হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

‘কিলার বেনজীরের’ ক্যাশিয়ার জসিম-ই এখন বিএনপির কান্ডারি

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম

আওয়ামী লীগ আমলের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ‘ঘনিষ্ঠ ও ক্যাশিয়ার’ হিসেবে বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন আহমেদকে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া আংশিক) আসনে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। দলের ভেতরেও চলছে ক্ষোভ–অসন্তোষ।

রোববার মনোনয়ন পাওয়ার পর আজ সোমবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জসিম উদ্দিন।

দলীয় সূত্র বলছে, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের নির্ধারিত সময়ের প্রায় শেষ মুহূর্তে এসে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে জসিমকে প্রার্থী করা হয়। দক্ষিণ জেলা বিএনপির কোনো মতামত নেওয়া হয়নি বলে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন অনেক নেতা। জসিম উদ্দিনের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং সাবেক দুই আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও শহিদুল হকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে স্থানীয়দের দাবি। প্রার্থী ঘোষণার পর ফেসবুকে সেসব যৌথ ছবি, বৈঠক ও অনানুষ্ঠানিক সমাগমের দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে।

২০২৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। যে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে জসিমের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবর্ষণ নিয়ে দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও ছিলেন তিনি।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া আমার দেশকে বলেন, প্রথম কথা হলো দল (বিএনপি) আমাদের থেকে কোনো মতামত নেয়নি। মতামত না নিয়ে তারা প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দল হয়তো মনে করেছে, এই আসনে কর্নেল অলিকে হারাতে হলে টাকাওয়ালা ব্যক্তি দরকার। সেজন্য জসিমকে মনোনয়ন দিয়েছে। জসিম ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি। তিনি কিন্তু আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিল না। বিএনপিরও কোনো পদে ছিল না।

তিনি বলেন, আপনি সারাদেশে দেখেবেন, বিএনপি অনেক অন্যদলের লোকদের নমিনেশন দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় জসিমকেও নমিনেশন দিয়েছে। এখন দলের সিদ্ধান্তই বড় সিদ্ধান্ত । জসিমের পক্ষে আমরা প্রচারণায় নামবো।

কে এই জসিম?

চন্দনাইশ–সাতকানিয়া এলাকায় জসিম উদ্দিন মূলত দীর্ঘদিন ধরে একজন ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত। তবে তার অস্বাভাবিক দ্রুত উত্থান নিয়ে স্থানীয়ভাবে বহু প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে। কক্সবাজারে রামাদা কক্সবাজার হোটেল, দুবাইয়ে রামাদা দুবাই, চট্টগ্রাম নগরে মহল মার্কেট এবং খুলশীতে জসিম হিল পার্কসহ বেশ কয়েকটি বড় বাণিজ্যিক স্থাপনার মালিকানা তাকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। মূলত সাবেক দুই আইজিপির ক্যাশিয়ার হয়ে এই বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগ।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটির শীর্ষ স্থানীয় একনেতা সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, জসিম মূলত আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং সাবেক দুই আইজিপির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তার ভাষায়, উপজেলা নির্বাচনে জসিমের পাশে আওয়ামী লীগের নেতারা ভোট চেয়েছিলেন, আর আজ তাকে বিএনপির প্রার্থী বানানো হলো-এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া অসম্ভব।

তিনি আরও দাবি করেন, কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পর কোনো কমিটি না থাকলেও তারা নির্যাতন–জেল–জুলুম সহ্য করে বিএনপিকে পুনর্গঠন করেছেন। সেই ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে হঠাৎ আবির্ভূত একজন ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন দেওয়া-তাদের প্রতি অবমাননা।

দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক এক নেতা একই সুরে বলেন, বিএনপি বর্জিত অবস্থায় আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে যিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, সেই ব্যক্তিকে বিএনপির প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তারা দুজনই তারেক রহমানের কাছে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জোর দাবি তুলেছেন।

জসিম উদ্দিনকে ঘিরে শুধু রাজনৈতিক অভিযোগই নয়, রয়েছে একাধিক মামলার ভারও। গত বছরের ২০ জুলাই মধ্যবাড্ডার ইউ–লুপের নিচে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবর্ষণের ঘটনায় দুই চোখ হারানো দুর্জয়ের মামলায় তাকে ২১ নম্বর আসামি করা হয়। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯০ জন অভিযুক্ত হিসেবে নাম আসে। এছাড়াও পদ্মা ব্যাংকের ঋণখেলাপি মামলায় তার ও স্ত্রীর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। হাইকোর্টে জাল পে–অর্ডারের কপি জমা দেওয়ার অভিযোগে তার জামিন স্থগিত হয় এবং পরে আদালত তার জামিন বাতিল করেন। এসব ঘটনার কারণে তার চারপাশে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কের মেঘ ঘনিয়ে রয়েছে।

মাঠপর্যায়ে বিএনপির নেতারা মনে করছেন, জসিমের মনোনয়ন দলটির আদর্শিক অবস্থান ও নৈতিক মূল্যবোধে সরাসরি আঘাত করেছে। তাদের ভাষায়, যে দলের শত শত নেতা–কর্মী বেনজীর যুগে গুম–খুনের শিকার হয়েছে, সেই বেনজীরের ক্যাশিয়ারকে প্রার্থী করায় পুরো সংগঠনের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। নেতাদের অভিযোগ, আদর্শ ও ত্যাগের জায়গা দখল করে নিয়েছে অর্থ–নীতি ও প্রভাব–কেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত। এর ফলে তৃণমূলে বার্তা যাচ্ছে-বিএনপিতে ত্যাগ নয়, সম্পদই বড় যোগ্যতা।

অভিযোগের বিষয়ে জসিম উদ্দিন আমার দেশকে বলেন, আমার কোনো দলীয় পরিচয় ছিল না। কোনো পদধারীও ছিলাম না। ব্যবসায়ীর স্বার্থে সবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয়েছে। সেটি নিয়ে যদি কেউ রাজনীতি করেতে চায়, করুক।

জামায়াত জোটের প্রার্থী এবি পার্টির মঞ্জুর মনোনয়নপত্র জমা

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাঁশখালীর ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র

চট্টগ্রাম-৪ আসনে মনোনয়ন জমা দিলেন আসলাম চৌধুরী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি আসনে বিএনপির একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী

ফেনীতে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল

জামায়াত প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন হাসনাত

নির্বাচনে জুলাইয়ের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ: ডা. তাহের

ড. মোশারফ ও তার ছেলের মনোয়নপত্র দাখিল

আল্লাহর পরিকল্পনায় বিএনপির বিপক্ষে নির্বাচন করতে হচ্ছে: রুমিন ফারহানা

ফেনী- ৩ আসনে আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র জমা