বাঁশখালীর জেলেপল্লিগুলোয় এখন শুঁটকি শুকানোর ধুম পড়েছে। ছয়-সাত হাজার শ্রমিক মাছ শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শুঁটকি বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ার কারণে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় পাওয়া যাচ্ছে বাঁশখালীর সুস্বাদু এসব শুঁটকি। উপকূলের বিভিন্ন স্থানের সৈকতজুড়ে রয়েছে অসংখ্য শুঁটকিপল্লি।
বাঁশখালীর শুঁটকির মধ্যে লইট্যা, ছুরি, রূপচাঁদা, ফাইস্যা, মাইট্যা, কোরাল, রইস্যা, পোয়া ও চিংড়ি শুঁটকি অন্যতম। এসব শুঁটকি এখন রপ্তানি হচ্ছে দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে। শুঁটকি রপ্তানি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও চকবাজারের বড় বড় গুদামের মালিকেরা। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্বও।
বর্ষা শেষ না হতেই বাঁশখালীর সাগরপারের বিভিন্ন এলাকায় শুঁটকি শুকানোর ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে শুঁটকি শুকানোর কাজ। তাই এখানকার জেলেপল্লিগুলো কর্মব্যস্ততায় মুখর হয়ে উঠেছে।
কতিপয় জেলে ইউরিয়া সার, লবণ ও বিষাক্ত পাউডার মিশিয়ে কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওইসব শুঁটকি খেতেও তেমন সুস্বাদু নয়। বাঁশখালীতে শুঁটকি শুকানোর সময় এসব বিষাক্ত পাউডার মেশানো হয় না, তারা রোদের তাপে মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন। ফলে এসব শুঁটকির আলাদা কদর রয়েছে। তাই বাঁশখালীর শুঁটকি খুবই সুস্বাদু ও জনপ্রিয়।
বাঁশখালীর শুঁটকি কিনতে চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও চকবাজারের গুদাম মালিকেরা দলে দলে হাজির হচ্ছেন এবং অনেকেই জেলেদের অগ্রিম টাকা দিয়ে যাচ্ছেন।
সাগর থেকে জেলেদের আহরণ করা মাছ আধুনিক পদ্ধতিতে শুকানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর সাগর উপকূলে লাখ লাখ টাকার মাছ নষ্ট হয়। প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকি। এর মধ্যে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্ট্যা ও পোয়া অন্যতম। বাঁশের মাচায় রেখে তা শুকানো হয়। বর্ষার কয়েক মাস ছাড়া বছরের বাকি সময়ে মোটামুটি হলেও সবচেয়ে বেশি শুঁটকি তৈরি হয় শীতে। আর এ শুঁটকি মহালে কাজ করে জীবিকা চালান হাজারো শ্রমিক। কেউ কেউ সাগর থেকে আনা মাছ শুকাচ্ছেন, কেউ শুকানো মাছ কুড়াচ্ছেন।
আর কেউ শুকানো মাছ বাছাই করছেন। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী ও শিশু শ্রমিককে এসব কাজ করতে দেখা গেছে। শীলকূপের জালিয়াখালীর জনৈক মুনসি মিয়া বললেন, ‘দৈনিক পাঁচ-ছয়শ টাকা মজুরিতে কাজ করছি। এই টাকায় অনেক কষ্টের মধ্যে সংসার চালাই।’ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মাছ ব্যবসায়ী আসেন এই মৌসুমে বাঁশখালীতে। তাদের একজন চট্টগ্রাম শহরের রবি উল আলম বলেন, আমি আট-দশ বছর ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় শুঁটকির ব্যবসা করে আসছি। প্রতিবছর এই মৌসুমে কুতুবদিয়ায় ও বাঁশখালীতে এসে শুঁটকি কিনে তা চট্টগ্রামের চাক্তাইসহ বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি দামে বিক্রি করি। প্রতি বছর এ ব্যবসায় মজুরি ও খরচ বাদ দিয়ে তিন-চার লাখ টাকা লাভ হয়।
বাঁশখালীর ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ আবদু শুক্কুর বলেন, এখানে শুকনো শুঁটকি চট্টগ্রাম নগরের চাক্তাই পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হয়। জালিয়াখালী নতুন বাজার এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. আব্দুল গফুর, আলী আহমদ ও ছৈয়দ নূর বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতে শুঁটকি শুকানো হয়ে থাকে, তারই ধারাবাহিকতায় তা শুরু হয়েছে। দীর্ঘ সময় সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ধীরে ধীরে মাছ আসতে শুরু করেছে। তা আরো বেগবান হতে কিছুদিন সময় লাগবে।