বাম্পার ফলনেও হতাশ কৃষক
কুমিল্লার গোমতী নদীর পাড়ে এ বছর আগাম আলুচাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠজুড়ে আলুর সবুজগাছ আর পরিপাটি ফলন দেখে হাসি ফুটলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ার শঙ্কায় সেই হাসি এখন চাপা দুশ্চিন্তায় রূপ নিয়েছে কৃষকের মনে। উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম না থাকায় হতাশ গোমতী পাড়ের আলুচাষিরা।
বীজের চড়া দাম, সার ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আলু উৎপাদনে খরচ বেড়ে গেছে বলে জানান কৃষকরা। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা ও বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছেন তারা।
গতকাল শনিবার বিকালে সরেজমিন গোমতী পাড়ের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশ একর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। প্রতিটি জমিতেই ফলন ভালো, আলুর আকার ও মান সন্তোষজনক।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কুমিল্লা জেলায় মোট আট হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৮০০ হেক্টর কম। এর মধ্যে দাউদকান্দি উপজেলায় সর্বাধিক তিন হাজার ৯৯৮ হেক্টর, দেবীদ্বারে দুই হাজার এবং বুড়িচং উপজেলায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, আলু চাষের জন্য গোমতী পাড়ের জমিই কৃষকের প্রথম পছন্দ। কুমিল্লার চাহিদা মিটিয়ে এই আলু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলা ও জেলার বাইরের পাইকাররা এসে বড় পরিসরে আলু সংগ্রহ করছেন।
আদর্শ সদর উপজেলার গোমতীর চরে প্রায় ৪০০ শতক জমিতে আলু চাষ করা কৃষক রুবেল মিয়া বলেন, আমি ও আমার ভাইয়েরা মিলে চার একরের বেশি জমিতে আলু চাষ করেছি। ফলন ভালো হলেও যে দাম পাচ্ছি, তাতে খরচ উঠবে কি না সন্দেহ। দাম একটু বেশি পেলে আলু চাষে আরো আগ্রহ বাড়ত।
আলু কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম জানান, জমি থেকে প্রতি কেজি আলু ১৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে। পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক খরচ কেজিতে আরো দুই-তিন টাকা যোগ হয়। বিক্রি না হইলে পচে যায়। তাই বাজারে ২৫-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হয়।
গোমতী নদীর চরের ৮০ শতক জমিতে আলু চাষ করা কৃষক সারোয়ার হোসেন আমার দেশকে বলেন, ফলন ভালো হলেও দাম ভালো পাচ্ছি না। গত বছর এ সময়ে ৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করেছি, এবার পাচ্ছি মাত্র ১৮ টাকা। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চরে গোমতী চরে আলু চাষ কমে গেছে।
বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিনা আক্তার আমার দেশকে বলেন, গোমতীর পাড়ে আলুর ফলন ভালো হয়। দাম নিয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। বাজারে নতুন আলু আসার পর তা বলা যাবে। এ বছর বুড়িচং উপজেলায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান আমার দেশকে জানান, গত বছর ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চলতি মৌসুমে আলু চাষ কিছুটা কমেছে। তবে আগের মজুত থাকায় জেলায় আলুর ঘাটতির সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে কৃষকরা জমি থেকে পাইকারি বিক্রি করে প্রতি কেজি আলুতে পাচ্ছেন ১৮ টাকা। যাতায়াত খরচ ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে।