হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

বিএনপি-জামায়াতে নতুন মুখের ছড়াছড়ি, হেফাজতও ফ্যাক্টর

উত্তর চট্টগ্রামের সাত আসন

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম

ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তর চট্টগ্রামের সাতটি আসনে নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। গত ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের পর নেতাদের পালিয়ে যাওয়ার পর রাজনীতিতে একরকম অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। এখন সে স্থান দখল করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। সাতটি সংসদীয় আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই বিএনপি নতুন প্রার্থী দিয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত সব প্রার্থীই নতুন মুখ।

আওয়ামী লীগ আমলের বিতর্কিত ভোটের হিসাব বাদ দিলে ২০০৮ সালের আগের সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় দুই দশক আগে উত্তর চট্টগ্রামের প্রতিটি আসনেই বিএনপির শক্ত ঘাঁটি ছিল। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেই চিরচেনা ভোটের সমীকরণে বড় রদবদল ঘটেছে। প্রায় প্রতিটি আসনেই শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান গড়ে তুলেছে জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের পলায়নের সঙ্গে সঙ্গেই জামায়াত দ্রুত চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নামার যে সিদ্ধান্ত নেয়, তার সুফল তারা স্পষ্টভাবে পাচ্ছে। প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রস্তুতি অনেকটাই সম্পন্ন, দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয় থাকায় ভোটারদের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন তারা।

এর বিপরীতে বিএনপির ক্ষেত্রে মাঠে জনশক্তি থাকলেও তা অনেক জায়গায় বিভক্ত। টানা ১৬ বছর কার্যকরভাবে নির্বাচনের বাইরে থাকায় প্রতিটি আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী সক্রিয় হয়ে ওঠে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার প্রায় এক মাস পেরোলেও বেশ কয়েকটি আসনে অভ্যন্তরীণ বিরোধ এখনো মেটেনি। কোথাও কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও এসেছে। এছাড়া ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের ভোট কোন দিকে যাবে—সে হিসাবও নির্বাচনের ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই)

ঐতিহাসিকভাবে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি মিরসরাই। একসময় এখানে নির্বাচন করতেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালে অল্প ভোটে বিএনপি প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী পরাজিত হন আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কাছে।

এবার বিএনপির প্রার্থী নুরুল আমিন চেয়ারম্যান ও জামায়াতে ইসলামী থেকে সাইফুর রহমান। আওয়ামী লীগ না থাকায় বিএনপি-জামায়াতের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। মাঠের সংগঠন ও প্রচারে জামায়াত এগিয়ে আছে বলে জানান স্থানীয়রা। বিএনপিতে প্রার্থী চূড়ান্তে বিলম্ব ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে গতি কম। ইসলামী আন্দোলনের ফেরদৌস আহমদ চৌধুরী ও খেলাফত মজলিসের মাওলানা জাফরুল্লাহ নিজামীও মাঠে রয়েছেন।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি)

শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন অন্তত ছয় নেতা। তবে মূলত তিনজন মনোনয়ন পেতে জোর প্রচার চালান। এর মধ্যে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন সারোয়ার আলমগীর। তবে মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আজিম উল্লাহ বাহারের অনুসারীরা আন্দোলনে থাকায় বিএনপি বিভক্ত। বিপরীতে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ নুরুল আমিন দীর্ঘদিন ধরে সংগঠিত প্রচার চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের আমলে অসংখ্য বার জেলজুলুমের শিকার হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

এছাড়া সুন্নি জোট থেকে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী ও নেজামে ইসলামী পার্টি থেকে শেখ শাহজাহান প্রার্থী হয়েছেন। দুই লাখ ৮৩ হাজার ৩৯০ জন ভোটারের সংখ্যালঘু ভোট (হিন্দু ১১%, বৌদ্ধ ৪%) ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ)

নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে নির্বাচনি ডামাডোল বলতে শুরু হয়েছে। বিএনপির অন্তত পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর বিপরীতে শুরু থেকেই বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে জামায়াতে ইসলামী। তবে জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ মোস্তফা কামাল পাশা। তবে বয়সজনিত কারণে তার সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

জামায়াতের প্রার্থী আলাউদ্দিন শিকদার এক বছর ধরে মাঠে সক্রিয় থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। ইসলামী আন্দোলনের তরুণ প্রার্থী আমজাদ হোসাইন মানবিক কার্যক্রমে এলাকায় আগে থেকেই জনপ্রিয়। এনসিপির এহসানুল মাহবুব জুবায়েরও প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রবীণ অভিজ্ঞতা, নতুন মুখ এবং তরুণ উদীয়মান নেতৃত্বÑএ ত্রিমুখী প্রতিযোগিতায় সন্দ্বীপের রাজনৈতিক মাঠ এখন বেশ উত্তপ্ত।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড)

বিএনপির প্রার্থী কাজী সালাহ উদ্দিনকে কেন্দ্র করে লায়ন আসলাম চৌধুরীর সমর্থকদের বিক্ষোভে দল বিভক্ত। যদিও ক্লিন ইমেজের কারণে কাজী সালাহ উদ্দিনের ভোটার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিএনপির এ বিভক্তির মধ্যে ঐক্যবদ্ধ প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর তরুণ প্রার্থী আনোয়ার ছিদ্দিক চৌধুরী। বিএনপির তুলনায় প্রচারে অনেক এগিয়ে আছে ভোটের মাঠে নতুন এ প্রার্থী। ভোটের আগে বিএনপি যদি অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে না পারে, তবে অনেকটা নির্ভার থাকবে জামায়াতে ইসলামী।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী)

১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জয় পেয়েছে। এ কারণে আগে জামায়াতে ইসলামীর খুব একটা প্রভাব না থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। শুরু থেকে বিএনপির তিনজন শক্ত প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন বাগিয়ে নেন বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন। মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরা আলাদা অবস্থানে থাকায় দলীয় ঐক্য দুর্বল। নির্বাচনি প্রক্রিয়ার শুরুতে উপজেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলামকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে। শুরু থেকে তিনি প্রচার চালালেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে তাকে সরিয়ে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল মালেক চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করে। এরপর থেকে তিনি হাটহাজারী সংসদীয় আসনে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনিরও মাঠে আছেন। তবে হাটহাজারী মাদরাসাকেন্দ্রিক হেফাজতে ইসলামের ভোট ব্যাংকই ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করছেন ভোটাররা।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান)

জুলাই বিপ্লবের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খুনের জনপদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে রাউজান। বিবদমান দুপক্ষের বিরোধে এখন পর্যন্ত শুধু এ উপজেলায় নিহত হয়েছে অন্তত ১৭ জন। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রথম পর্যায়ে এ আসনে প্রার্থী ঘোষণাও স্থগিত রাখে কেন্দ্র। তবে শেষ পর্যন্ত গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীকেই বেছে নেওয়া হয় ধানের শীষের কান্ডারি হিসেবে। রাউজান বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আওয়ামী লীগ সরকার তাকে হত্যা করায় তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতি আছে রাউজানের মানুষের। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ নিষ্ক্রিয় থাকায় প্রভাব পড়তে পারে। এদিকে গত এক বছর ধরে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী শাহজাহান মঞ্জু। প্রতিটি এলাকায় উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এছাড়া এই আসন থেকে এনসিপির পক্ষ থেকে মহিউদ্দিন জিলানীকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনিও নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন।

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া)

রাউজানে জন্মস্থান হলেও মূলত রাঙ্গুনিয়া থেকেই নির্বাচন করতেন বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শেখ হাসিনার বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই আসনে তিনি অপরাজিত সংসদ সদস্য ছিলেন। এবার এই আসনে ধানের শীষের কান্ডারি তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। শুরুতে আরো তিন-চারজন মনোনয়ন পেতে লবিং করলেও এখন বিভেদ ভুলে হুম্মামের নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিচ্ছেন প্রায় সব নেতা। অন্যদিকে জামায়াতের প্রার্থী ডা. রেজাউল করিম স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রিক ব্যতিক্রমী প্রচার চালাচ্ছেন। ইসলামী ফ্রন্টের ইকবাল হোসেনও আছেন নির্বাচনের মাঠে। তবে মূল লড়াই হবে হুম্মাম ও রেজাউলের মধ্যে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন-মিরসরাই প্রতিনিধি নুরুল আলম, সীতাকুণ্ডের জহিরুল ইসলাম, সন্দ্বীপের শামসুল আজম মুন্না, ফটিকছড়ির একলাছ ঝিনুক, রাউজানের আরাফাত হোসাইন, হাটহাজারীর খোরশেদ আলম শিমুল ও রাঙ্গুনিয়ার নুরুল আবছার চৌধুরী]

ওসমান হাদি হত্যার প্র‌তিবা‌দে ঝিনাইদহে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে হাদির খুনিদের ফিরিয়ে দিন

এনসিপি জান্নাত আরা রুমীর দাফন সম্পন্ন

ওসমান হাদির মৃত্যুতে সারা দেশে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

হাদি হত্যার প্রতিবাদে ভারতীয় অ্যাম্বাসির সামনে বিক্ষোভ, নওফেলের বাসায় আগুন

নোয়াখালীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৭

পুলিশ হেফাজতে ছাত্রলীগ নেতার সেলফি, দুই পুলিশ সদস্য ক্লোজড

ওসমান হাদির মৃত্যুতে পাটগ্রামে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল

ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদে নবাবগঞ্জে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ

ওসমান হাদির মৃত্যুতে পাটগ্রামে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল