হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

চসিকের উদ্যোগে ১৫ ভবন ভাঙার পরিকল্পনা, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

এম কে মনির, চট্টগ্রাম

ব্যক্তিস্বার্থে সরকারি অর্থ খরচ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) সংশ্লিষ্ট একটি চক্র। অথচ একই জায়গায় একই ধরনের প্রকল্প কয়েক বছর আগেই বাস্তবায়ন করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। অভিযোগ উঠেছে, চকবাজার এলাকায় শিল্পপতি আব্দুর রশিদের প্রস্তাবিত শপিংমলের সামনের জায়গা উন্মুক্ত করতে প্রকল্পের নামে অন্তত ১৫টি বহুতল ভবন ভাঙার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে সরকারি খরচ হবে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, চকবাজারের লালচান্দ রোড, কলেজ রোড, কাপাসগোলা রোডের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য মার্কেট। এর মধ্যে কলেজ রোড হয়ে লালচান্দ রোডের দিকে টার্ন নেওয়া মার্কেটগুলো ‘এল’ আকৃতির ভবন। বহুতল ভবনের নিচে মার্কেট ও ওপরে আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। ভবনগুলোর পেছনে বড় একটি বিরোধপূর্ণ খালি জমি রয়েছে। এর এক পাশে শিব মন্দিরের অবস্থান। স্থানীয়রা দাবি করেন, জমিটি মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি। তবে কর্ণফুলী গ্রুপের মালিক আব্দুর রশিদ খালি জমিটি কিনে নিয়েছেন বলে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন। উচ্চ আদালত জমিটি দেবোত্তর সম্পত্তি বলে রায় দিলেও জমিটি দখলে রেখেছেন আব্দুর রশিদ। সেখানে তিনি বহুতল শপিংমল নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বহুদিন ধরে। কিন্তু এর সামনের জমি ব্যক্তিগত হওয়ায় তিনি তা বাস্তবে রূপ দিতে পারছেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকালে ‘কাপাসগোলা-লালচান্দ রোড সম্প্রসারণ ও কলেজ রোড পার্কিং এরিয়া’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে চসিক। উদ্দেশ্য ছিল আব্দুর রশিদের জমির সামনের ভবনগুলো ভেঙে উন্মুক্ত করে দেওয়া। যে কোনো সড়ক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে রাস্তার দুই পাশ থেকে সমানভাবে জমি অধিগ্রহণের কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শুধু এক পাশে সড়ক সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে শপিংমল তৈরি করা হচ্ছে বলে প্রচার করলেও সেখানে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে প্রকল্প চূড়ান্ত করলেও বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি মহিউদ্দিন চৌধুরী। পরবর্তী মেয়র মঞ্জুর আলম এসে এলাকা পরিদর্শন শেষে ১৫টি ভবন ভেঙে ৬০টি গাড়ি পার্কিংয়ের পরিকল্পনা অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করে প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেখানকারই একটি চক্র প্রকল্পটি খাতা-কলমে বাতিল না করে লুকিয়ে রাখে।

এরপরও একই এলাকার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ‘কাপাসগোলা রোড সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সিডিএর মাধ্যমে কলেজ রোডে পার্কিং এরিয়া তৈরি করা হয় এবং একই এলাকায় সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবিত প্রকল্পের অনেকাংশ বাস্তবায়ন করা হয়।

মঞ্জুর আলমের পর আ.জ.ম. নাসির উদ্দিন, খোরশেদ আলম সুজন, এম রেজাউল করিম মেয়র ও প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিবারই প্রকল্পটি সামনে এনে বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু করে চক্রটি। আবার স্থানীয়রাও মেয়র বা প্রশাসকের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে প্রকল্প বাতিল করে প্রতিবার। এখন আবার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এতে নতুন করে দ্বিতীয় দফায় আবারও ভাঙতে হবে অন্তত ১৫টি বহুতল ভবন। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, চসিক কর্মকর্তারা পার্কিং সুবিধা ও যানজট নিরসনের নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে তৎপর হয়েছেন। তবে প্রকল্পটি মূলত শিল্পপতি আব্দুর রশিদের নতুন শপিংমল প্রকল্পের সুবিধার্থে প্রণয়ন করা হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা বলছেন, মাত্র ৬০টি গাড়ির পার্কিংয়ের জন্য ১৫টি বহুতল ভবন ভাঙা সংগতিপূর্ণ নয় এবং এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী সৈয়দ আবু মোহাম্মদ মামুন বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চসিকের কিছুটা পার্কিং সুবিধা তৈরি হবে; কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে আব্দুর রশিদ নতুন মার্কেট গড়ে তুলতে পারবেন। মূলত জমিটি দেবোত্তর সম্পত্তি হওয়ায় আইনগতভাবে এখানে কোনো অধিগ্রহণ বা লেনদেন করা যাবে না।

নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ২০১০ সালে ‘সড়ক সম্প্রসারণ ও পার্কিং প্রকল্প’ গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে আ.জ.ম. নাছির, মঞ্জুর আলম ও রেজাউল করিম প্রকল্পটি জনস্বার্থহীন ও ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত উল্লেখ করে বাতিল করেন। ২০১৩ সালে চসিকের ৪২তম বোর্ড সভায় প্রকল্পটি বাতিলের একটি চিঠিও আমার দেশ-এর হাতে এসেছে। এসব ঘটনার এত বছর পর আবারও সেই প্রকল্পে হাত দিয়েছে চসিক। এতে ফের বিতর্কের মুখে পড়েছে সংস্থাটি। ভুক্তভোগীরা বর্তমান মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের কাছেও প্রকল্পটি বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন।

এর আগে ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের আদালতে ভুক্তভোগীরা চসিককে বিবাদী করে মামলা করলে সংস্থাটি লিখিত জবাব দেয়। চসিকের লিখিত সেই জবাবে বলা হয়, সিডিএ রোড পার্কিং নির্মাণ করায় স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ হুকুম দখল অধ্যাদেশ, ১৯৮২-এর ২ নম্বর অধ্যাদেশের আওতায় এলএ মামলা নম্বর ২০/২০০৯-১০ মূলে ৬ ধারার নোটিস ইস্যু করার কোনো কারণ ও আবশ্যকতা নেই। চসিকের জবাবেই প্রকল্পটি বিতর্কের মুখে পড়ে।

সুপ্রিম কোর্টের রায় উপেক্ষা

আদালত সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে প্রস্তাবিত এলাকার একটি বড় অংশকে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। রায়ে বলা হয়, ১৯২০ সালের একটি রেজিস্ট্রিকৃত বিক্রয় দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তিটি চার বিগ্রহের (দেবতা) নামে হস্তান্তর করা হয়েছিল। আদালত বলে, দেবতার পক্ষে তার সেবায়েত হরলাল রায় মূল্য পরিশোধ করেছিলেন এবং এর মাধ্যমে দেবতারাই এ সম্পত্তির নিরঙ্কুশ মালিক হয়েছেন। আদালত এই সম্পত্তিকে বেনামি বা লোক দেখানো লেনদেন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে। এছাড়া আদালত একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়, যাতে জেলা প্রশাসক, মেয়র ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা থাকবেন। তবে আজও ওই কমিটি গঠিত হয়নি।

চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন জানিয়েছেন, চলমান মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে এবং অবকাঠামোর মালিকরা নিজ উদ্যোগে স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। তাই এখন অবকাঠামোর মূল্য বাদ দিয়ে বাকি টাকা পরিশোধের জন্য নতুন করে প্রাক্কলিত অর্থের পরিমাণ জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

তবে গত মঙ্গলবার আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে আশরাফুল আমিনের কার্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি প্রকল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানেন না উল্লেখ করে মেয়রের একান্ত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। একান্ত সচিব জিল্লুর রহমান এ প্রতিনিধিকে বসিয়ে রেখে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে জানান, যৌথ উদ্যোগে মার্কেট নির্মাণের কোনো উদ্যোগ সিটি করপোরেশনের নেই। প্রকল্পের বিস্তারিত কোনো তথ্য তার কাছেও নেই।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্রুপের কর্ণধার প্রকৌশলী আবদুর রশিদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করলে দুবার ফোন রিসিভ করেও তিনি কোনো কথা বলেননি। পরে এসএমএস করে বক্তব্য জানতে চাইলেও তিনি সাড়া দেননি।

খালে মিললো স্ত্রীর লাশ, পলাতক স্বামী

টানেল মসজিদের সৌন্দর্যে বিমোহিত মুসল্লি

রাঙ্গুনিয়ায় শ্রমিকদল নেতাকে গুলি করে হত্যা

ধানের শীষের প্রার্থীকে রেখে নেতাকর্মীরাই খেয়ে ফেললেন সব খাবার

আমার দেশ সংবাদের জেরে মডেল মসজিদ তদন্তে প্রকল্প পরিচালক

মিয়ানমারে পাচারকালে খাদ্য ও নির্মাণ সামগ্রীসহ ২২ পাচারকারি আটক

চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাই গড়ে তুলবে দক্ষ প্রজন্ম: মিলন

৫৩ বছরে ক্ষমতা প্রেমিক দেখেছি, দেশ প্রেমিক দেখিনি

তরুণেরা বাংলাদেশকে নেতৃত্বে দেবে: চাকসু ভিপি

ফেনীতে সড়ক অবরোধ ও রেললাইনে গাছ ফেলে নাশকতার চেষ্টা