দক্ষিণ চট্টগ্রামে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন। এখানে বিএনপি থেকে সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেও অবশেষে ধানের শীষ পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মরহুম জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ছেলে।
দলটি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা হলেন, পাপ্পার আপন ভাই ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, সাবেক ছাত্রনেতা ইফতেখার হোসেন মহসিন, সাবেক ছাত্রদল নেতা জুলাইযোদ্ধা মফিজুর রহমান আশিক, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লেয়াকত আলী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পিপি আশরাফ হোসেন রাজ্জাক, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী।
মনোনয়ন না পাওয়া নেতারা ধানের শীষকে বিজয়ী করতে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
অন্যদিকে, মনোনয়নপ্রত্যাশী আলোচিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ও দু’বার গুমের শিকার নির্যাতিত ছাত্রনেতা মফিজুর রহমান আশিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে মনোনয়ন পাওয়া মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ধানের শীষকে বিজয় করার স্বার্থে তিনি সবার কাছে যাবেন এবং সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করবেন।
এদিকে, বিএনপি ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করলে তাদের পুরোনো ঘাঁটি আবারও পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে এখন পর্যন্ত প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে জামায়াতের একক প্রার্থী। তারা ইতোমধ্যেই নির্বাচনি মাঠ গোছানোর কাজ সম্পন্ন করেছে। কেন্দ্র কমিটি থেকে শুরু করে নির্বাচন মনিটরিং সেল পর্যন্ত গঠন করে রেখেছে। যদি বিএনপির সব মনোনয়ন প্রত্যাশী ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আসনটিতে জামায়াতে ইসলামী চমক দেখাতে পারে বলেও ধারণা বিশ্লেষকদের।
জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম। দল থেকে ইতোমধ্যেই তার মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ধীরে এগুচ্ছে এনসিপি ও অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা । এছাড়া, নেজামে ইসলাম পাটির কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা মুসা বিন ইজহারও নানাভাবে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ ও মাঠ পর্যায়ের তৎপরতা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাদের ছবি সংবলিত পোস্টার ও ব্যানারের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও হাটবাজারের চায়ের দোকানে সরব উপস্থিতির মাধ্যমে নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাঁশখালীতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২ হাজার ৩২১ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫৮১। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ৪ জন।
অন্যদিকে, এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব মীর এরশাদুল হকও এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। তাই আপাতত বিএনপি-জামায়াতকে নিয়েই চলছে যত আলোচনা।
বাঁশখালী আসনে ১৯৭১ সালের পর থেকে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন দলের প্রার্থীরা। ১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহজাহান চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে (বিএনপি ত্যাগ করে) জাতীয় পার্টি থেকে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে অ্যাডভোকেট সুলতানুল কবির চৌধুরী (বর্তমানে প্রয়াত) সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালেও বিএনপির টিকিটে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী জয়ী হন। ২০০৮ সালেও বাঁশখালী-১৬ আসনটি হাতছাড়া হয়নি বিএনপির। তবে ২০১৪-এর একতরফা নির্বাচনে এমপি হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও মোস্তাফিজ এমপি হন। ২০২৪ সালে মোস্তাফিজুর রহমান আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি এমপি নির্বাচিত হন।