ ও সবজি চাষে তাদের নিপুণতা প্রত্যক্ষ করার মতো। চরের অভাবী সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর কারিগর এই লড়াকু নারীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা গেলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে।